টাকার অভাবে আফগানরা খাদ্য কেনার জন্য তাদের জিনিসপত্র বিক্রি করা শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ সহ পশ্চিমা দাতারা তালেবান সরকারকে এড়িয়ে সরাসরি অভাবী মানুষদের হাতে টাকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে এই গোপন পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এই খবর দিয়েছে।
রয়টার্সের হাতে আসা কিছু আভ্যন্তরীণ নীতির গোপন নথিপত্র অনুসারে, আফগানিস্তানে বিমানে করে নগদ টাকা পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যেখানে অর্থনীতি দ্রুত ধসে পড়ছে, নগদ অর্থের অভাব দেখা দিয়েছে। যদিও কূটনীতিকরা এখনও বিতর্ক করছেন যে, পশ্চিমা শক্তিগুলো এর বিনিময়ে তালেবানকে ছাড় দেওয়ার দাবি করতে পারে কিনা।
খরা এবং রাজনৈতিক উত্থানের মুখে মানবিক সংকট এড়ানোর লক্ষ্যে জরুরী তহবিল থেকে গরীব আফগানদেরকে প্রায় ২০০ মার্কিন ডলার করে দেওয়া হবে। এই টাকা কাবুলে সরাসরি ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। তালেবানরাও এতে সায় দিয়েছে এবং কোনো বাধা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে।
তাৎক্ষণিক সংকট মোকাবেলায় নগদ টাকা বিতরণের পাশাপাশি পশ্চিমা দাতা দেশগুলো একটি ‘মানবিক-প্লাস’ ট্রাস্ট ফান্ডও প্রতিষ্ঠা করতে চায়। স্কুল ও হাসপাতালগুলো খোলা রাখার জন্য ওই ফান্ড থেকে বেতন দেওয়া হবে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, আফগানিস্তানের জনসাধারণের ব্যয়ের ৭৫% আসতো বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে। কিন্তু মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী এবং বহু আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রস্থানের পর তা বন্ধ হয়ে গেছে।
আফগানিস্তান নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো এখন এক উভয় সংকট পড়েছে। একদিকে, তারা তালেবানকে ঘৃণা করে, অন্যদিকে, আফগান জনগণকেও তারা সহায়তা করতে চায়।
জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, ১ কোটি ৪০ লাখ আফগান না খেয়ে মরার ঝুঁকিতে রয়েছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিও স্থানীয় ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি আফগানি (১,১০,০০০ ডলার) নগদ বিতরণ করেছে এবং শীঘ্রই আরও নগদ অর্থ বিতরণ করতে চায় বলেও জানা গেছে।
জাতিসংঘের এক কূটনীতিক বলেন, প্রথমত, জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম নগদ টাকা কাবুলে পাঠাবে এবং সরাসরি মানুষের হাতে খাবার কেনার জন্য বিতরণ করবে। যা তারা ইতিমধ্যেই ছোট পরিসরে করে আসছে।
দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ব্যাংকের কাছে নগদ অর্থ দেওয়া হবে। এই অর্থ জাতিসংঘ এবং বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের বেতন দিতে ব্যবহৃত হবে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তারা আফগান ব্যাংকের সঙ্গে নগদ বিতরণ চ্যানেল খোলার বিষয়েও কথা বলছেন।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির একজন মুখপাত্র বলেন, সেপ্টেম্বরে প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে সাহায্য করেছে জাতিসংঘ, যা আগস্টের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। প্রধানত খাবারের মাধ্যমে এবং কাবুলে কিছু নগদ অর্থ বিতরণের মাধ্যমে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবান সরকারকে এড়িয়ে স্থানীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়নে সহায়তা করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছে।
মার্কিন কোষাগারের মুখপাত্র বলেছেন, স্বাধীন, আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে মানবিক সহায়তার অনুমতি দেওয়া হবে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা আফগানিস্তানের ৯ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ও অর্থ তালেবানদের কাছে ফেরত দেওয়া হবে না।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক /দৈনিক দেশ নিউজ বিডি ডটকম 
























