ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো মঙ্গলবার ফ্রান্সকে পুনরায় শিল্পায়নের জন্য ৩০ বিলিয়ন ইউরোর (৩৫ বিলিয়ন ডলার) এক বিশাল পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এসময় তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ও গবেষণায় ফ্রান্সকে তার হারানো মুকুট পুনরুদ্ধার করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ছয় মাস আগে এবং জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের এক মাস আগে এলিসি প্রাসাদে বক্তৃতাকালে ম্যাঁখো বলেন, ফ্রান্স তার ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের চেয়ে ১৫-২০ বছর পরে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং ফরাসিদের এখন আবার উদ্ভাবন ও গবেষণার জাতিতে পরিণত হওয়া প্রয়োজন।
এলিসি প্রাসাদের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত কোম্পানির নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অতীতে অপর্যাপ্ত বিনিয়োগের ফলে ফ্রান্সে যে ‘প্রবৃদ্ধির ঘাটতি’ দেখা দিয়েছে তা মোকাবেলার জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হবে।
তিনি বলেন, ফ্রান্সকে ‘একটি গুণী চক্র’-এ ফিরে যেতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে ‘উদ্ভাবন, উৎপাদন এবং রপ্তানি। এবং সেইভাবেই আমাদের সামাজিক মডেলকে অর্থায়ন করতে হবে’। একটি নতুন ‘ফ্রান্স ২০৩০’ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে এসব করা হবে।
ফ্রান্সের লক্ষ্য আগামী এক দশকে সবুজ হাইড্রোজেনে বৈশ্বিক নেতা হওয়া। জীবাশ্ম জ্বালানী ভিত্তিক আর্থিক খাতগুলোকে কার্বনমুক্ত করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি এবং সরকারগুলো সবুজ হাইড্রোজেনকে তাদের পরিকল্পনার কেন্দ্রে রাখছে।
ম্যাঁখো ইস্পাত উৎপাদন, সিমেন্ট এবং রাসায়নিক খাতের পাশাপাশি ট্রাক, বাস, রেল এবং বিমান পরিবহন শিল্পের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর পর, ‘যা আমাদেরকে আমাদের দুর্বলতাগুলোর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল’, ফ্রান্সকে ফরাসি এবং ইউরোপীয় উৎপাদন স্বায়ত্তশাসনের জন্য কাজ করতে হয়েছে। ফ্রান্সেরও চিকিৎসা গবেষণায়ও ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন।
বিশ্বব্যাপী কোভিড প্রাদুর্ভাবের পর ফরাসি ওষুধ কম্পানিগুলো কোনো ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে পারেনি।
ম্যাঁখো বলেন, এখন ফ্রান্সের লক্ষ্য হল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ২০টি বায়োটেক ওষুধ তৈরি করা, সেইসঙ্গে বার্ধক্যজনিত রোগসহ উদীয়মান ও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করা।
‘এই লক্ষ্যে আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা মনোনিবেশ করা দরকার’।
এক নতুন বিপ্লব
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরাসি প্রেসিডেন্ট অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, কোভিড সংকটের প্রেক্ষিতে ম্যাঁখো এই পরিকল্পনা তৈরি করেছেন, ‘যা আমাদের দুর্বলতা এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিদেশের উপর আমাদের নির্ভরতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। এছাড়া বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন ও গবেষণার গুরুত্বও দেখিয়ে দিয়েছে, যার মাধ্যমে সবকিছু বদলে ফেলা সম্ভব’।
ফরাসি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে, এই ঘাটতি পূরণে ফ্রান্সকে দ্রুত কাজ করতে হবে এবং চীনের মতো উদীয়মান শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করা যাবে না।
ম্যাঁখো বলেন, গত ৩০ বছর ধরে ‘নিষ্ঠুরভাবে’ ভোগা ফরাসি গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোকে রাস্তায় ২০ লাখ বৈদ্যুতিক বা হাইব্রিড গাড়ি নামানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে।
ম্যাঁখো বলেন, ফ্রান্স ২০৩০ সালের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনে ‘যুগান্তকারী উদ্ভাবনে’ ১০০ কোটি ইউরো বিনিয়োগ করবে, বিশেষ করে উন্নত পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহ ছোট আকারের পারমাণবিক চুল্লি ডিজাইন করার জন্য বিনিয়োগ করা হবে।
তিনি বলেন, কৃষিতেও যুগান্তকারী উদ্ভাবন প্রয়োজন। যেখানে বিশেষ করে রোবোটিক্সের মতো নতুন প্রযুক্তির জন্য দুই বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করা হবে।
ম্যাঁখো বলেন, ফ্রান্সের খাদ্য উৎপাদনেও ‘একটি নতুন বিপ্লব’ শুরু করা উচিত, যা ‘স্বাস্থ্যকর ও টেকসই’ হবে।
তিনি বলেন, এই বিষয়টি ডিজিটাল, রোবোটিক্স এবং জিন প্রযুক্তি এই ‘তিন বিপ্লবে’ বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করবে।
এর মাধ্যমে কৃষিকে আরও পরিষ্কার করে তোলা হবে, ‘কিছু কীটনাশক’ বাতিল করা হবে, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং ‘জৈব-সমাধান’ তৈরি করা হবে। যার মধ্য দিয়ে কৃষি ‘আরও স্থিতিস্থাপক এবং আরও টেকসই’ হবে।
ম্যাঁখোর পরিকল্পনায় আগামী ১০ বছরে ফরাসিদের গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানে সহায়তার কথাও বলা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক /দৈনিক দেশ নিউজ বিডি ডটকম 
























