মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

শীর্ষ দুই নেতাকে পরিবর্তন করেও ভাবমূর্তি ফেরেনি ছাত্রলীগের। সংগঠনের কমিটি গঠনে অর্থ লেনদেন, অন্য দলের নেতাকর্মীদের পদ দেওয়া, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ আগের মতোই আছে।এমনই অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ১৫ নেতা। এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার সংগঠনটির ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে।

অনিয়ম, চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। দুজনকে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, কভিড মহামারিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মানবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ প্রশংসিত হলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হেঁটেছে বিতর্কিত পথেই। সিলেট, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগসহ কয়েকটি জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। সংগঠন পরিচালনায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও আছে।

ছাত্রলীগের সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ অভিযোগ, সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গঠনতন্ত্র মানছেন না। তাঁরা নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছেন। সারা দেশে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধারনা জন্মেছে, টাকা ছাড়া বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোনো কমিটি দেন না।

ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তাঁরা যেন রাজপুত্র হয়ে যান। আগে হলের এক রুমে আটজন থাকতেন। পদ পাওয়ার পর তাঁরা তিন হাজার বর্গফুটের বাসায় থাকেন, গাড়ি হাঁকান। তাঁরা এখন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছেন। দুর্নীতিতে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে শোভন-রাব্বানীকে ছাড়িয়ে গেছেন।

গত বছরের অক্টোবরে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর সেখানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা কমিটি গঠনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ তোলেন।

সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে জামায়াত পরিবারের সদস্যকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার অভিযোগ উঠে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও আসে। একই ধরনের অভিযোগ উঠে আরো কয়েকটি জেলায়।

ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বলেন, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সিলেট, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।

ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। গঠনতন্ত্র অনুসারে দুই বছর পর পর ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরে সংগঠনের সম্মেলন হয়নি। সংগঠনটির নেতা হতে চাইলে বয়স ২৭ বছরের মধ্যে হতে হয়। গত সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২৮ বছর পর্যন্ত বয়সসীমা শিথিল করেন।

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহান বলেন, নিয়মিত সম্মেলন না হলে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। সংগঠন গতিশীল রাখতে দুই বছর পর পর সম্মেলনের বিকল্প নেই।

৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। আজ সকালে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটা হবে। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি গ্রহণে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সভা হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবেও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বসেননি সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের হাতে সম্মেলন আটকে রাখার সুযোগ নেই। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দেন।’

পদ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, ‘অনেকে কমিটিতে পদ না পাওয়ায় এসব অভিযোগ তুলে থাকেন। পদপ্রত্যাশী শত শত নেতাকর্মীর মধ্য থেকে দু-একজনকে আমাদের বেছে নিতে হয়।’

এ বিষয়ে জানতে সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ছাত্রলীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত সময় : ০৪:২৪:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ জানুয়ারী ২০২২

শীর্ষ দুই নেতাকে পরিবর্তন করেও ভাবমূর্তি ফেরেনি ছাত্রলীগের। সংগঠনের কমিটি গঠনে অর্থ লেনদেন, অন্য দলের নেতাকর্মীদের পদ দেওয়া, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ আগের মতোই আছে।এমনই অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ১৫ নেতা। এ অবস্থায় আজ মঙ্গলবার সংগঠনটির ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন হচ্ছে।

অনিয়ম, চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। দুজনকে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, কভিড মহামারিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মানবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ প্রশংসিত হলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হেঁটেছে বিতর্কিত পথেই। সিলেট, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগসহ কয়েকটি জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। সংগঠন পরিচালনায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও আছে।

ছাত্রলীগের সহসভাপতি সৈয়দ আরিফ অভিযোগ, সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গঠনতন্ত্র মানছেন না। তাঁরা নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেছেন। সারা দেশে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধারনা জন্মেছে, টাকা ছাড়া বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোনো কমিটি দেন না।

ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তাঁরা যেন রাজপুত্র হয়ে যান। আগে হলের এক রুমে আটজন থাকতেন। পদ পাওয়ার পর তাঁরা তিন হাজার বর্গফুটের বাসায় থাকেন, গাড়ি হাঁকান। তাঁরা এখন ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছেন। দুর্নীতিতে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে শোভন-রাব্বানীকে ছাড়িয়ে গেছেন।

গত বছরের অক্টোবরে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর সেখানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা কমিটি গঠনে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ তোলেন।

সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে জামায়াত পরিবারের সদস্যকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার অভিযোগ উঠে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও আসে। একই ধরনের অভিযোগ উঠে আরো কয়েকটি জেলায়।

ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বলেন, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সিলেট, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে।

ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। গঠনতন্ত্র অনুসারে দুই বছর পর পর ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরে সংগঠনের সম্মেলন হয়নি। সংগঠনটির নেতা হতে চাইলে বয়স ২৭ বছরের মধ্যে হতে হয়। গত সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ২৮ বছর পর্যন্ত বয়সসীমা শিথিল করেন।

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহান বলেন, নিয়মিত সম্মেলন না হলে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। সংগঠন গতিশীল রাখতে দুই বছর পর পর সম্মেলনের বিকল্প নেই।

৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। আজ সকালে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটা হবে। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি গ্রহণে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সভা হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবেও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বসেননি সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের হাতে সম্মেলন আটকে রাখার সুযোগ নেই। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দেন।’

পদ বাণিজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, ‘অনেকে কমিটিতে পদ না পাওয়ায় এসব অভিযোগ তুলে থাকেন। পদপ্রত্যাশী শত শত নেতাকর্মীর মধ্য থেকে দু-একজনকে আমাদের বেছে নিতে হয়।’

এ বিষয়ে জানতে সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি