বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উজ্জ্বল-পরিতোষের ফেসবুক পোস্টকে পুঁজি করে সক্রিয় হয় সৈকত

রংপুরের পীরগঞ্জে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা সৈকত মন্ডলের (২৪) একটি ফেসবুক পেইজ আছে। যার অনুসারী প্রায় তিন হাজার। প্রায়ই সেখানে ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট দিত সে। নিজেকে তুলে ধরার জন্য একটি দুর্বলতম সময়ের অপেক্ষায় ছিল সৈকত। আর সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার উজ্জ্বল ও পরিতোষের ধর্মীয় অনুভুতি নিয়ে ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্টের ঘটনাকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে সৈকত মন্ডল। আর তাকে এ কাজে সহায়তা করে রবিউল ইসলাম (৩৬)।

সহিংসতার আগে ‘এ মুহূর্তে গ্রাম পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সংবাদ, হিন্দুদের আক্রমণে এক মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে’ মর্মে উস্কানিমূলক পোস্ট দেয় সৈকত মন্ডল। সেই পোস্টের সূত্র ধরে যেখানে করা হয়েছে, তার কাছে অবস্থিত একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করেন রবিউল ইসলাম। তিনি ‘তৌহিদী জনতাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে হিন্দুদের প্রতিরোধের আহ্বান’ করেন। পরে নিজে একটি ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে হামলায় অংশ নেন। যা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল তারা দুজন।

রংপুরের পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার অন্যতম হোতা সৈকত মন্ডল ও সহযোগী রবিউল ইসলামকে টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। শনিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে দুর্বৃত্তরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি ঘরবাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই ঘটনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে রংপুরে পীরগঞ্জ থানায় তিনটি মামলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৩ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। তাদের দেওয়া তথ্যে হামলায় নেতৃত্বদান ও ঘটনা সংগঠিত করার সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানা গেলে জড়িতদের গ্রেপ্তারে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায়, সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৩ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল শুক্রবার (২২ অক্টোবর) রাতে টঙ্গী এলাকা থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে রংপুরের পীরগঞ্জে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা সৈকত মন্ডল ও রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানিয়েছে।

তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অরাজকতা তৈরির ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও মাইকিং করে হামলাকারীদের জড়ো করে বলে জানায়। সৈকত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারনকে উত্তেজিত করে তোলে। এছাড়া সে উক্ত হামলা ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। সে গ্রেপ্তারকৃত রবিউলকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করতে নির্দেশনা দিয়েছিল বলে জানায়। ঘটনা পরবর্তী সে আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেপ্তারকৃত সৈকত মন্ডল রংপুরের একটি কলেজের স্নাতকে অধ্যয়নরত। সে রংপুর পীরগঞ্জের হামলা ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা। সে বিভিন্ন সময়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর পোস্ট প্রদান ও শেয়ার করত।

ঠিক কি উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছিল সৈকত? এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, তার (সৈকত) ফেসবুক পেইজে ২৭০০-২৮০০ ফলোয়ার রয়েছে। তাকে সে কাজে লাগিয়েছে কেবল অনুসারী বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়বে বলেও মনে করেছিল সে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার রবিউল রংপুরের পীরগঞ্জের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্যতম উস্কানিদাতা। সে স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। হামলা ও অগ্নিসংযোগের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মাইকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও মিথ্যাচার করে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তোলে ও হামলায় অংশগ্রহণের জন্য জড়ো হতে বলে। সে মাইকিংয়ের দায়িত্ব তার আস্থাভাজনকে দিয়ে নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ ও নির্দেশনা দেয়। সে জানায় গ্রেপ্তার সৈকতের নির্দেশনায় ও প্ররোচনায় সে মাইকিং করাসহ হামলায় অংশ নেয়। এরপর সেও আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।-ভোরের কাগজ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

