মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফরহাদ আসার পর হত্যা করা হয় শিমুকে

অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে শুধুমাত্র তার স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল একা শ্বাসরোধ করে হত্যা করেননি। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন নোবেলের বন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদও। নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি নোবেলকে সাহায্য করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকার দুই বিচারিক হাকিমের আলাদা খাস কামরায় তথ্যগুলো জানিয়ে নোবেল ও ফরহাদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এদিন নোবেলের স্বীকারোক্তি নেন বিচারিক মো. সাইফুল ইসলাম ও ফরহাদের জবানবন্দি নেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মিশকাত সুকরানা। দাম্পত্য কলহের সূত্র ধরেই এ খুন, এমনটাই তাদের স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে।

মামলাটির তদন্তের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফোনে কথা বলা নিয়ে নোবেল ও তার স্ত্রী অভিনেত্রী শিমুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হতো। শিমু কার সঙ্গে কথা বলতেন তা নিয়ে প্রতিনিয়ত সন্দেহ প্রকাশ করতেন নোবেল। ঘটনার দিন সকালে অভিনেত্রী শিমু ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কথা বলা শেষ করলে হঠাৎ স্ত্রীর ফোন দেখতে চান নোবেল। পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে এ নিয়েই ঝগড়া শুরু হয়। তখন বাসায় নোবেলের বন্ধু ফরহাদও উপস্থিত ছিলেন।

যদিও গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তিনি একা হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। আর মরদেহ গুম করতে বন্ধু ফরহাদকে ডেকে আনেন। যদিও জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, নোবেল একা নয়, হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ফরহাদ। দুই বন্ধু মিলেই অভিনেত্রী শিমুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে নোবেলের ডাকে বাসায় আসেন ফরহাদ। ফরহাদ বাসায় ঢুকার সময় দরজা খুলে দেন শিমু নিজেই। ফরহাদ আসার পর তারা সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে চা খান। এর ঠিক ৩০ মিনিট পর ফোনে কথা বলা নিয়ে শিমু ও নোবেলের ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। প্রথমে ফরহাদ ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। তবে পরবর্তীকালে নোবেলের ডাকে শিমুকে শ্বাসরোধ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হোন।

উল্লেখ্য, নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের পর দুই বন্ধু মিলে দুইটি বস্তায় অভিনেত্রীর মরদেহ ঢুকান। পরে বাসার দারোয়ানকে কাজে পাঠিয়ে দুই বন্ধু মিলে মরদেহ গাড়ির পিছনে নিয়ে বেরিয়ে যান।

এতে আরও জানা যায়, মরদেহ গুমের জন্য প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। যদিও সেখানে উপযুক্ত জায়গা না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। সন্ধ্যায় আবার তারা লাশ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের দিকে যান। আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজ থেকে ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর মরদেহ ফেলে চলে যান তারা।

পরে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ থেকে শিমুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে গ্রেফতার করা হয় শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল (৪৮) ও তার বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে (৪৭)।

মামলার তদন্তের প্রসঙ্গে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস ছালাম বলেছেন, মামলাটির প্রতিটি বিষয়ে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখছি। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। নোবেল ও ফরহাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার পরবর্তী তদন্ত চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ফরহাদ আসার পর হত্যা করা হয় শিমুকে

প্রকাশিত সময় : ১২:২৩:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জানুয়ারী ২০২২

অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমুকে শুধুমাত্র তার স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল একা শ্বাসরোধ করে হত্যা করেননি। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন নোবেলের বন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদও। নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি নোবেলকে সাহায্য করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকার দুই বিচারিক হাকিমের আলাদা খাস কামরায় তথ্যগুলো জানিয়ে নোবেল ও ফরহাদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এদিন নোবেলের স্বীকারোক্তি নেন বিচারিক মো. সাইফুল ইসলাম ও ফরহাদের জবানবন্দি নেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মিশকাত সুকরানা। দাম্পত্য কলহের সূত্র ধরেই এ খুন, এমনটাই তাদের স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে।

মামলাটির তদন্তের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফোনে কথা বলা নিয়ে নোবেল ও তার স্ত্রী অভিনেত্রী শিমুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হতো। শিমু কার সঙ্গে কথা বলতেন তা নিয়ে প্রতিনিয়ত সন্দেহ প্রকাশ করতেন নোবেল। ঘটনার দিন সকালে অভিনেত্রী শিমু ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কথা বলা শেষ করলে হঠাৎ স্ত্রীর ফোন দেখতে চান নোবেল। পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে এ নিয়েই ঝগড়া শুরু হয়। তখন বাসায় নোবেলের বন্ধু ফরহাদও উপস্থিত ছিলেন।

যদিও গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নোবেল পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তিনি একা হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। আর মরদেহ গুম করতে বন্ধু ফরহাদকে ডেকে আনেন। যদিও জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, নোবেল একা নয়, হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ফরহাদ। দুই বন্ধু মিলেই অভিনেত্রী শিমুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে নোবেলের ডাকে বাসায় আসেন ফরহাদ। ফরহাদ বাসায় ঢুকার সময় দরজা খুলে দেন শিমু নিজেই। ফরহাদ আসার পর তারা সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে চা খান। এর ঠিক ৩০ মিনিট পর ফোনে কথা বলা নিয়ে শিমু ও নোবেলের ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। প্রথমে ফরহাদ ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। তবে পরবর্তীকালে নোবেলের ডাকে শিমুকে শ্বাসরোধ করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত হোন।

উল্লেখ্য, নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের পর দুই বন্ধু মিলে দুইটি বস্তায় অভিনেত্রীর মরদেহ ঢুকান। পরে বাসার দারোয়ানকে কাজে পাঠিয়ে দুই বন্ধু মিলে মরদেহ গাড়ির পিছনে নিয়ে বেরিয়ে যান।

এতে আরও জানা যায়, মরদেহ গুমের জন্য প্রথমে নোবেল ও ফরহাদ মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন। যদিও সেখানে উপযুক্ত জায়গা না পেয়ে তারা আবার বাসায় ফেরেন। সন্ধ্যায় আবার তারা লাশ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের দিকে যান। আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজ থেকে ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর মরদেহ ফেলে চলে যান তারা।

পরে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জ থেকে শিমুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে গ্রেফতার করা হয় শিমুর স্বামী শাখাওয়াত আলীম নোবেল (৪৮) ও তার বাল্যবন্ধু এস এম ওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদকে (৪৭)।

মামলার তদন্তের প্রসঙ্গে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস ছালাম বলেছেন, মামলাটির প্রতিটি বিষয়ে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখছি। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। নোবেল ও ফরহাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার পরবর্তী তদন্ত চলছে।