বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ পুলিশের তৃতীয় দফার চিঠিতেও সাড়া নেই দিল্লির

গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক এবং বরখাস্ত হওয়া বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে দেশে ফেরাতে দিল্লিতে অবস্থিত ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) আরেক দফায় চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

আগের দুই দফায় পাঠানো চিঠির সাড়া না পেয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর দিল্লির ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) তৃতীয় দফায় চিঠি পাঠায় পুলিশ সদর দফতর। তবে এ চিঠি পাঠানোর পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও দিল্লির পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি।

এর আগে বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখা থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম ও ৭ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত তথ্য সংযুক্ত করে চিঠি পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বলেন, ভারতে গ্রেফতার সোহেল রানাকে ফেরত চেয়ে ৭ সেপ্টেম্বর দিল্লি এনসিবিকে পাঠানো চিঠির সাড়া না পেয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দফায় চিঠি দেয়া হয়েছে। যদিও তিন দফা চিঠির কোনোটিরই জবাব আমরা পাইনি।

এর আগে মহিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, যেহেতু সোহেল রানা ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন, সে দেশের কিছু আইনি বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তবে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার সেটা আমরা নিচ্ছি। তবে সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্দায় ওই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়েন সোহেল রানা। পরদিন ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়।

বিএসএফের হাতে আটক হওয়া সোহেল রানা গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। বনানী থানার এই পুলিশ পরিদর্শকের বোন ও ভগ্নিপতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ই-অরেঞ্জ’ পরিচালনা করতেন।

গত ১৭ আগস্ট অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। ওই সময় তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই মামলা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন- ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, আমানউল্ল্যাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ এবং পুলিশের বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা।

শুরু থেকেই ই-অরেঞ্জের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন সোহেল রানা। তবে ই-অরেঞ্জ বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠান খুলতে নেয়া টিআইএন সনদে পরিচালক হিসেবে সোহেল রানার নাম দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিভিন্ন সময়ে আড়াই কোটি টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ভারতে আটক হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা অপরাধমূলক একাধিক কাজে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএসএফের কর্মকর্তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলেছে, সম্ভবত গা ঢাকা দেওয়ার লক্ষ্যে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন সোহেল রানা।

গত ৫ সেপ্টেম্বর শেখ সোহেল রানার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দায়ের করা প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কাছে আবেদন করেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান। তখন পর্যন্ত তিনি বনানী থানায় কর্মরত ছিলেন। তবে গ্রেফতা দেখানোর আদেশ পাওয়ার আগেই তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান এবং ভারতে গ্রেফতার হন।

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সোহেল রানাসহ কয়েকজনকে আসামি করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় আরও একটি মামলা করেন এক গ্রাহক। এ নিয়ে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান ও কোতোয়ালি থানায় চারটি মামলা হলো। এর মধ্যে গুলশান থানার দুই মামলার আসামি সোহেল রানা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম ইতোপূর্বে সোহেল রানার অর্থ-সম্পদের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষসহ (বিআরটিএ) বিভিন্ন সংস্থায় চিঠি দিয়েছেন।-জাগরণ=

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ পুলিশের তৃতীয় দফার চিঠিতেও সাড়া নেই দিল্লির

প্রকাশিত সময় : ১০:০৮:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মাথায় নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক এবং বরখাস্ত হওয়া বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানাকে দেশে ফেরাতে দিল্লিতে অবস্থিত ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) আরেক দফায় চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।

আগের দুই দফায় পাঠানো চিঠির সাড়া না পেয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর দিল্লির ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) তৃতীয় দফায় চিঠি পাঠায় পুলিশ সদর দফতর। তবে এ চিঠি পাঠানোর পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও দিল্লির পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি।

এর আগে বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখা থেকে গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রথম ও ৭ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত তথ্য সংযুক্ত করে চিঠি পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম বলেন, ভারতে গ্রেফতার সোহেল রানাকে ফেরত চেয়ে ৭ সেপ্টেম্বর দিল্লি এনসিবিকে পাঠানো চিঠির সাড়া না পেয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দফায় চিঠি দেয়া হয়েছে। যদিও তিন দফা চিঠির কোনোটিরই জবাব আমরা পাইনি।

এর আগে মহিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, যেহেতু সোহেল রানা ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন, সে দেশের কিছু আইনি বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তবে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার সেটা আমরা নিচ্ছি। তবে সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্দায় ওই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়েন সোহেল রানা। পরদিন ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে তা প্রকাশিত হয়।

বিএসএফের হাতে আটক হওয়া সোহেল রানা গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বহুল আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। বনানী থানার এই পুলিশ পরিদর্শকের বোন ও ভগ্নিপতি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ই-অরেঞ্জ’ পরিচালনা করতেন।

গত ১৭ আগস্ট অগ্রিম অর্থ পরিশোধের পরও মাসের পর মাস পণ্য না পাওয়ায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারণার শিকার গ্রাহক মো. তাহেরুল ইসলাম। ওই সময় তার সঙ্গে প্রতারণার শিকার আরও ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই মামলা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন- ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, আমানউল্ল্যাহ, বিথী আক্তার, কাউসার আহমেদ এবং পুলিশের বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা।

শুরু থেকেই ই-অরেঞ্জের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন সোহেল রানা। তবে ই-অরেঞ্জ বাংলাদেশ নামে প্রতিষ্ঠান খুলতে নেয়া টিআইএন সনদে পরিচালক হিসেবে সোহেল রানার নাম দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিভিন্ন সময়ে আড়াই কোটি টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ভারতে আটক হওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা অপরাধমূলক একাধিক কাজে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন বিএসএফের কর্মকর্তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলেছে, সম্ভবত গা ঢাকা দেওয়ার লক্ষ্যে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন সোহেল রানা।

গত ৫ সেপ্টেম্বর শেখ সোহেল রানার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দায়ের করা প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় গ্রেফতার দেখানোর অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কাছে আবেদন করেন গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান। তখন পর্যন্ত তিনি বনানী থানায় কর্মরত ছিলেন। তবে গ্রেফতা দেখানোর আদেশ পাওয়ার আগেই তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যান এবং ভারতে গ্রেফতার হন।

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সোহেল রানাসহ কয়েকজনকে আসামি করে গত ১৩ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় আরও একটি মামলা করেন এক গ্রাহক। এ নিয়ে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান ও কোতোয়ালি থানায় চারটি মামলা হলো। এর মধ্যে গুলশান থানার দুই মামলার আসামি সোহেল রানা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম ইতোপূর্বে সোহেল রানার অর্থ-সম্পদের বিস্তারিত তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষসহ (বিআরটিএ) বিভিন্ন সংস্থায় চিঠি দিয়েছেন।-জাগরণ=