সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুই মেয়েকে বিক্রির পর নিজের কিডনিও বিক্রি করলেন আফগান মা

আফগানিস্তানে ক্ষুধা এখন নিত্যদিনের সমস্যা। প্রতিদিনই নতুন নতুন উপায়ে ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন দেশটির প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা। অভাবের তাড়নায় নিজের সন্তানকে বিক্রি করার ঘটনাও এখন অহরঅহ। এখন আবার অর্থ পেতে, নিজের কিডনিও বিক্রি করছেন অনেকে। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? এমন পরিস্থিতিতেই নি:স্ব এক মা দেলরম রহমতি।

প্রায় চার বছর আগে আফগানিস্তানের বদগিস প্রদেশ থেকে ভিটেমাটি ছেড়েছিলেন দেলরম রহমতি। মাথা গুঁজেছিলেন হেরাতের এক বস্তিতে। আট ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনও রকমে চলছিল তার সংসার। কিন্তু গেলো কয়েক মাসের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় এখন দিশেহারা রহমতি।

ক্ষুধার জালায় মাস কয়েক আগে নিজের মেয়েদের বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। রহমতির কথায়, “অচেনা লোকেদের হাতে মেয়েদের বেচে দিয়েছি। এক জন আট আর অন্যটার বয়স ছয়।” প্রাপ্তবয়স্ক হলে এই দুই মেয়েকে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে হবে।

এক লক্ষ আফগান মুদ্রায় এক একটি মেয়েকে বিক্রি করে হাতে কিছুটা অর্থ এসেছে বটে। তবে তাতে রহমতির সংসারে সাশ্রয় হয়নি। দুই ছেলের চিকিৎসায় সে অর্থও হু হু করে শেষ!
রহমতির এক ছেলে ভুগছে মানসিক অসুস্থতায়। অন্য জন পক্ষাঘাতগ্রস্ত। স্বামীর জন্য নিয়মিত ওষুধও কিনতে হয়। উপায় না পেয়ে দু’মাস আগে দেড় লক্ষ আফগানি টাকায় নিজের ডান কিডনিও বিক্রি করেছেন। তবে সে অস্ত্রোপচারের পর থেকে নিজেও অসুস্থ। কিন্তু, চিকিৎসা করানোর জন্য অর্থ নেই তার হাতে।

রহমতি বলেন, “মেয়েদের ভবিষ্যৎ বিক্রি করাটা যন্ত্রণার। তবে ঋণের বোঝা নামাতে আর খিদের জ্বালায় আমার কিডনিও বেচতে বাধ্য হয়েছি।”

দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা, শীতের দাপট, অন্যদিকে খরা; আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তো আছেই। সব মিলিয়ে দিশেহারা রহমতি।

তালেবান চালিত আফগানিস্তানে এখন এমন হাজারও রহমতির দেখা মিলবে বলে জানাচ্ছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। তাদের মতে, “সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভগ্নদশার সঙ্গে রয়েছে মানবিক সঙ্কটও।”

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

দুই মেয়েকে বিক্রির পর নিজের কিডনিও বিক্রি করলেন আফগান মা

প্রকাশিত সময় : ০৩:০৩:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২২

আফগানিস্তানে ক্ষুধা এখন নিত্যদিনের সমস্যা। প্রতিদিনই নতুন নতুন উপায়ে ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন দেশটির প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা। অভাবের তাড়নায় নিজের সন্তানকে বিক্রি করার ঘটনাও এখন অহরঅহ। এখন আবার অর্থ পেতে, নিজের কিডনিও বিক্রি করছেন অনেকে। কিন্তু এভাবে আর কত দিন? এমন পরিস্থিতিতেই নি:স্ব এক মা দেলরম রহমতি।

প্রায় চার বছর আগে আফগানিস্তানের বদগিস প্রদেশ থেকে ভিটেমাটি ছেড়েছিলেন দেলরম রহমতি। মাথা গুঁজেছিলেন হেরাতের এক বস্তিতে। আট ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোনও রকমে চলছিল তার সংসার। কিন্তু গেলো কয়েক মাসের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় এখন দিশেহারা রহমতি।

ক্ষুধার জালায় মাস কয়েক আগে নিজের মেয়েদের বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। রহমতির কথায়, “অচেনা লোকেদের হাতে মেয়েদের বেচে দিয়েছি। এক জন আট আর অন্যটার বয়স ছয়।” প্রাপ্তবয়স্ক হলে এই দুই মেয়েকে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে হবে।

এক লক্ষ আফগান মুদ্রায় এক একটি মেয়েকে বিক্রি করে হাতে কিছুটা অর্থ এসেছে বটে। তবে তাতে রহমতির সংসারে সাশ্রয় হয়নি। দুই ছেলের চিকিৎসায় সে অর্থও হু হু করে শেষ!
রহমতির এক ছেলে ভুগছে মানসিক অসুস্থতায়। অন্য জন পক্ষাঘাতগ্রস্ত। স্বামীর জন্য নিয়মিত ওষুধও কিনতে হয়। উপায় না পেয়ে দু’মাস আগে দেড় লক্ষ আফগানি টাকায় নিজের ডান কিডনিও বিক্রি করেছেন। তবে সে অস্ত্রোপচারের পর থেকে নিজেও অসুস্থ। কিন্তু, চিকিৎসা করানোর জন্য অর্থ নেই তার হাতে।

রহমতি বলেন, “মেয়েদের ভবিষ্যৎ বিক্রি করাটা যন্ত্রণার। তবে ঋণের বোঝা নামাতে আর খিদের জ্বালায় আমার কিডনিও বেচতে বাধ্য হয়েছি।”

দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা, শীতের দাপট, অন্যদিকে খরা; আর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তো আছেই। সব মিলিয়ে দিশেহারা রহমতি।

তালেবান চালিত আফগানিস্তানে এখন এমন হাজারও রহমতির দেখা মিলবে বলে জানাচ্ছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। তাদের মতে, “সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভগ্নদশার সঙ্গে রয়েছে মানবিক সঙ্কটও।”

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান