মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ-হত্যা: ভারতে পালানোর সময় গ্রেফতার প্রেমিক

সাতক্ষীরার দেবহাটায় দশম শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণিমা দাসকে (১৬) এসএসএম করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার একমাত্র আসামি পূর্ণিমার প্রেমিক পার্থ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আত্মগোপনে থাকা পার্থ মণ্ডলকে ধরতে একের পর এক চিরুনি অভিযান চালায় পুলিশ।

অবশেষে শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. সজিব খানের নেতৃত্বে দেবহাটা থানার ওসি ফরিদ আহমেদসহ সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি চৌকস দল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাথন্ডা সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতে পালানোর প্রস্তুতিকালে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এর আগে শুক্রবার রাতে নিহত পূর্ণিমা দাসের বাবা টিকেট গ্রামের শান্তি দাস বাদী হয়ে তার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোবাইলের মাধ্যমে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পূর্ণিমার প্রেমিক একই এলাকার শিবপদ মণ্ডলের ছেলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারী পার্থ মণ্ডলকে একমাত্র আসামি করে দেবহাটা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১১।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পার্থ মণ্ডলকে গ্রেফতারে দেবহাটাসহ সাতক্ষীরা শহরের সম্ভাব্য একাধিক স্থানে চিরুনি অভিযান চালায় দেবহাটা থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একাধিক দল।

চাঞ্চল্যকর এ মামলার একমাত্র আসামি পার্থ মণ্ডলকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে দেবহাটা থানার ওসি (চলতি দায়িত্ব) ফরিদ আহমেদ বলেন, স্কুলছাত্রী পূর্ণিমা দাসকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকে একমাত্র আসামি পূর্ণিমার প্রেমিক পার্থ মণ্ডলকে দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করতে সম্ভাব্য একাধিক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। সর্বশেষ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পলাতক পার্থ মণ্ডলের অবস্থান শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পরে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ভারতে পালানোর প্রস্তুতিকালে সদরের কাথন্ডা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। গ্রেফতার পরবর্তী পার্থ মণ্ডলকে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সংক্রান্ত আরোও বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলেও জানান ফরিদ আহমেদ।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়ে রাতভর নিখোঁজ ছিল উপজেলার টিকেট গ্রামের শান্তি দাসের মেয়ে গাভা একেএম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণিমা দাস। পরদিন শুক্রবার সকালে একই এলাকার তারক মণ্ডলের পরিত্যক্ত বাড়ির সবজি বাগান থেকে পূর্ণিমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের কিছুটা দূরে পড়ে থাকা ভিকটিমের বই-খাতা, জুতা ও গোপনে ব্যবহার করা পূর্ণিমার একটি মোবাইল ফোনও আলামত হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। যার ক্ষুদে বার্তায় দেখা যায়, নিখোঁজের আগ মুহূর্তে পূর্ণিমাকে ওই পরিত্যক্ত বাড়ির কাছাকাছি যাওয়ার জন্য এসএমএস করেছিল তার প্রেমিক পার্থ মণ্ডল। পরিবারের সদস্যদের নজর এড়িয়ে পূর্ণিমা ওই মোবাইল ফোনটি গোপনে ব্যবহার এবং পার্থ মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পরে উদ্ধারকৃত মোবাইলের কললিস্ট অ্যানালাইসিসসহ তাতে পাওয়া প্রেমিক পার্থ মণ্ডলের নাম্বার ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তসহ পার্থ মণ্ডলকে গ্রেফতারের অভিযান শুরু করে পুলিশ। মরদেহটি উদ্ধারকালে নিহত পূর্ণিমার মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে যৌন নির্যাতন এবং গলায় শ্বাসরোধের সুস্পষ্ট চিহ্নও দেখা যায়। যা থেকে পূর্ণিমাকে ধর্ষণ ও পরে শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে ধারণা করে পুলিশ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ-হত্যা: ভারতে পালানোর সময় গ্রেফতার প্রেমিক

প্রকাশিত সময় : ০৫:৩০:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

সাতক্ষীরার দেবহাটায় দশম শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণিমা দাসকে (১৬) এসএসএম করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার একমাত্র আসামি পূর্ণিমার প্রেমিক পার্থ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আত্মগোপনে থাকা পার্থ মণ্ডলকে ধরতে একের পর এক চিরুনি অভিযান চালায় পুলিশ।

অবশেষে শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. সজিব খানের নেতৃত্বে দেবহাটা থানার ওসি ফরিদ আহমেদসহ সাতক্ষীরা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি চৌকস দল সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাথন্ডা সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতে পালানোর প্রস্তুতিকালে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এর আগে শুক্রবার রাতে নিহত পূর্ণিমা দাসের বাবা টিকেট গ্রামের শান্তি দাস বাদী হয়ে তার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মোবাইলের মাধ্যমে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পূর্ণিমার প্রেমিক একই এলাকার শিবপদ মণ্ডলের ছেলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারী পার্থ মণ্ডলকে একমাত্র আসামি করে দেবহাটা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১১।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পার্থ মণ্ডলকে গ্রেফতারে দেবহাটাসহ সাতক্ষীরা শহরের সম্ভাব্য একাধিক স্থানে চিরুনি অভিযান চালায় দেবহাটা থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একাধিক দল।

চাঞ্চল্যকর এ মামলার একমাত্র আসামি পার্থ মণ্ডলকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে দেবহাটা থানার ওসি (চলতি দায়িত্ব) ফরিদ আহমেদ বলেন, স্কুলছাত্রী পূর্ণিমা দাসকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকে একমাত্র আসামি পূর্ণিমার প্রেমিক পার্থ মণ্ডলকে দ্রুততম সময়ে গ্রেফতার করতে সম্ভাব্য একাধিক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। সর্বশেষ মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পলাতক পার্থ মণ্ডলের অবস্থান শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পরে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ভারতে পালানোর প্রস্তুতিকালে সদরের কাথন্ডা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। গ্রেফতার পরবর্তী পার্থ মণ্ডলকে সাতক্ষীরা ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সংক্রান্ত আরোও বিস্তারিত তথ্য পরবর্তীতে গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলেও জানান ফরিদ আহমেদ।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়ে রাতভর নিখোঁজ ছিল উপজেলার টিকেট গ্রামের শান্তি দাসের মেয়ে গাভা একেএম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণিমা দাস। পরদিন শুক্রবার সকালে একই এলাকার তারক মণ্ডলের পরিত্যক্ত বাড়ির সবজি বাগান থেকে পূর্ণিমার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের কিছুটা দূরে পড়ে থাকা ভিকটিমের বই-খাতা, জুতা ও গোপনে ব্যবহার করা পূর্ণিমার একটি মোবাইল ফোনও আলামত হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। যার ক্ষুদে বার্তায় দেখা যায়, নিখোঁজের আগ মুহূর্তে পূর্ণিমাকে ওই পরিত্যক্ত বাড়ির কাছাকাছি যাওয়ার জন্য এসএমএস করেছিল তার প্রেমিক পার্থ মণ্ডল। পরিবারের সদস্যদের নজর এড়িয়ে পূর্ণিমা ওই মোবাইল ফোনটি গোপনে ব্যবহার এবং পার্থ মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতো বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

পরে উদ্ধারকৃত মোবাইলের কললিস্ট অ্যানালাইসিসসহ তাতে পাওয়া প্রেমিক পার্থ মণ্ডলের নাম্বার ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তসহ পার্থ মণ্ডলকে গ্রেফতারের অভিযান শুরু করে পুলিশ। মরদেহটি উদ্ধারকালে নিহত পূর্ণিমার মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে যৌন নির্যাতন এবং গলায় শ্বাসরোধের সুস্পষ্ট চিহ্নও দেখা যায়। যা থেকে পূর্ণিমাকে ধর্ষণ ও পরে শ্বাসরোধ করে হত্যার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে ধারণা করে পুলিশ।