মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেনে ২০৩টি হামলা চালিয়েছে রাশিয়া

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সেনা অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে এ পর্যন্ত ২০৩টি হামলা চালিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের ৭৪টি সামরিক স্থাপনা ও ১১ টি বিমানঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে মস্কো। রুশ বার্তাসংস্থা আরআইএ নিউজ এজেন্সির বরাতে এই খবর জানিয়েছে রয়টার্স।

দীর্ঘ দুই মাস ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখার পর বৃহস্পতিবার দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার পুতিনের ভাষণ প্রচারের কিছুক্ষণের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও অন্যান্য বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির সরকার।

ইতিমধ্যে কিয়েভেও ঢুকে পড়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলেছে- কিয়েভে সরকারি স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে গ্র্যাড মিসাইল ছুড়ে হামলা চালাচ্ছে রুশ সৈন্যরা। কিয়েভের উত্তরাঞ্চলের আকাশে কয়েকটি হেলিকপ্টার নিচু দিয়ে উড়তে দেখেছেন বলে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

বিবিসির ইউক্রেন সার্ভিসের সম্পাদক মার্তা শোকালো বলেছেন, ‘দেশের পূর্বাঞ্চলের সম্মুখভাগ নয়, বরং কিয়েভ আক্রমণের মুখে ছিল। এটি বুঝতে পারাটা ছিল বড় ধাক্কা। ইউক্রেনে আর কোনো

পূর্ব ইউরোপে শত শত যুদ্ধবিমান-জাহাজ মোতায়েন

ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর পূর্ব ইউরোপের মিত্র রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ওই অঞ্চলে কয়েক শ যুদ্ধবিমান ও জাহাজ মোতায়েন করেছে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)। আজ বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন জোটের মহাসচিব জিনস স্টলটেনবার্গ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের মহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর চরম আঘাত এসেছে। রাশিয়া তার সামরিক শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ইতিহাস নতুন করে লেখার উদ্যোগ নিয়েছে এবং ইউক্রেনের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করেছে।’

এখনো ইউক্রেন ন্যাটোর পূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি, কিন্তু পূর্ব ইউরোপের যেসব দেশ এই জোটের পূর্ণ সদস্যপদ পেয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন স্টলটেনবার্গ।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রসঙ্গে রাশিয়াকে এককভাবে দায়ী করে স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘এটি একটি ইচ্ছাকৃত ও ঠাণ্ডা মাথার আগ্রাসন। দীর্ঘদিন ধরে এই আগ্রাসনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল এবং বিনা উস্কানিতে ঘটা এই হামলার কারণে ইউক্রেনের অনেক নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারাবেন।’

চলছে শরণার্থী সামলানোর প্রস্তুতিও

ইউক্রেইনের যুদ্ধ পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে জানিয়ে আশপাশের দেশগুলোকে সীমান্ত খুলে দিতে বলেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা।ইউএনএইচসিআরের হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে হতাহতের খবর পাচ্ছি। মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে পেতে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

রাশিয়া হামলা শুরুর পর ইউক্রেইনের শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে শুরু করেছে প্রতিবেশী দেশগুলো। পোল্যান্ড তাদের সীমান্তে শরণার্থীদের স্বাগত জানানোর পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতালগুলোকেও নির্দেশ দিচ্ছে।

শরণার্থীদের জন্য সীমান্তে বাড়তি সৈন্য পাঠিয়েছে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া। দেশটির প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড হেগার সবার উদ্দেশে বলেছেন, ‘তাদের (শরণার্থী) প্রতি সহমর্মী হোন।’ এদিকে, জার্মানিও ইউক্রেইনের প্রতিবেশী দেশগুলোকে সবরকম মানবিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে, যাতে তারা শরণার্থীদের জরুরি সাহায্য করতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ইউক্রেনে ২০৩টি হামলা চালিয়েছে রাশিয়া

প্রকাশিত সময় : ১১:২৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সেনা অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে এ পর্যন্ত ২০৩টি হামলা চালিয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের ৭৪টি সামরিক স্থাপনা ও ১১ টি বিমানঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে মস্কো। রুশ বার্তাসংস্থা আরআইএ নিউজ এজেন্সির বরাতে এই খবর জানিয়েছে রয়টার্স।

দীর্ঘ দুই মাস ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখার পর বৃহস্পতিবার দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার পুতিনের ভাষণ প্রচারের কিছুক্ষণের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও অন্যান্য বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির সরকার।

ইতিমধ্যে কিয়েভেও ঢুকে পড়েছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বলেছে- কিয়েভে সরকারি স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে গ্র্যাড মিসাইল ছুড়ে হামলা চালাচ্ছে রুশ সৈন্যরা। কিয়েভের উত্তরাঞ্চলের আকাশে কয়েকটি হেলিকপ্টার নিচু দিয়ে উড়তে দেখেছেন বলে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন।

বিবিসির ইউক্রেন সার্ভিসের সম্পাদক মার্তা শোকালো বলেছেন, ‘দেশের পূর্বাঞ্চলের সম্মুখভাগ নয়, বরং কিয়েভ আক্রমণের মুখে ছিল। এটি বুঝতে পারাটা ছিল বড় ধাক্কা। ইউক্রেনে আর কোনো

পূর্ব ইউরোপে শত শত যুদ্ধবিমান-জাহাজ মোতায়েন

ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর পূর্ব ইউরোপের মিত্র রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ওই অঞ্চলে কয়েক শ যুদ্ধবিমান ও জাহাজ মোতায়েন করেছে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)। আজ বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন জোটের মহাসচিব জিনস স্টলটেনবার্গ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের মহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর চরম আঘাত এসেছে। রাশিয়া তার সামরিক শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই অঞ্চলের ইতিহাস নতুন করে লেখার উদ্যোগ নিয়েছে এবং ইউক্রেনের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করেছে।’

এখনো ইউক্রেন ন্যাটোর পূর্ণ সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি, কিন্তু পূর্ব ইউরোপের যেসব দেশ এই জোটের পূর্ণ সদস্যপদ পেয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন স্টলটেনবার্গ।

ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রসঙ্গে রাশিয়াকে এককভাবে দায়ী করে স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘এটি একটি ইচ্ছাকৃত ও ঠাণ্ডা মাথার আগ্রাসন। দীর্ঘদিন ধরে এই আগ্রাসনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল এবং বিনা উস্কানিতে ঘটা এই হামলার কারণে ইউক্রেনের অনেক নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারাবেন।’

চলছে শরণার্থী সামলানোর প্রস্তুতিও

ইউক্রেইনের যুদ্ধ পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে জানিয়ে আশপাশের দেশগুলোকে সীমান্ত খুলে দিতে বলেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা।ইউএনএইচসিআরের হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে হতাহতের খবর পাচ্ছি। মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে পেতে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

রাশিয়া হামলা শুরুর পর ইউক্রেইনের শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে শুরু করেছে প্রতিবেশী দেশগুলো। পোল্যান্ড তাদের সীমান্তে শরণার্থীদের স্বাগত জানানোর পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসা সেবা দিতে হাসপাতালগুলোকেও নির্দেশ দিচ্ছে।

শরণার্থীদের জন্য সীমান্তে বাড়তি সৈন্য পাঠিয়েছে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া। দেশটির প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড হেগার সবার উদ্দেশে বলেছেন, ‘তাদের (শরণার্থী) প্রতি সহমর্মী হোন।’ এদিকে, জার্মানিও ইউক্রেইনের প্রতিবেশী দেশগুলোকে সবরকম মানবিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে, যাতে তারা শরণার্থীদের জরুরি সাহায্য করতে পারে।