রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চীনে ফের করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা

আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিদ্যমান জিরো টলারেন্স নীতি থেকে সরে গেলে এশিয়ার পরাশক্তি চীনে মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিনে ছয় লাখ ৩০ হাজারের বেশি হতে পারে। সম্প্রতি দেশটির পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদদের নতুন গবেষণায় এমন শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে এরই মধ্যে ওই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়, অধিক কার্যকর টিকা এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসা ছাড়া ভ্রমণ বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার মাশুল চীন বহন করতে পারবে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন এবং ইসরায়েলের চলতি বছরের আগস্ট মাসে মহামারি করোনা ভাইরাসের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চীনের গণিতবিদরা ওই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তারা উল্লেখিত ওই দেশগুলোর মতো মহামারি নিয়ন্ত্রণ কৌশল চীন গ্রহণ করলে সেটির সম্ভাব্য রূপরেখা কেমন হতে পারে সেটিও তুলে ধরেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মহামারি কৌশল অবলম্বন করলে চীনের দৈনিক নতুন সংক্রমণ কমপক্ষে ছয় লাখ ৩৭ হাজার ১৫৫ জনে পৌঁছাতে পারে। এছাড়া ইংল্যান্ডের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হলে চীনে এই সংক্রমিতের সংখ্যা দুই লাখ ৭৫ হাজার ৭৯৩ এবং ফ্রান্সের মতো কৌশল অবলম্বন করা হলে চার লাখ ৫৪ হাজার ১৯৮ জন হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, এসব পূর্বানুমান বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের প্রকৃত সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরেছে; যা প্রায় নিশ্চিতভাবেই চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর একটি অসহনীয় বোঝা সৃষ্টি করবে।

তাদের মতে, আমাদের এই অনুসন্ধান একটি পরিষ্কার সতর্কবার্তা দিয়েছে। সেটি হলো০ পশ্চিমাদের মতো চীন এখনো পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার কৌশল নিতে নিতে প্রস্তুত নয়।

তারা সতর্ক করে বলছেন, এশিয়ার পরাশক্তি চীনের ব্যাপারে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের এই অনুমান একেবারে মৌলিক গাণিতিক হিসেব-নিকেশের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যদিও মহামারির বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আরও গবেষণা ও তথ্য-উপাত্তের মূল্যায়ন প্রয়োজন।

চীন কোভিড-১৯ এর জিরো টলারেন্স নীতি জারি রেখেছে। দেশটির সরকার বলেছে, স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের লাগাম টানায় গুরুত্বারোপ করছে। একই সঙ্গে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর কন্টাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশন এবং সংক্রমিতদের চিকিৎসায় জোর দিচ্ছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

রবিবার চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় নতুন করে ২৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন; যা আগের দিনের ২৫ জনের তুলনায় কিছুটা কম।

গত বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা ভাইরাসের নতুন একটি ধরন বি.১.১৫২৯ শনাক্ত হয়েছে। পরে গ্রিক বর্ণমালা অনুসারে যার নাম দেওয়া হয় ‘ওমিক্রন’। এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে ইসরায়েল, বেলজিয়াম, বোতসোয়ানা, হংকং, নেদারল্যান্ডস এবং যুক্তরাজ্যেও পাওয়া গেছে ওমিক্রনে সংক্রমিত রোগীর সন্ধান।

 

 

ব্রিটেনের সরকারি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে, নতুন শনাক্ত হওয়া রূপান্তরিত ধরনটির স্পাইক প্রোটিন মূল করোনা ভাইরাসের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। ফলে, মূল করোনা ভাইরাস থেকে এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনেক বেশি। এমন শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।

সূত্র : রয়টার্স

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

চীনে ফের করোনার ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা

প্রকাশিত সময় : ০১:০৭:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ নভেম্বর ২০২১

আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিদ্যমান জিরো টলারেন্স নীতি থেকে সরে গেলে এশিয়ার পরাশক্তি চীনে মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিনে ছয় লাখ ৩০ হাজারের বেশি হতে পারে। সম্প্রতি দেশটির পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদদের নতুন গবেষণায় এমন শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।

চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে এরই মধ্যে ওই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়, অধিক কার্যকর টিকা এবং নির্দিষ্ট চিকিৎসা ছাড়া ভ্রমণ বিধি-নিষেধ তুলে নেওয়ার মাশুল চীন বহন করতে পারবে না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন এবং ইসরায়েলের চলতি বছরের আগস্ট মাসে মহামারি করোনা ভাইরাসের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চীনের গণিতবিদরা ওই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তারা উল্লেখিত ওই দেশগুলোর মতো মহামারি নিয়ন্ত্রণ কৌশল চীন গ্রহণ করলে সেটির সম্ভাব্য রূপরেখা কেমন হতে পারে সেটিও তুলে ধরেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মহামারি কৌশল অবলম্বন করলে চীনের দৈনিক নতুন সংক্রমণ কমপক্ষে ছয় লাখ ৩৭ হাজার ১৫৫ জনে পৌঁছাতে পারে। এছাড়া ইংল্যান্ডের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হলে চীনে এই সংক্রমিতের সংখ্যা দুই লাখ ৭৫ হাজার ৭৯৩ এবং ফ্রান্সের মতো কৌশল অবলম্বন করা হলে চার লাখ ৫৪ হাজার ১৯৮ জন হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, এসব পূর্বানুমান বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের প্রকৃত সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরেছে; যা প্রায় নিশ্চিতভাবেই চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর একটি অসহনীয় বোঝা সৃষ্টি করবে।

তাদের মতে, আমাদের এই অনুসন্ধান একটি পরিষ্কার সতর্কবার্তা দিয়েছে। সেটি হলো০ পশ্চিমাদের মতো চীন এখনো পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ার কৌশল নিতে নিতে প্রস্তুত নয়।

তারা সতর্ক করে বলছেন, এশিয়ার পরাশক্তি চীনের ব্যাপারে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের এই অনুমান একেবারে মৌলিক গাণিতিক হিসেব-নিকেশের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যদিও মহামারির বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আরও গবেষণা ও তথ্য-উপাত্তের মূল্যায়ন প্রয়োজন।

চীন কোভিড-১৯ এর জিরো টলারেন্স নীতি জারি রেখেছে। দেশটির সরকার বলেছে, স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের লাগাম টানায় গুরুত্বারোপ করছে। একই সঙ্গে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর কন্টাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশন এবং সংক্রমিতদের চিকিৎসায় জোর দিচ্ছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

রবিবার চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় নতুন করে ২৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন; যা আগের দিনের ২৫ জনের তুলনায় কিছুটা কম।

গত বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা ভাইরাসের নতুন একটি ধরন বি.১.১৫২৯ শনাক্ত হয়েছে। পরে গ্রিক বর্ণমালা অনুসারে যার নাম দেওয়া হয় ‘ওমিক্রন’। এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে ইসরায়েল, বেলজিয়াম, বোতসোয়ানা, হংকং, নেদারল্যান্ডস এবং যুক্তরাজ্যেও পাওয়া গেছে ওমিক্রনে সংক্রমিত রোগীর সন্ধান।

 

 

ব্রিটেনের সরকারি স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে, নতুন শনাক্ত হওয়া রূপান্তরিত ধরনটির স্পাইক প্রোটিন মূল করোনা ভাইরাসের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। ফলে, মূল করোনা ভাইরাস থেকে এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অনেক বেশি। এমন শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।

সূত্র : রয়টার্স