বোরকা আর হিজাব পরতে অভ্যস্ত। ক্লাসের শুরুতে বোরকা খুলে হিজাব পরে নেই। হিজাব এখন যেন আমার অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। কলেজের প্রিন্সিপালও কোনোদিন বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেননি। বহিরাগতরা এটা শুরু করেছে। এসব দেখে প্রিন্সিপাল আমাদের বোরকা পরিধান করে কলেজে আসতে মানা করেছেন। কিন্তু হিজাবের দাবিতে আমাদের প্রতিবাদ জারি থাকবে।
মুসকান আরও বলেন, আমার হিন্দু বন্ধুরাও আমার সঙ্গে আছে। আজ সকাল থেকে একের পর এক ফোন পাচ্ছি। আমি আশ্বস্ত।
এনডিটিভির প্রতিবেদককে মুসকান বলেন, আমি ভীত ছিলাম না। আমি সেখানে গিয়েছিলাম অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে। কিন্তু তারা আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছিলেন না। কারণ আমি বোরকা পরিধান করে সেখানে গিয়েছিলাম। কোনোভাবে এক সময় আমি ভেতরে প্রবেশ করি। এ সময় তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। তখন আমিও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে চিৎকার শুরু করি।
গেরুয়া ওড়না পরিহিত যেসব তরুণ তাকে উদ্দেশ্য করে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়েছিলেন তারা আদতে ওই কলেজের ছাত্র ছিল কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে মুসকান বলেন, তাদের মধ্যে কিছু ছিল আমাদের কলেজের। আর অধিকাংশই ছিল বহিরাগত। তবে প্রিন্সিপালসহ অন্যান্য শিক্ষকরা আমাকে সাপোর্ট করছেন। সে কারণে তারা কোনো সমস্যা করতে পারেননি।
মুসকান আগে থেকেই বোরকা পরিধান করে কলেজে যান কি-না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ স্যার, আমি সব সময়ই বোরকা পরে কলেজে যাই। শুধু তাই নয়, আমার শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই বোরকা পরিধান করি। অতীতে এটা নিয়ে কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।
কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি আপনাকে বোরকা পরে ক্লাস করতে না দেয়, তাহলে আপনি কি বোরকা ছেড়ে দেবেন নাকি আন্দোলন চালিয়ে যাবেন? মুসকান বলেন, আমি শেষ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। বোরকা তো একজন মুসলিম মেয়ের অংশ।
সরাসরি সম্প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারে মুসকান জানিয়েছেন, তার কলেজের হিন্দু বন্ধুদের কাছ থেকেও তিনি সাপোর্ট পাচ্ছেন। তারা বিষয়টি নিয়ে মুসকানকে কিছুই বলেনি। কিন্তু বহিরাগতরাই তাকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ বলে স্লোগান দিয়েছে। তার মতো বোরকা পরা আরও চার-পাঁচজনকেও কলেজে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
বর্তমানে মুসকান অনিরাপদ বোধ করছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, না। সকাল থেকে পুলিশসহ অনেকেই এখানে এসেছেন। বলেছেন আমার পাশে আছেন। সহযোগিতা করবেন। শেষ প্রশ্নের জবাবে বিবি মুসকান খান বলেন, শিক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার। এক টুকরো কাপড়ের জন্য তারা আমাদের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করছে।
যেভাবে আন্দোলনটির সূত্রপাত :
মূলত এই বিতর্ক শুরু হয়েছে ‘সমতা, অখণ্ডতা এবং জনশৃঙ্খলা’ বজায় রাখার দোহাই দিয়ে স্কুল-কলেজে হিজাব বাতিল করার সরকারি সিদ্ধান্ত থেকেই। যে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা করেছেন উদুপির একটি সরকারি কলেজের পাঁচ ছাত্রী।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা :
হিজাব বিতর্ক ক্রমেই সহিংস রূপ ধারণ করছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের ধর্মীয় দাঙ্গা-হাঙ্গামার সম্ভাবনার আশঙ্কা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় ৩ দিন কর্ণাটকের সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণাটি দেন।
মধ্যপ্রদেশে বিক্ষোভ :
ভারতীয় মিডিয়া এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিং পরমার।
হিজাবের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করে তিনি বলেন, সরকার অবশ্যই শৃঙ্খলাকে অগ্রাধিকার দেবে। শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত পোশাক বিধি মেনে চলতে হবে। মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরে মধ্যপ্রদেশেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক /দৈনিক দেশ নিউজ ডটকম 
























