শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য তালেবানকে যে পরামর্শ দিল পাকিস্তান

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বৃহস্পতিবার কাবুল সফরের সময় আফগানিস্তানের নতুন শাসক তালেবানদেরকে কীভাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করা যায় সে ব্যাপারে সবক দিয়েছেন। এসময় পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রধানও তার সঙ্গে ছিলেন।

তালেবানরা তাদের শাসনের মাত্র নয় সপ্তাহের মাথায় এক নতুন সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক বিস্ফোরণে রাজধানী কাবুলের প্রধান বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং কাবুলের ৪৬ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন।

তালেবানরা গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের প্রাক্তন মার্কিন সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই তাদের ইসলামি শাসন ব্যবস্থার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও আর্থিক সহায়তা লাভের চেষ্টা করছে।

ইসলামাবাদে ফিরে আসার পর কুরেশি বলেন, ‘প্রতিবেশী এবং একজন শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু হিসেবে আমি তাদেরকে তাদের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে তা জানিয়েছি’।

কুরেশি জানান, বৃহস্পতিবার তার কাবুল সফরকালে তিনি তালেবানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ এবং তালেবানের মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এই সফরে তালেবানের সঙ্গে তিনি সকলের অংশগ্রহণে একটি সরকার গঠন, নারীর অধিকার এবং মেয়েদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে দমন করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যদি তারা এই বিষয়ে ন্যায্য অগ্রগতি দেখায়, তবে স্বীকৃতির অর্জন তাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে’। তিনি আরও জানান যে, স্বীকৃতির জন্য ‘পরিবেশ আরও ভাল হচ্ছে’।

১৯৯৬ সালে তালেবানের প্রথম শাসনকে স্বীকৃতি দেওয়া মাত্র তিনটি দেশের একটি পাকিস্তানকে এবারও ক্ষমতায় ফেরার পর তালেবানের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যাচ্ছে।

তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি কুরেশির সফরকে ‘খুব ভাল যোগাযোগ’ বলে মন্তব্য করেছেন। এই সফরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য এবং সীমান্ত পুনরায় চালু করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

আফগানিস্তানের স্পিন বোলদাকের দক্ষিণ সীমান্তে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আফগান ফলের প্রচুর চালান পঁচে গেছে। পাকিস্তান তার দেশে আফগানদের প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

কুরেশি বলেন, বাণিজ্য ও আফগানদের জন্য আরো উদার ভিসা ব্যবস্থা চালু করা হবে। হাজার হাজার আফগান প্রতিদিন দুই দেশের সীমান্ত পারাপার হয়।

তিনি আরও বলেন, তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল শীঘ্রই পাকিস্তান সফর করবে।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিল যে, আফগানিস্তানের ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদেরকে ন্যাটো বাহিনী এবং ক্ষমতাচ্যুত পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে তাদের দুই দশকের যুদ্ধে সহায়তা করেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা।

আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর কাতার ও উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পর তৃতীয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আফগানিস্তান সফর করলেন কুরেশি ।

বুধবার রাশিয়ার সরকার মস্কোতে চীন ও পাকিস্তান সহ ১০টি দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তালেবান প্রতিনিধিদের এক বৈঠকের আয়োজন করে।

রাশিয়া তালেবানকে চরমপন্থী ইসলামিক স্টেট যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে এবং সবার অংশগ্রহণে একটি সরকার গঠন করার আহবান জানিয়েছে।

অন্যদিকে, তালেবানরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

মস্কো সম্মেলনে তালেবান উপ-প্রধানমন্ত্রী আবদুল সালাম হানাফি বলেন, ‘আফগানিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা কোনো পক্ষের স্বার্থের জন্যই অনুকুল নয়। এবং এটি অতীতেও প্রমাণিত হয়েছে’।

ওদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিস্ফোরণের পর কাবুল এবং অন্যান্য কিছু প্রদেশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। তবে, ইসলামিক স্টেট তালেবান শাসনকে দুর্বল করার জন্য বোমা হামলা শুরু করেছে। তারাই হয়তো বোমা হামলা চালিয়ে বিদ্যুৎ লাইন ধ্বংস করেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য তালেবানকে যে পরামর্শ দিল পাকিস্তান

