মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে একদিনে ১৪০০ বিস্ফোরণ

ইউক্রেন সীমান্তে এরই মধ্যে বেজে গেছে যুদ্ধের দামামা। রাশিয়া-ইউক্রেন সরাসরি সংঘাতে না জড়ালেও পূর্ব ইউক্রেনে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে এরই মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। চলমান এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে সেখানে একদিনেই এক হাজার চারশর অধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পর্যবেক্ষক সংস্থার বরাতে করা প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীর হামলা-পাল্টা আক্রমণের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে কেবল শনিবারই এক হাজার ৪০০-র বেশি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

অন্য দিকে শনিবার পূর্ব ইউক্রেনে দেড় হাজারেরও অধিকবার অস্ত্র বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বলে পৃথক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। একদিনের হিসেবে চলতি বছর এটি সর্বোচ্চ।

ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর দ্য সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) পর্যবেক্ষকদের বরাতে তথ্যটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি। ওএসসিই মূলত পূর্ব ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে থাকে।

শুক্রবার হওয়া আক্রমণের প্রসঙ্গে একটি রিপোর্টে পর্যবেক্ষক সংস্থাটি জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনে একদিনে মোট ১৫৬৬টি অস্ত্র বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দোনেতস্ক অঞ্চলে ৫৯১টি এবং পার্শ্ববর্তী লুহানস্ক অঞ্চলে অস্ত্র বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি। পূর্ব ইউক্রেনের এই দুটি অঞ্চল রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আংশিকভাবে দখল করে রেখেছে।

ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন যাবৎই সেনাবাহিনীর প্রায় এক লাখ সদস্য মোতায়েন রেখেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র রাশিয়া। এর মধ্যে কামান ও ট্যাংকসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। রুশ সৈন্যরা যে কোনো মুহূর্তে দেশটিতে আক্রমণ চালাতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে আক্রমণের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।

যদিও ওয়াশিংটন বরাবরই বলে আসছে, রাশিয়া যে কোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে হানা দিতে পারে। একই আশঙ্কা প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্র রাষ্ট্রগুলোও। সংকটময় এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার মস্কো জানায়, সামরিক মহড়া শেষে ইউক্রেনে সীমান্ত থেকে ঘাঁটিতে ফিরতে শুরু করেছে রুশ সৈন্যরা।

কিন্তু পশ্চিমা রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, মস্কোর এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা পাননি। বরং ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সংখ্যা আরও বাড়িয়েছে মস্কো। অবশ্য ইউক্রেনে এখনই আক্রমণের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো। এছাড়া রুশ সৈন্যরা ওই অঞ্চলে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে বলেও জানিয়েছে রাশিয়া।

এমন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের তৃতীয় দিনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আক্রমণে শনিবার দুই ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহতের কথা জানানো হয়।এছাড়া ইউক্রেন সরকার এবং রুশপন্থি বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ায় শুক্রবার এই দুই স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র থেকে বাসিন্দাদের রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়। দোনেতস্ক ও লুহানস্ক থেকে আসা মানুষদের রাশিয়ায় আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে একদিনে ১৪০০ বিস্ফোরণ

প্রকাশিত সময় : ০৪:৩৪:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ইউক্রেন সীমান্তে এরই মধ্যে বেজে গেছে যুদ্ধের দামামা। রাশিয়া-ইউক্রেন সরাসরি সংঘাতে না জড়ালেও পূর্ব ইউক্রেনে দেশটির সরকারি বাহিনীর সঙ্গে এরই মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। চলমান এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে সেখানে একদিনেই এক হাজার চারশর অধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পর্যবেক্ষক সংস্থার বরাতে করা প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীর হামলা-পাল্টা আক্রমণের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেতস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে কেবল শনিবারই এক হাজার ৪০০-র বেশি বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

অন্য দিকে শনিবার পূর্ব ইউক্রেনে দেড় হাজারেরও অধিকবার অস্ত্র বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে বলে পৃথক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। একদিনের হিসেবে চলতি বছর এটি সর্বোচ্চ।

ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর দ্য সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) পর্যবেক্ষকদের বরাতে তথ্যটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি। ওএসসিই মূলত পূর্ব ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে থাকে।

শুক্রবার হওয়া আক্রমণের প্রসঙ্গে একটি রিপোর্টে পর্যবেক্ষক সংস্থাটি জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনে একদিনে মোট ১৫৬৬টি অস্ত্র বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দোনেতস্ক অঞ্চলে ৫৯১টি এবং পার্শ্ববর্তী লুহানস্ক অঞ্চলে অস্ত্র বিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি। পূর্ব ইউক্রেনের এই দুটি অঞ্চল রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আংশিকভাবে দখল করে রেখেছে।

ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন যাবৎই সেনাবাহিনীর প্রায় এক লাখ সদস্য মোতায়েন রেখেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র রাশিয়া। এর মধ্যে কামান ও ট্যাংকসহ যুদ্ধবিমানের বহরও ইউক্রেন সীমান্তে পাঠিয়েছে দেশটি। রুশ সৈন্যরা যে কোনো মুহূর্তে দেশটিতে আক্রমণ চালাতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে আক্রমণের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।

যদিও ওয়াশিংটন বরাবরই বলে আসছে, রাশিয়া যে কোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে হানা দিতে পারে। একই আশঙ্কা প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য মিত্র রাষ্ট্রগুলোও। সংকটময় এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার মস্কো জানায়, সামরিক মহড়া শেষে ইউক্রেনে সীমান্ত থেকে ঘাঁটিতে ফিরতে শুরু করেছে রুশ সৈন্যরা।

কিন্তু পশ্চিমা রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, মস্কোর এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা পাননি। বরং ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সংখ্যা আরও বাড়িয়েছে মস্কো। অবশ্য ইউক্রেনে এখনই আক্রমণের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো। এছাড়া রুশ সৈন্যরা ওই অঞ্চলে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে বলেও জানিয়েছে রাশিয়া।

এমন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের তৃতীয় দিনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আক্রমণে শনিবার দুই ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহতের কথা জানানো হয়।এছাড়া ইউক্রেন সরকার এবং রুশপন্থি বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ায় শুক্রবার এই দুই স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র থেকে বাসিন্দাদের রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়। দোনেতস্ক ও লুহানস্ক থেকে আসা মানুষদের রাশিয়ায় আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।