বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের বর্জ্যে শত শত একর জমি ৪ বছর অনাবাদি

রোহিঙ্গাদের বর্জ্যেরে কারণে চাষাবাদ হচ্ছে না কয়েকশত একর জমি। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে জমির মালিকরা কোন ধরনের চাষাবাদ করতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তারা। ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন সুরাহা হয়নি। বরং রোহিঙ্গাদের বর্জ্য আরো নতুন নতুন জমিতে গিয়ে পড়ছে। এছাড়া বারণ করাতে স্থানীয়দের উপর নির্যাতন করছে রোহিঙ্গারা। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে স্থানীয়রা। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী পানবাজার এলাকার শরীফ আহামদ (৬০) জানান, আমার মূল পেশা কৃষিকাজ। বাপ-দাদার আমল থেকে কৃষিকাজ করে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু ২০১৭ সালে ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে আমি সহ অনেক স্থানীয় মানুষের জন্য গলার কাটা হয়ে গেছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা নিজেদের ঘরে রান্না করে খাবার তৈরি করে দিয়েছি। রাতে থাকতে দিয়েছি, নিজেদের ঘরের জিনিস পত্র দিয়ে তাদের ঘর তৈরি করে দিয়েছি। কিন্তু এখন তাদের ফেলা বর্জ্য এবং ব্যবহৃত মলমূত্র আমাদের জমিতে এসে পড়ছে। কয়েক বছর ধরে এই অসহনীয় অবস্থা।ফলে আমাদের সেসব জমিতে আর চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। আমার ব্যাক্তিগত অন্তত ৫ একর ,প্রতিবেশী, হানিফের ৮ একর সহ অনেক মানুষের জমিতে আর চাষাবাদ করা যাচ্ছেনা। সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেলা সেই মলমূত্র থেকে উৎকট গন্ধ আসে এতে ঘরেই বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘরে ছেলেমেয়েরা প্রায় সময় অসুস্থ থাকে। বিষয়টি গত ৩ বছর অন্তত ৫০ বার জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। তবে এখনো কোন কাজ হয়নি। কেউ কথাও বলেনা। এখন চিন্তা করছি ঘর বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাব। এ ব্যাপারে উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, আমার জানা মতে অন্তুত ১৫০ একর জমিতে রোহিঙ্গা বর্জ্য ফেলার কারনে স্থানীয় মানুষ তাদের নিজস্ব জমিতে চাষাবাদ করতে পারছে না। এছাড়া প্রায় ১০০ একর জমি রোহিঙ্গাদের জন্য সুরক্ষা কর্মসূচী বা কাটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে সেখানে ঢুকে গেছে। ফলে সেই জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।

এক কথায় এখানে স্থানীয়রাই এখন পরবাসি। চেয়ারম্যান আরও জানান, আমার নিজেরও ৩ একর ৬০ শতাংশ জমিও সেখানে পড়েছে। অনেক জায়গায় অভিযোগ দিয়েছি কেউ কোন কথাই বলেনা। উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমানুল হক বাবুল জানান,রোহিঙ্গাদের কারনে অনেক স্থানীয় মানুষ চাষাবাদ করতে পারছেনা এটা সত্যি। অনেকে আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে,আমরা শুনতে পারি কিন্তু কিছুই করার থাকেনা। এর চেয়ে দূর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হতে পারে না। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন উখিয়া উপজেলার সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন,রোহিঙ্গা সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানবিক কারনে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখন পুরু উখিয়া সহ কক্সবাজারের জন্য অভিশাপ হয়ে উঠেছে। মলমুত্র ফেলে,কবরস্থান করে,অথবা প্রতিদিন নতুন নতুন ঘর করে স্থানীয়দের জমি দখল করছে রোহিঙ্গারা। ফলে প্রতিনিয়ত অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা। আর রোহিঙ্গাদের বিচার কেউ করেনা।

কোন অভিযোগও কেউ গ্রহন করেনা। সবাই এডিয়ে চলে যায়। এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নেজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন,অনেক জায়গায় রোহিঙ্গাদের কারনে স্থানীয়দের বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে এটা সত্য। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় স্থানীয়দের জন্য সহায়তা থাকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

