বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাজল ঘণ্টা

ঠিক ৫৪৩ দিন আগে বন্ধ হয়েছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মহামারি করোনার কারণে এক ধরনের ঘরবন্দি ছিলেন শিক্ষার্থীরা। ইচ্ছা থাকলেও চিরচেনা বিদ্যাপীঠে রাখতে পারেননি পা। শুধুই ছিলেন অপেক্ষায়।

অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল রোববার। এদিন সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ছুটে চলেন নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিদ্যালয়ের সেই চিরচেনা ঘণ্টার শব্দটিও কানে ভেসে আসে। শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠেন আনন্দ-উল্লাসে, মুক্তির নিশ্বাসে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর প্রথম ক্লাস করলেন তারা।

চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক দূরত্ব মানাতে বিদ্যালয়গুলোর প্রবেশপথে করা হয়েছে মার্কিং। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ, বাথরুম, শিক্ষকদের অফিস ও কমনরুম করা হয়েছে স্যানিটাইজ। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ঢুকতে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসানো হয়েছে ওয়াশ ব্লক।

বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীরা

বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীরা

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগর এবং উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা তিন হাজার ৭৪৮টি। সম্প্রতি ঘোষণা পেয়েই খোলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিদ্যালয়গুলো।

নগরীর ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নীলিমা দেবী বলেন, দেড় বছর পর সবাই একসঙ্গে মিলিত হচ্ছি, এটি অনেক আনন্দের। প্রিয় ক্যাম্পাসকে মিস করেছি। ভাবিনি আবার ফিরতে পারবো।

ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদা আক্তার বলেন, সরকারি সব নির্দেশনা মেনেই স্কুল খোলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুবিধার্থে দুই শিফটে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।

বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

সীতাকুণ্ড উপজেলার লতিফপুর আলহাজ আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ওমর শরীফ বলেন, সরকারি ঘোষণা আসার পরপরই বিদ্যালয় খোলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ম্যানেজিং কমিটি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সবাইকে মাস্ক পরে স্কুলে আসতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পাঠদান চলছে।

চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম জিয়াউল হায়দার বলেন, করোনার সংক্রমণ এড়াতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েই চট্টগ্রামের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ব্যাপারে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, খোলার নির্দেশনা পেয়েই চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ৮৮টি স্কুল, ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৩টি কলেজ, সাতটি কিন্ডারগার্টেন, চারটি কম্পিউটার ইন. কলেজ, তিনটি নৈশ বিদ্যালয়, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩শ’ ফোরকানিয়া মাদরাসা, দুটি গীতাশিক্ষা কেন্দ্র ও একটি গণশিক্ষা কেন্দ্র পরিষ্কার করা হয়। স্কুল-কলেজের আশপাশে পানি জমে থাকায় মশা নিধনের ওষুধ ও জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হয়। এছাড়া ক্লাস চলাকালীন কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ক্লাসে শিক্ষার্থীরা

ক্লাসে শিক্ষার্থীরা

এর আগে, শনিবার নগরের কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে খোলার প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন চট্টগ্রামের ডিসি মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। সে সময় তিনি জানান, যাদের পাবলিক পরীক্ষা রয়েছে, তারা সপ্তাহে প্রতিদিন ক্লাস করবে। আর যাদের পাবলিক পরীক্ষা নেই, তারা সপ্তাহে একদিন ক্লাস করবে।

এ সময় সন্তানকে পৌঁছে দিয়ে বিদ্যালয়ের সামনে বসে কিংবা জটলা না করতে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধও জানান তিনি ডেইলি বাংলাদেশ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বাজল ঘণ্টা

প্রকাশিত সময় : ০৩:১৬:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১

ঠিক ৫৪৩ দিন আগে বন্ধ হয়েছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মহামারি করোনার কারণে এক ধরনের ঘরবন্দি ছিলেন শিক্ষার্থীরা। ইচ্ছা থাকলেও চিরচেনা বিদ্যাপীঠে রাখতে পারেননি পা। শুধুই ছিলেন অপেক্ষায়।

অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল রোববার। এদিন সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ছুটে চলেন নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিদ্যালয়ের সেই চিরচেনা ঘণ্টার শব্দটিও কানে ভেসে আসে। শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠেন আনন্দ-উল্লাসে, মুক্তির নিশ্বাসে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস পর প্রথম ক্লাস করলেন তারা।

চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক দূরত্ব মানাতে বিদ্যালয়গুলোর প্রবেশপথে করা হয়েছে মার্কিং। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ, বাথরুম, শিক্ষকদের অফিস ও কমনরুম করা হয়েছে স্যানিটাইজ। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ঢুকতে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসানো হয়েছে ওয়াশ ব্লক।

বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীরা

বিদ্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীরা

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগর এবং উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা তিন হাজার ৭৪৮টি। সম্প্রতি ঘোষণা পেয়েই খোলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বিদ্যালয়গুলো।

নগরীর ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নীলিমা দেবী বলেন, দেড় বছর পর সবাই একসঙ্গে মিলিত হচ্ছি, এটি অনেক আনন্দের। প্রিয় ক্যাম্পাসকে মিস করেছি। ভাবিনি আবার ফিরতে পারবো।

ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদা আক্তার বলেন, সরকারি সব নির্দেশনা মেনেই স্কুল খোলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের সুবিধার্থে দুই শিফটে ক্লাস নেয়া হচ্ছে।

বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

সীতাকুণ্ড উপজেলার লতিফপুর আলহাজ আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ওমর শরীফ বলেন, সরকারি ঘোষণা আসার পরপরই বিদ্যালয় খোলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ম্যানেজিং কমিটি। এছাড়া শিক্ষার্থীদের শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সবাইকে মাস্ক পরে স্কুলে আসতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পাঠদান চলছে।

চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম জিয়াউল হায়দার বলেন, করোনার সংক্রমণ এড়াতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েই চট্টগ্রামের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ব্যাপারে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার বলেন, খোলার নির্দেশনা পেয়েই চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ৮৮টি স্কুল, ৪৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৩টি কলেজ, সাতটি কিন্ডারগার্টেন, চারটি কম্পিউটার ইন. কলেজ, তিনটি নৈশ বিদ্যালয়, দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩শ’ ফোরকানিয়া মাদরাসা, দুটি গীতাশিক্ষা কেন্দ্র ও একটি গণশিক্ষা কেন্দ্র পরিষ্কার করা হয়। স্কুল-কলেজের আশপাশে পানি জমে থাকায় মশা নিধনের ওষুধ ও জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হয়। এছাড়া ক্লাস চলাকালীন কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে শিক্ষকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ক্লাসে শিক্ষার্থীরা

ক্লাসে শিক্ষার্থীরা

এর আগে, শনিবার নগরের কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে খোলার প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন চট্টগ্রামের ডিসি মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। সে সময় তিনি জানান, যাদের পাবলিক পরীক্ষা রয়েছে, তারা সপ্তাহে প্রতিদিন ক্লাস করবে। আর যাদের পাবলিক পরীক্ষা নেই, তারা সপ্তাহে একদিন ক্লাস করবে।

এ সময় সন্তানকে পৌঁছে দিয়ে বিদ্যালয়ের সামনে বসে কিংবা জটলা না করতে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধও জানান তিনি ডেইলি বাংলাদেশ