শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইসল্যান্ডের সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসন জিতল নারীরা

বরফের দেশ আইসল্যান্ডের জনগণ এবার একটি নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ নির্বাচন করেছে। উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলের এই দ্বীপের দেশে লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে এই নির্বাচন একটি মাইলফক ঘটনা। এই নির্বাচনে মধ্যপন্থী দলগুলো সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে।

রবিবার সব ভোট গণনার পর দেখা যায় যে, আইসল্যান্ডের ৬৩ আসনের সংসদ আলথিং-এ নারী প্রার্থীরা ৩৩ টি আসন পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন জ্যাকবসডোতির নেতৃত্বাধীন বিদায়ী জোট সরকারের তিনটি দল শনিবারের ভোটে মোট ৩৭টি আসন জিতেছে, যা গত নির্বাচনের চেয়ে দুটি বেশি। এর ফলে ফের তাদের জোট হিসেবে ক্ষমতায় থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

নারী প্রার্থীর দিক থেকে এগিয়ে থাকা বাম দলগুলোর খারাপ ফলাফল সত্ত্বেও নারীদের জন্য এই মাইলফলক বিজয় আসল।

রাজনীতির অধ্যাপক সিলজা বারা ওমারসদতির বলেন, গত এক দশক ধরে বামপন্থী দলগুলোর বাস্তবায়িত লিঙ্গ কোটা আইসল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিসরে একটি নতুন আদর্শ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘প্রার্থী নির্বাচন করার সময় লিঙ্গ সমতা উপেক্ষা করা এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়’।

নির্বাচনের আগের মতামত জরিপে দেখা গিয়েছিল যে, বামপন্থী দলগুলোর জয় পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেখানে ১০টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। কিন্তু নির্বাচনের পরে দেখা গেল যে, মধ্য-ডান ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। দলটি ১৬টি আসন জিতেছে, যার মধ্যে সাতটি নারীদের দখলে। মধ্যপন্থী প্রগ্রেসিভ পার্টি গতবারের চেয়ে পাঁচটি বেশি তথা ১৩টি আসন পেয়েছে। তারাই সবচেয়ে বড় জয় উদযাপন করছে এবার।

নির্বাচনের আগে এই দুই দল জ্যাকবসডোতিরের বামপন্থী গ্রিন পার্টির সঙ্গে মিলে আইসল্যান্ডের তিনদলীয় জোট সরকার গঠন করে। গ্রিন পার্টি বেশ কয়েকটি আসন হারিয়েছে, কিন্তু ভোটের পূর্বাভাসকে ভুল প্রমাণ করে ৮টি আসন ধরে রেখেছে।

এই তিন ক্ষমতাসীন দল এখনো ঘোষণা করেনি যে, তারা পরের মেয়াদেও একসাথে কাজ করবে কিনা। কিন্তু ভোটারদের কাছ থেকে জোরালো সমর্থন পাওয়ার পর সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। নতুন সরকার গঠন ও ঘোষণার জন্য আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এবার আইসল্যান্ডের নির্বাচনী কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। উত্তর আটলান্টিকে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের একটি হিমবাহ-অধ্যুষিত আগ্নেয় দ্বীপ দেশ আইসল্যান্ড। গত বছর দেশটিতে টানা ৫৯ দিন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির উপরে ছিল, যা আইসল্যান্ডীয় মানদণ্ড অনুযায়ী একটি ব্যতিক্রমী উষ্ণ গ্রীষ্ম ছিল। যার ফলে হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছিল। এই বিষয়টি আইসল্যান্ডের রাজনৈতিক এজেন্ডায় সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে।

অথচ প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আওতায় আইসল্যান্ড যে মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার চেয়েও বেশি মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েও চারটি বাম-ঘেঁষা দল নিজেদের সমর্থন বাড়াতে পারেনি।

এবারের সংসদে আইসল্যান্ড তার ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক এবং সবচেয়ে তরুণ আইনপ্রণেতা পেতে যাচ্ছে। এরা হলেন- ৭২ বছর বয়সী বার্গারের যুগ্ম মালিক টমাস টমাসন এবং ২১ বছর বয়সী আইনের শিক্ষার্থী এবং কুর্দি অভিবাসী বাবা-মায়ের কন্যা লেনিয়া রান করিম। লেনিয়া কর্তৃত্ত্ববাদ বিরোধী দল পাইরেট পার্টির সদস্য।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে লেনিয়া বলেন, ‘আমি শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি আইসল্যান্ডের আচরণকে আরও উন্নত করতে চাই। সংসদে তরুণদের পক্ষে কথা বলার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণাগুলি আরও শোনা দরকার’।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

আইসল্যান্ডের সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসন জিতল নারীরা