উজ্জ্বল-পরিতোষের ফেসবুক পোস্টকে পুঁজি করে সক্রিয় হয় সৈকত

প্রকাশিত সময় : ০৩:২৭:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১

রংপুরের পীরগঞ্জে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা সৈকত মন্ডলের (২৪) একটি ফেসবুক পেইজ আছে। যার অনুসারী প্রায় তিন হাজার। প্রায়ই সেখানে ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট দিত সে। নিজেকে তুলে ধরার জন্য একটি দুর্বলতম সময়ের অপেক্ষায় ছিল সৈকত। আর সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনায় ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার উজ্জ্বল ও পরিতোষের ধর্মীয় অনুভুতি নিয়ে ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্টের ঘটনাকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে সৈকত মন্ডল। আর তাকে এ কাজে সহায়তা করে রবিউল ইসলাম (৩৬)।

সহিংসতার আগে ‘এ মুহূর্তে গ্রাম পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া সংবাদ, হিন্দুদের আক্রমণে এক মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে’ মর্মে উস্কানিমূলক পোস্ট দেয় সৈকত মন্ডল। সেই পোস্টের সূত্র ধরে যেখানে করা হয়েছে, তার কাছে অবস্থিত একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করেন রবিউল ইসলাম। তিনি ‘তৌহিদী জনতাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে হিন্দুদের প্রতিরোধের আহ্বান’ করেন। পরে নিজে একটি ঢিবির ওপর দাঁড়িয়ে উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে হামলায় অংশ নেন। যা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল তারা দুজন।

রংপুরের পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার অন্যতম হোতা সৈকত মন্ডল ও সহযোগী রবিউল ইসলামকে টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। শনিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে দুর্বৃত্তরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি ঘরবাড়ি, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই ঘটনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে রংপুরে পীরগঞ্জ থানায় তিনটি মামলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-১৩ একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। তাদের দেওয়া তথ্যে হামলায় নেতৃত্বদান ও ঘটনা সংগঠিত করার সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানা গেলে জড়িতদের গ্রেপ্তারে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায়, সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৩ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল শুক্রবার (২২ অক্টোবর) রাতে টঙ্গী এলাকা থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে রংপুরের পীরগঞ্জে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা সৈকত মন্ডল ও রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানিয়েছে।

তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অরাজকতা তৈরির ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও মাইকিং করে হামলাকারীদের জড়ো করে বলে জানায়। সৈকত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারনকে উত্তেজিত করে তোলে। এছাড়া সে উক্ত হামলা ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। সে গ্রেপ্তারকৃত রবিউলকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করতে নির্দেশনা দিয়েছিল বলে জানায়। ঘটনা পরবর্তী সে আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেপ্তারকৃত সৈকত মন্ডল রংপুরের একটি কলেজের স্নাতকে অধ্যয়নরত। সে রংপুর পীরগঞ্জের হামলা ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা। সে বিভিন্ন সময়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর পোস্ট প্রদান ও শেয়ার করত।

ঠিক কি উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছিল সৈকত? এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, তার (সৈকত) ফেসবুক পেইজে ২৭০০-২৮০০ ফলোয়ার রয়েছে। তাকে সে কাজে লাগিয়েছে কেবল অনুসারী বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়বে বলেও মনে করেছিল সে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার রবিউল রংপুরের পীরগঞ্জের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অন্যতম উস্কানিদাতা। সে স্থানীয় একটি মসজিদের মুয়াজ্জিন। হামলা ও অগ্নিসংযোগের আগে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মাইকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও মিথ্যাচার করে গ্রামবাসীকে উত্তেজিত করে তোলে ও হামলায় অংশগ্রহণের জন্য জড়ো হতে বলে। সে মাইকিংয়ের দায়িত্ব তার আস্থাভাজনকে দিয়ে নিজে সশরীরে অংশগ্রহণ ও নির্দেশনা দেয়। সে জানায় গ্রেপ্তার সৈকতের নির্দেশনায় ও প্ররোচনায় সে মাইকিং করাসহ হামলায় অংশ নেয়। এরপর সেও আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।-ভোরের কাগজ