রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘ভুল’ করে শ্রমিক হত্যা; নাগাল্যান্ডে সহিংসতা বাড়ছে

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য নাগাল্যান্ডে জঙ্গি ভেবে বেসামরিক নাগরিকের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় ১৪ জনের মৃত্যুর পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে ওই অঞ্চলে। এদিকে এ ঘটনায় নাগাল্যান্ড রাজ্য পুলিশ বাহিনী থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করেছে। হত্যা মামলা দায়ের করার পর এটি পুলিশ স্টেশনের অপরাধ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনার পর বাতিল করা হয়েছে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আয়োজন করা নাগাল্যাণ্ডের সবচেয়ে বড় হর্নবিল উত্সব।

সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। গুজব ছড়ানো এড়াতে মোবাইল ইন্টারনেট ও এসএমএস সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।

এর আগে রোববার দ্বিতীয়বারের মত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়েছেন।

বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় বাহিনীর একটি ক্যাম্পের চারপাশের এলাকায় আগুন দিয়েছে এবং পাথর ছুঁড়েছে বলে জানিয়েছেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর বাস। এসব গোষ্ঠীর অনেকগুলোই জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এ জন্য সন্ত্রাশবিরোধী অভিযান চলে প্রায়ই।

তবে এ ধরনের অভিযানে সেখানে ভুল করে সাধারণ মানুষকে নিশানা করার অভিযোগ প্রায়ই করে থাকে নাগাল্যান্ডের লোকজন।

শনিবারেও এমনই এক ভুল অভিযানে ১৪ জন সাধারণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নাগাল্যান্ডে।

স্থানীয়রা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরদিন রোববার মন জেলায় সাধারণ মানুষেরা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে।

ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, “গ্রামে গুলির ঘটনার খবর ছড়িয়ে যেতেই শত শত আদিবাসী সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাম্প ঘিরে ফেলে। তারা আসাম রাইফেলস বাহিনীর গাড়ি পোড়ায় এবং সশস্ত্র সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।”

এরপর আসাম রাইফেলস পাল্টা আক্রমণ করে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের হামলায় ৮ বেসামরিক নাগরিকসহ নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যও নিহত হয় বলে জানান তিনি।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রোববার নাগাল্যান্ডে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে শ্রমিক হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘটনাটির তদন্ত দাবি করেছেন। নিহতদের পরিবারের জন্য আন্তরিক সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তিনি।

ঘটনাটি এরই মধ্যে দেশ জুড়েই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেছেন, হৃদয়বিদারক ঘটনা। ভারত সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

‘ভুল’ করে শ্রমিক হত্যা; নাগাল্যান্ডে সহিংসতা বাড়ছে

প্রকাশিত সময় : ১০:০১:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২১

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য নাগাল্যান্ডে জঙ্গি ভেবে বেসামরিক নাগরিকের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় ১৪ জনের মৃত্যুর পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে ওই অঞ্চলে। এদিকে এ ঘটনায় নাগাল্যান্ড রাজ্য পুলিশ বাহিনী থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করেছে। হত্যা মামলা দায়ের করার পর এটি পুলিশ স্টেশনের অপরাধ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনার পর বাতিল করা হয়েছে প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আয়োজন করা নাগাল্যাণ্ডের সবচেয়ে বড় হর্নবিল উত্সব।

সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। গুজব ছড়ানো এড়াতে মোবাইল ইন্টারনেট ও এসএমএস সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।

এর আগে রোববার দ্বিতীয়বারের মত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়েছেন।

বিক্ষোভকারীরা ভারতীয় বাহিনীর একটি ক্যাম্পের চারপাশের এলাকায় আগুন দিয়েছে এবং পাথর ছুঁড়েছে বলে জানিয়েছেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর বাস। এসব গোষ্ঠীর অনেকগুলোই জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এ জন্য সন্ত্রাশবিরোধী অভিযান চলে প্রায়ই।

তবে এ ধরনের অভিযানে সেখানে ভুল করে সাধারণ মানুষকে নিশানা করার অভিযোগ প্রায়ই করে থাকে নাগাল্যান্ডের লোকজন।

শনিবারেও এমনই এক ভুল অভিযানে ১৪ জন সাধারণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে নাগাল্যান্ডে।

স্থানীয়রা ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরদিন রোববার মন জেলায় সাধারণ মানুষেরা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে।

ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, “গ্রামে গুলির ঘটনার খবর ছড়িয়ে যেতেই শত শত আদিবাসী সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাম্প ঘিরে ফেলে। তারা আসাম রাইফেলস বাহিনীর গাড়ি পোড়ায় এবং সশস্ত্র সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।”

এরপর আসাম রাইফেলস পাল্টা আক্রমণ করে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের হামলায় ৮ বেসামরিক নাগরিকসহ নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্যও নিহত হয় বলে জানান তিনি।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রোববার নাগাল্যান্ডে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে শ্রমিক হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘটনাটির তদন্ত দাবি করেছেন। নিহতদের পরিবারের জন্য আন্তরিক সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তিনি।

ঘটনাটি এরই মধ্যে দেশ জুড়েই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেছেন, হৃদয়বিদারক ঘটনা। ভারত সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।