রোহিঙ্গাদের বর্জ্যে শত শত একর জমি ৪ বছর অনাবাদি

প্রকাশিত সময় : ০৯:৩০:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২১

রোহিঙ্গাদের বর্জ্যেরে কারণে চাষাবাদ হচ্ছে না কয়েকশত একর জমি। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে জমির মালিকরা কোন ধরনের চাষাবাদ করতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তারা। ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন সুরাহা হয়নি। বরং রোহিঙ্গাদের বর্জ্য আরো নতুন নতুন জমিতে গিয়ে পড়ছে। এছাড়া বারণ করাতে স্থানীয়দের উপর নির্যাতন করছে রোহিঙ্গারা। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে স্থানীয়রা। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী পানবাজার এলাকার শরীফ আহামদ (৬০) জানান, আমার মূল পেশা কৃষিকাজ। বাপ-দাদার আমল থেকে কৃষিকাজ করে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু ২০১৭ সালে ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে আমি সহ অনেক স্থানীয় মানুষের জন্য গলার কাটা হয়ে গেছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা নিজেদের ঘরে রান্না করে খাবার তৈরি করে দিয়েছি। রাতে থাকতে দিয়েছি, নিজেদের ঘরের জিনিস পত্র দিয়ে তাদের ঘর তৈরি করে দিয়েছি। কিন্তু এখন তাদের ফেলা বর্জ্য এবং ব্যবহৃত মলমূত্র আমাদের জমিতে এসে পড়ছে। কয়েক বছর ধরে এই অসহনীয় অবস্থা।ফলে আমাদের সেসব জমিতে আর চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। আমার ব্যাক্তিগত অন্তত ৫ একর ,প্রতিবেশী, হানিফের ৮ একর সহ অনেক মানুষের জমিতে আর চাষাবাদ করা যাচ্ছেনা। সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেলা সেই মলমূত্র থেকে উৎকট গন্ধ আসে এতে ঘরেই বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘরে ছেলেমেয়েরা প্রায় সময় অসুস্থ থাকে। বিষয়টি গত ৩ বছর অন্তত ৫০ বার জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। তবে এখনো কোন কাজ হয়নি। কেউ কথাও বলেনা। এখন চিন্তা করছি ঘর বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাব। এ ব্যাপারে উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, আমার জানা মতে অন্তুত ১৫০ একর জমিতে রোহিঙ্গা বর্জ্য ফেলার কারনে স্থানীয় মানুষ তাদের নিজস্ব জমিতে চাষাবাদ করতে পারছে না। এছাড়া প্রায় ১০০ একর জমি রোহিঙ্গাদের জন্য সুরক্ষা কর্মসূচী বা কাটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে সেখানে ঢুকে গেছে। ফলে সেই জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।

এক কথায় এখানে স্থানীয়রাই এখন পরবাসি। চেয়ারম্যান আরও জানান, আমার নিজেরও ৩ একর ৬০ শতাংশ জমিও সেখানে পড়েছে। অনেক জায়গায় অভিযোগ দিয়েছি কেউ কোন কথাই বলেনা। উখিয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমানুল হক বাবুল জানান,রোহিঙ্গাদের কারনে অনেক স্থানীয় মানুষ চাষাবাদ করতে পারছেনা এটা সত্যি। অনেকে আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসে,আমরা শুনতে পারি কিন্তু কিছুই করার থাকেনা। এর চেয়ে দূর্ভাগ্যজনক আর কিছুই হতে পারে না। সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন উখিয়া উপজেলার সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন,রোহিঙ্গা সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মানবিক কারনে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখন পুরু উখিয়া সহ কক্সবাজারের জন্য অভিশাপ হয়ে উঠেছে। মলমুত্র ফেলে,কবরস্থান করে,অথবা প্রতিদিন নতুন নতুন ঘর করে স্থানীয়দের জমি দখল করছে রোহিঙ্গারা। ফলে প্রতিনিয়ত অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা। আর রোহিঙ্গাদের বিচার কেউ করেনা।

কোন অভিযোগও কেউ গ্রহন করেনা। সবাই এডিয়ে চলে যায়। এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নেজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন,অনেক জায়গায় রোহিঙ্গাদের কারনে স্থানীয়দের বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে এটা সত্য। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় স্থানীয়দের জন্য সহায়তা থাকে।