বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিচ্ছেদের পর ছেলেকে কাছে না পাওয়ার হতাশা থেকে বাবার ‘আত্মহত্যা’

স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ছেলেকে কাছে রাখতে না পারার হতাশা থেকে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় বিষপানে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। পরিবারের দাবি, আত্মহত্যা করার আগে একটি চিরকুটও লিখে রেখে গেছেন তিনি।

গত শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল কুমুদিনী হাসপাতালে মারা যান আল আমীন (৪০) নামে ওই ব্যক্তি। তার বাবা ইকবাল খান উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আল আমিন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পাস করেন।

জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে একই উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের ইউসুফ আলীর মেয়ে শিলার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন আল আমিন। সম্প্রতি তাদের বিচ্ছেদ হয়। আশরাফুল নামে দুই বছরের এক ছেলে রয়েছে তাদের। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ছেলেকে কাছে না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছিলেন।

পরিবারের ভাষ্য, গত শুক্রবার রাতে আল আমীন বিষপান করেন। এরপর প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখান থেকে নেওয়া হয়েছিল মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতালে।

আত্মহত্যার আগে আল আমিন তার ছোট ভাই মাহমুদের উদ্দেশে একটি চিরকুট রেখে গেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ভাই আমার জীবন আর চালাই নিতে পারছি না রে। প্রতিটি মূহূর্ত যন্ত্রণার। মাহমুদ, অনেক ভালোবাসি ভাই তোকে। আমাকে মাফ করে দিস। আমার সংসারটা শিলার বাবা, মা আর ওর ভাই নাহিদ নষ্ট করে দিছে। আমার কলিজা টুকরাকে নিয়ে গেছে ওরা। ভাই, প্রতিদিনের এই যন্ত্রণা কষ্ট থেকে এটা ছাড়া উপায় ছিল না। ভাই আমার অসহায়ত্ব আর চোখের পানিও ওদের কাছে হাসি-তামাশার মনে হয়েছে। ভাই বাবুকে দেখে রাখিস। আর পারলাম না ভাই। একটু একটু করে মরার চেয়ে একেবারে মরে যাওয়াই ভালো। তাও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব। আমার বাবা-মাকে মাফ করে দিতে বইলো ভাই।’

আল আমীনের চাচা আলামত হোসেন জানান, বিচ্ছেদের সময় শিশু সন্তানকে তার স্ত্রী (শিলা) নিয়ে যায়। এ কারণে আল আমীন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।

এ বিষয়ে আল আমীনের শ্বশুর ইউসুফ আলী বলেন, ‘আল আমিন ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত আমার মেয়ের ওপর অত্যাচার করত। তাদের অত্যাচার সইতে না পেরে বছর দুই আগেও আমার মেয়ে একবার চলে এসেছিলো। আমি ও আমার আত্মীয় স্বজন বুঝিয়ে তাকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে আল আমীনের বাবা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। মেয়ের সুখের কথা ভেবে আমি এক লাখ টাকা পাঠাই। তারপরও তারা আমার মেয়েকে অত্যাচার করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেড় মাস আগে রাতে আল আমীন আমার মেয়েকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। মেয়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার বাড়িতে চলে আসে। পরে বিচ্ছেদ হয়।’

ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার জানান, তারা প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করছেন। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বিচ্ছেদের পর ছেলেকে কাছে না পাওয়ার হতাশা থেকে বাবার ‘আত্মহত্যা’

প্রকাশিত সময় : ০৯:৪৯:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ছেলেকে কাছে রাখতে না পারার হতাশা থেকে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় বিষপানে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। পরিবারের দাবি, আত্মহত্যা করার আগে একটি চিরকুটও লিখে রেখে গেছেন তিনি।

গত শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল কুমুদিনী হাসপাতালে মারা যান আল আমীন (৪০) নামে ওই ব্যক্তি। তার বাবা ইকবাল খান উপজেলার দিঘলকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আল আমিন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পাস করেন।

জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে একই উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের ইউসুফ আলীর মেয়ে শিলার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন আল আমিন। সম্প্রতি তাদের বিচ্ছেদ হয়। আশরাফুল নামে দুই বছরের এক ছেলে রয়েছে তাদের। স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ছেলেকে কাছে না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছিলেন।

পরিবারের ভাষ্য, গত শুক্রবার রাতে আল আমীন বিষপান করেন। এরপর প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখান থেকে নেওয়া হয়েছিল মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতালে।

আত্মহত্যার আগে আল আমিন তার ছোট ভাই মাহমুদের উদ্দেশে একটি চিরকুট রেখে গেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘ভাই আমার জীবন আর চালাই নিতে পারছি না রে। প্রতিটি মূহূর্ত যন্ত্রণার। মাহমুদ, অনেক ভালোবাসি ভাই তোকে। আমাকে মাফ করে দিস। আমার সংসারটা শিলার বাবা, মা আর ওর ভাই নাহিদ নষ্ট করে দিছে। আমার কলিজা টুকরাকে নিয়ে গেছে ওরা। ভাই, প্রতিদিনের এই যন্ত্রণা কষ্ট থেকে এটা ছাড়া উপায় ছিল না। ভাই আমার অসহায়ত্ব আর চোখের পানিও ওদের কাছে হাসি-তামাশার মনে হয়েছে। ভাই বাবুকে দেখে রাখিস। আর পারলাম না ভাই। একটু একটু করে মরার চেয়ে একেবারে মরে যাওয়াই ভালো। তাও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাব। আমার বাবা-মাকে মাফ করে দিতে বইলো ভাই।’

আল আমীনের চাচা আলামত হোসেন জানান, বিচ্ছেদের সময় শিশু সন্তানকে তার স্ত্রী (শিলা) নিয়ে যায়। এ কারণে আল আমীন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন।

এ বিষয়ে আল আমীনের শ্বশুর ইউসুফ আলী বলেন, ‘আল আমিন ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত আমার মেয়ের ওপর অত্যাচার করত। তাদের অত্যাচার সইতে না পেরে বছর দুই আগেও আমার মেয়ে একবার চলে এসেছিলো। আমি ও আমার আত্মীয় স্বজন বুঝিয়ে তাকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে আল আমীনের বাবা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। মেয়ের সুখের কথা ভেবে আমি এক লাখ টাকা পাঠাই। তারপরও তারা আমার মেয়েকে অত্যাচার করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেড় মাস আগে রাতে আল আমীন আমার মেয়েকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। মেয়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার বাড়িতে চলে আসে। পরে বিচ্ছেদ হয়।’

ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম সরকার জানান, তারা প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করছেন। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।