প্রকাশিত সময় : ০৮:৪৩:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অক্টোবর ২০২১

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বৃহস্পতিবার কাবুল সফরের সময় আফগানিস্তানের নতুন শাসক তালেবানদেরকে কীভাবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করা যায় সে ব্যাপারে সবক দিয়েছেন। এসময় পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রধানও তার সঙ্গে ছিলেন।

তালেবানরা তাদের শাসনের মাত্র নয় সপ্তাহের মাথায় এক নতুন সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক বিস্ফোরণে রাজধানী কাবুলের প্রধান বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং কাবুলের ৪৬ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন।

তালেবানরা গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের প্রাক্তন মার্কিন সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই তাদের ইসলামি শাসন ব্যবস্থার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও আর্থিক সহায়তা লাভের চেষ্টা করছে।

ইসলামাবাদে ফিরে আসার পর কুরেশি বলেন, ‘প্রতিবেশী এবং একজন শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু হিসেবে আমি তাদেরকে তাদের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে তা জানিয়েছি’।

কুরেশি জানান, বৃহস্পতিবার তার কাবুল সফরকালে তিনি তালেবানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ এবং তালেবানের মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এই সফরে তালেবানের সঙ্গে তিনি সকলের অংশগ্রহণে একটি সরকার গঠন, নারীর অধিকার এবং মেয়েদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে দমন করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যদি তারা এই বিষয়ে ন্যায্য অগ্রগতি দেখায়, তবে স্বীকৃতির অর্জন তাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে’। তিনি আরও জানান যে, স্বীকৃতির জন্য ‘পরিবেশ আরও ভাল হচ্ছে’।

১৯৯৬ সালে তালেবানের প্রথম শাসনকে স্বীকৃতি দেওয়া মাত্র তিনটি দেশের একটি পাকিস্তানকে এবারও ক্ষমতায় ফেরার পর তালেবানের ওপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে দেখা যাচ্ছে।

তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি কুরেশির সফরকে ‘খুব ভাল যোগাযোগ’ বলে মন্তব্য করেছেন। এই সফরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য এবং সীমান্ত পুনরায় চালু করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

আফগানিস্তানের স্পিন বোলদাকের দক্ষিণ সীমান্তে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আফগান ফলের প্রচুর চালান পঁচে গেছে। পাকিস্তান তার দেশে আফগানদের প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে।

কুরেশি বলেন, বাণিজ্য ও আফগানদের জন্য আরো উদার ভিসা ব্যবস্থা চালু করা হবে। হাজার হাজার আফগান প্রতিদিন দুই দেশের সীমান্ত পারাপার হয়।

তিনি আরও বলেন, তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল শীঘ্রই পাকিস্তান সফর করবে।

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিল যে, আফগানিস্তানের ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদেরকে ন্যাটো বাহিনী এবং ক্ষমতাচ্যুত পশ্চিমা সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে তাদের দুই দশকের যুদ্ধে সহায়তা করেছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা।

আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর কাতার ও উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পর তৃতীয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আফগানিস্তান সফর করলেন কুরেশি ।

বুধবার রাশিয়ার সরকার মস্কোতে চীন ও পাকিস্তান সহ ১০টি দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তালেবান প্রতিনিধিদের এক বৈঠকের আয়োজন করে।

রাশিয়া তালেবানকে চরমপন্থী ইসলামিক স্টেট যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছে এবং সবার অংশগ্রহণে একটি সরকার গঠন করার আহবান জানিয়েছে।

অন্যদিকে, তালেবানরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

মস্কো সম্মেলনে তালেবান উপ-প্রধানমন্ত্রী আবদুল সালাম হানাফি বলেন, ‘আফগানিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা কোনো পক্ষের স্বার্থের জন্যই অনুকুল নয়। এবং এটি অতীতেও প্রমাণিত হয়েছে’।

ওদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিস্ফোরণের পর কাবুল এবং অন্যান্য কিছু প্রদেশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। তবে, ইসলামিক স্টেট তালেবান শাসনকে দুর্বল করার জন্য বোমা হামলা শুরু করেছে। তারাই হয়তো বোমা হামলা চালিয়ে বিদ্যুৎ লাইন ধ্বংস করেছে।