সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিনা অভিযোগে ৩ বছর কারাবাস শেষে মুক্ত সৌদি রাজকন্যা

বিনা অভিযোগে তিন বছর কারাভোগের পর সৌদি আরবের রাজকন্যা সমা বিনতে সৌ ও তার মেয়ে সুহৌদকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ রাজধানী রিয়াদের একটি কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দিয়েছে বলে শনিবার একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে।

নারী অধিকার এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসা সৌদি রাজ-পরিবারের সদস্য ৫৭ বছর বয়সী বাসমা বিনতে সৌদকে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে আটকে রাখা হয়েছিল।

২০২০ সালের এপ্রিলে সৌদি বাদশাহ সালমান এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে মুক্তির অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। মানবাধিকার সংস্থা এএলকিউএসটি ফর হিউম্যান রাইটস এক টুইটে বলেছে, ‘বাসমা বিনতে সৌদ আল সৌদ ও তার মেয়ে সুহৌদকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’

দেশটির এই মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার দরকার হলেও তা দিতে অস্বীকার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। আটকে রাখার এই সময়ে তার বিরুদ্ধে কোনও ধরনের অভিযোগই আনা হয়নি।

তবে বাসমার মুক্তির বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের মন্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি।

সৌদি এই রাজকন্যার পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, চিকিৎসার জন্য পূর্ব নির্ধারিত সুইজারল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ২০১৯ সালের মার্চে রাজকন্যা বাসমাহকে গ্রেফতার করা হয়। তবে তিনি কী ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন তা কখনই প্রকাশ করা হয়নি।

২০১৭ সালের জুনে বাদশাহ সালমান প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর দেশটিতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারযজ্ঞ দেখভাল করছেন। সেই সময় বাদশাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরী মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিয়োগ দেন বাদশাহ সালমান।

ক্রাউন প্রিন্স নিযুক্ত হওয়ার পর নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে এক দশকের বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং নারীদের ওপর পুরুষদের কর্তৃত্বমূলক তথাকথিত ‘অভিভাবকত্ব’র বিধি-বিধান শিথিলের উদ্যোগ নেন পশ্চিমা গণমাধ্যমে এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমান।

একই সঙ্গে সৌদি কর্তৃপক্ষ ভিন্নমতাবলম্বী, এমনকি রাজ-সিংহাসনে এমবিএসের সম্ভাব্য বিরোধীদেরও দমন অভিযান শুরু করে। দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানের নামে ইসলামিক পণ্ডিত থেকে শুরু করে নারী অধিকার কর্মী ও রাজপরিবারের সদস্যরাও এই অভিযানের লক্ষ্যবস্তু হন।

রাজকন্যা বাসমাহকে রিয়াদের আল-হাইর কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল; যেখানে আরও অনেক রাজনৈতিক বন্দী রয়েছেন। ২০২০ সালে জাতিসংঘের কাছে লেখা এক চিঠিতে তার পরিবার জানায়, নিপীড়ন ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার রেকর্ডের কারণে সম্ভবত তাকে আটকে রাখা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বিনা অভিযোগে ৩ বছর কারাবাস শেষে মুক্ত সৌদি রাজকন্যা

প্রকাশিত সময় : ০৩:১৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২২

বিনা অভিযোগে তিন বছর কারাভোগের পর সৌদি আরবের রাজকন্যা সমা বিনতে সৌ ও তার মেয়ে সুহৌদকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ রাজধানী রিয়াদের একটি কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দিয়েছে বলে শনিবার একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে।

নারী অধিকার এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে আসা সৌদি রাজ-পরিবারের সদস্য ৫৭ বছর বয়সী বাসমা বিনতে সৌদকে ২০১৯ সালের মার্চ থেকে আটকে রাখা হয়েছিল।

২০২০ সালের এপ্রিলে সৌদি বাদশাহ সালমান এবং ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কাছে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে মুক্তির অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। মানবাধিকার সংস্থা এএলকিউএসটি ফর হিউম্যান রাইটস এক টুইটে বলেছে, ‘বাসমা বিনতে সৌদ আল সৌদ ও তার মেয়ে সুহৌদকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।’

দেশটির এই মানবাধিকার সংস্থা বলেছে, শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবার দরকার হলেও তা দিতে অস্বীকার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। আটকে রাখার এই সময়ে তার বিরুদ্ধে কোনও ধরনের অভিযোগই আনা হয়নি।

তবে বাসমার মুক্তির বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের মন্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি।

সৌদি এই রাজকন্যার পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, চিকিৎসার জন্য পূর্ব নির্ধারিত সুইজারল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ২০১৯ সালের মার্চে রাজকন্যা বাসমাহকে গ্রেফতার করা হয়। তবে তিনি কী ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন তা কখনই প্রকাশ করা হয়নি।

২০১৭ সালের জুনে বাদশাহ সালমান প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর দেশটিতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারযজ্ঞ দেখভাল করছেন। সেই সময় বাদশাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরী মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিয়োগ দেন বাদশাহ সালমান।

ক্রাউন প্রিন্স নিযুক্ত হওয়ার পর নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে এক দশকের বেশি সময়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং নারীদের ওপর পুরুষদের কর্তৃত্বমূলক তথাকথিত ‘অভিভাবকত্ব’র বিধি-বিধান শিথিলের উদ্যোগ নেন পশ্চিমা গণমাধ্যমে এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমান।

একই সঙ্গে সৌদি কর্তৃপক্ষ ভিন্নমতাবলম্বী, এমনকি রাজ-সিংহাসনে এমবিএসের সম্ভাব্য বিরোধীদেরও দমন অভিযান শুরু করে। দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানের নামে ইসলামিক পণ্ডিত থেকে শুরু করে নারী অধিকার কর্মী ও রাজপরিবারের সদস্যরাও এই অভিযানের লক্ষ্যবস্তু হন।

রাজকন্যা বাসমাহকে রিয়াদের আল-হাইর কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল; যেখানে আরও অনেক রাজনৈতিক বন্দী রয়েছেন। ২০২০ সালে জাতিসংঘের কাছে লেখা এক চিঠিতে তার পরিবার জানায়, নিপীড়ন ও মানবাধিকারের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার রেকর্ডের কারণে সম্ভবত তাকে আটকে রাখা হয়েছে।

সূত্র: বিবিসি