মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাকিব কান্ড, জনরোষ এবং আইনের শাসন

সাকিব কান্ড, জনরোষ এবং আইনের শাসন

‘বিচার’ এবং ‘ন্যায়বিচার’ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। বিচারের মাধ্যমে সমাজে কখনো কখনো অন্যায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সময় আদালত Audi Alteram Partem নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি অনুসরণ করে যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘অন্য পক্ষের কথা শ্রবণ করুন’।
অর্থাৎ শুধুমাত্র এক পক্ষের কথা শুনে অপর পক্ষের ওপর দন্ড বা শাস্তি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এভাবে দণ্ড চাপিয়ে দিলে বিচার প্রতিষ্ঠা হবে, ন্যায়বিচার নয়।
গতকাল সাকিব কান্ডের ফটো-ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার সাথে সাথেই দেশের জনগণ দুটো দলে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। একটি দল সাকিবের পক্ষ নিয়ে কমিটি-আম্পায়ারকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন। অন্য দলটি আম্পায়ারের পক্ষ নিয়ে সাকিবকে একহাত নিয়েছেন, সাকিবের উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের দিকে আঙুল তুলেছেন।
 মাঠের ঘটনায় দু’চারটা ফটো দেখে কে দোষী আর কে নির্দোষ তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র দোষ ঠেলাঠেলি করে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে ঘটনাটি ছেড়ে দেয়াও উচিত নয়।
শুনেছি সাকিব-সুজন-আম্পায়ার-কমিটির মধ্যে ‘মিটমাট’ হয়ে গিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এই ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক’ হয়ে যাবার সাথে ন্যায় বিচারের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের পরিস্থিতি বাহাত্তরে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তবুও আমরা অনেক পরে হলেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছি।
মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতিও এখন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে কিন্তু ন্যায় বিচারের প্রক্রিয়া তো থেমে যায়নি। তাহলে মেজর সিনহার পরিবার চাইলেই তো ওসি প্রদীপ এর সাথে ‘মিটমাট’ করে নিতে পারে। কিন্তু তা করলে সমাজে অশনিসংকেত নেমে আসবে, অন্যায় আস্কারা পাবে, অন্যায় বেড়ে যাবে মিটমাট হবার আশায়।
গতকাল মাঠে সাকিব-আম্পায়ারের মাঝে যে ঘটনা ঘটেছে তা এখন শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত ঘটনা হয়ে নেই। পুরো দেশের জনগণ, শিশু-কিশোর তারাও প্রত্যক্ষ করেছে এই ঘটনা। এটি এখন এক প্রকার জনস্বার্থে পরিণত হয়েছে।
এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। যদি সাকিব দোষী হয় তবে সাকিবের শাস্তি হোক, শিশু-কিশোররা জানুক যে সাকিব ক্রিকেট আইন ভঙ্গ করেছিল তাই সাকিব শাস্তি পেয়েছে, সাকিবের এই লাথি মারার প্র্যাকটিস করা যাবেনা, করলে আমাদের সবাইকে শাস্তি পেতে হবে।
আর তদন্তে যদি কমিটি-আম্পায়ার দোষী হয় তবে তাদেরও শাস্তি হোক। দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ তার অবসান হোক। মাঠে-ঘাটে তথা দেশের সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। যেখানে দেশের ১৬ কোটি জনগণের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, নিঃস্বার্থ পরিষ্কার আবেগ জড়িত, ক্রিকেটের সেই স্থানটাও পরিষ্কার হোক। ক্রিকেটের দুর্নীতি নিপাত যাক, ক্রিকেট সকল সন্দেহের ঊর্ধ্বে গিয়ে জনগণের আরো বিশুদ্ধ আবেগ-ভালোবাসা পাক।
লেখকঃ মো: রায়হানুজ্জামান সোহান
প্রভাষক, আইন ও মানবাধিকার বিভাগ ,বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। 
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, ঝুলন্ত  লাশ উদ্ধার