প্রকাশিত সময় : ০৯:২৪:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

বরফের দেশ আইসল্যান্ডের জনগণ এবার একটি নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ নির্বাচন করেছে। উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলের এই দ্বীপের দেশে লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে এই নির্বাচন একটি মাইলফক ঘটনা। এই নির্বাচনে মধ্যপন্থী দলগুলো সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে।

রবিবার সব ভোট গণনার পর দেখা যায় যে, আইসল্যান্ডের ৬৩ আসনের সংসদ আলথিং-এ নারী প্রার্থীরা ৩৩ টি আসন পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন জ্যাকবসডোতির নেতৃত্বাধীন বিদায়ী জোট সরকারের তিনটি দল শনিবারের ভোটে মোট ৩৭টি আসন জিতেছে, যা গত নির্বাচনের চেয়ে দুটি বেশি। এর ফলে ফের তাদের জোট হিসেবে ক্ষমতায় থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

নারী প্রার্থীর দিক থেকে এগিয়ে থাকা বাম দলগুলোর খারাপ ফলাফল সত্ত্বেও নারীদের জন্য এই মাইলফলক বিজয় আসল।

রাজনীতির অধ্যাপক সিলজা বারা ওমারসদতির বলেন, গত এক দশক ধরে বামপন্থী দলগুলোর বাস্তবায়িত লিঙ্গ কোটা আইসল্যান্ডের রাজনৈতিক পরিসরে একটি নতুন আদর্শ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘প্রার্থী নির্বাচন করার সময় লিঙ্গ সমতা উপেক্ষা করা এখন আর গ্রহণযোগ্য নয়’।

নির্বাচনের আগের মতামত জরিপে দেখা গিয়েছিল যে, বামপন্থী দলগুলোর জয় পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যেখানে ১০টি দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। কিন্তু নির্বাচনের পরে দেখা গেল যে, মধ্য-ডান ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে। দলটি ১৬টি আসন জিতেছে, যার মধ্যে সাতটি নারীদের দখলে। মধ্যপন্থী প্রগ্রেসিভ পার্টি গতবারের চেয়ে পাঁচটি বেশি তথা ১৩টি আসন পেয়েছে। তারাই সবচেয়ে বড় জয় উদযাপন করছে এবার।

নির্বাচনের আগে এই দুই দল জ্যাকবসডোতিরের বামপন্থী গ্রিন পার্টির সঙ্গে মিলে আইসল্যান্ডের তিনদলীয় জোট সরকার গঠন করে। গ্রিন পার্টি বেশ কয়েকটি আসন হারিয়েছে, কিন্তু ভোটের পূর্বাভাসকে ভুল প্রমাণ করে ৮টি আসন ধরে রেখেছে।

এই তিন ক্ষমতাসীন দল এখনো ঘোষণা করেনি যে, তারা পরের মেয়াদেও একসাথে কাজ করবে কিনা। কিন্তু ভোটারদের কাছ থেকে জোরালো সমর্থন পাওয়ার পর সেই সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। নতুন সরকার গঠন ও ঘোষণার জন্য আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এবার আইসল্যান্ডের নির্বাচনী কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। উত্তর আটলান্টিকে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষের একটি হিমবাহ-অধ্যুষিত আগ্নেয় দ্বীপ দেশ আইসল্যান্ড। গত বছর দেশটিতে টানা ৫৯ দিন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির উপরে ছিল, যা আইসল্যান্ডীয় মানদণ্ড অনুযায়ী একটি ব্যতিক্রমী উষ্ণ গ্রীষ্ম ছিল। যার ফলে হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছিল। এই বিষয়টি আইসল্যান্ডের রাজনৈতিক এজেন্ডায় সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে।

অথচ প্যারিস জলবায়ু চুক্তির আওতায় আইসল্যান্ড যে মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার চেয়েও বেশি মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েও চারটি বাম-ঘেঁষা দল নিজেদের সমর্থন বাড়াতে পারেনি।

এবারের সংসদে আইসল্যান্ড তার ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক এবং সবচেয়ে তরুণ আইনপ্রণেতা পেতে যাচ্ছে। এরা হলেন- ৭২ বছর বয়সী বার্গারের যুগ্ম মালিক টমাস টমাসন এবং ২১ বছর বয়সী আইনের শিক্ষার্থী এবং কুর্দি অভিবাসী বাবা-মায়ের কন্যা লেনিয়া রান করিম। লেনিয়া কর্তৃত্ত্ববাদ বিরোধী দল পাইরেট পার্টির সদস্য।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে লেনিয়া বলেন, ‘আমি শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি আইসল্যান্ডের আচরণকে আরও উন্নত করতে চাই। সংসদে তরুণদের পক্ষে কথা বলার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণাগুলি আরও শোনা দরকার’।