সাকিব কান্ড, জনরোষ এবং আইনের শাসন

প্রকাশিত সময় : ০৬:০১:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১
‘বিচার’ এবং ‘ন্যায়বিচার’ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। বিচারের মাধ্যমে সমাজে কখনো কখনো অন্যায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারের মাধ্যমে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সময় আদালত Audi Alteram Partem নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি অনুসরণ করে যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘অন্য পক্ষের কথা শ্রবণ করুন’।
অর্থাৎ শুধুমাত্র এক পক্ষের কথা শুনে অপর পক্ষের ওপর দন্ড বা শাস্তি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এভাবে দণ্ড চাপিয়ে দিলে বিচার প্রতিষ্ঠা হবে, ন্যায়বিচার নয়।
গতকাল সাকিব কান্ডের ফটো-ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার সাথে সাথেই দেশের জনগণ দুটো দলে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। একটি দল সাকিবের পক্ষ নিয়ে কমিটি-আম্পায়ারকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন। অন্য দলটি আম্পায়ারের পক্ষ নিয়ে সাকিবকে একহাত নিয়েছেন, সাকিবের উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের দিকে আঙুল তুলেছেন।
 মাঠের ঘটনায় দু’চারটা ফটো দেখে কে দোষী আর কে নির্দোষ তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র দোষ ঠেলাঠেলি করে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে ঘটনাটি ছেড়ে দেয়াও উচিত নয়।
শুনেছি সাকিব-সুজন-আম্পায়ার-কমিটির মধ্যে ‘মিটমাট’ হয়ে গিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এই ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক’ হয়ে যাবার সাথে ন্যায় বিচারের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের পরিস্থিতি বাহাত্তরে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তবুও আমরা অনেক পরে হলেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছি।
মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পরিস্থিতিও এখন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে কিন্তু ন্যায় বিচারের প্রক্রিয়া তো থেমে যায়নি। তাহলে মেজর সিনহার পরিবার চাইলেই তো ওসি প্রদীপ এর সাথে ‘মিটমাট’ করে নিতে পারে। কিন্তু তা করলে সমাজে অশনিসংকেত নেমে আসবে, অন্যায় আস্কারা পাবে, অন্যায় বেড়ে যাবে মিটমাট হবার আশায়।
গতকাল মাঠে সাকিব-আম্পায়ারের মাঝে যে ঘটনা ঘটেছে তা এখন শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তিগত ঘটনা হয়ে নেই। পুরো দেশের জনগণ, শিশু-কিশোর তারাও প্রত্যক্ষ করেছে এই ঘটনা। এটি এখন এক প্রকার জনস্বার্থে পরিণত হয়েছে।
এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। যদি সাকিব দোষী হয় তবে সাকিবের শাস্তি হোক, শিশু-কিশোররা জানুক যে সাকিব ক্রিকেট আইন ভঙ্গ করেছিল তাই সাকিব শাস্তি পেয়েছে, সাকিবের এই লাথি মারার প্র্যাকটিস করা যাবেনা, করলে আমাদের সবাইকে শাস্তি পেতে হবে।
আর তদন্তে যদি কমিটি-আম্পায়ার দোষী হয় তবে তাদেরও শাস্তি হোক। দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ তার অবসান হোক। মাঠে-ঘাটে তথা দেশের সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। যেখানে দেশের ১৬ কোটি জনগণের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, নিঃস্বার্থ পরিষ্কার আবেগ জড়িত, ক্রিকেটের সেই স্থানটাও পরিষ্কার হোক। ক্রিকেটের দুর্নীতি নিপাত যাক, ক্রিকেট সকল সন্দেহের ঊর্ধ্বে গিয়ে জনগণের আরো বিশুদ্ধ আবেগ-ভালোবাসা পাক।
লেখকঃ মো: রায়হানুজ্জামান সোহান
প্রভাষক, আইন ও মানবাধিকার বিভাগ ,বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।