বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শহীদ সেলিম-দেলোয়ার দিবস আজ

মো. আরিফ জাওয়াদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে: আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ সেলিম-দেলোয়ার দিবস। ১৯৮৪ সালের এই দিনে স্বৈরশাসক এরশাদ-বিরোধী গণআন্দোলন চলাকালে পুলিশের ট্রাকের চাপায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুই নেতা এইচ এম ইব্রাহিম সেলিম ও কাজী দেলোয়ার হোসেন। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তারা। আজ তাদের ৩৮তম শাহাদাত-বার্ষিকী।

নিহত সেলিম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ; তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিপুর গ্রামে। আর দেলোয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর পৈকখালী গ্রামে

ইতিহাসের ভাষ্যমতে, ১৯৮৪ সালের উপজেলা নির্বাচনের ডাক দেয় স্বৈরাচার সরকার। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দল ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দল এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। ওইদিন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে। মিছিল শুরুর প্রাক্কালে কবি মোহন রায়হান আবৃত্তি করেন- “আমাদের মৃত্যুর জন্যে আজ কোনো পরিতাপ নেই আমাদের জন্মের জন্যে আজ কোনো ভালোবাসা নেই, আমাদের ধ্বংসের জন্যে আজ কোনো প্রতিকার নেই, আমাদের সবকিছু আজ শুধু ছলনার, শুধু আজ ব্যর্থতার ক্লেদ নিয়ে আসে।

আজকে এখানে একজন শিক্ষক জন্মাক, আজকে এখানে একজন বুদ্ধিজীবী থাক, আজ নবজন্ম হোক এদেশের লেখক কবির আর তারা অন্ধকারে ঝলসিত আগ্নেয়াস্ত্রের মতন হোক স্পর্ধিত; স্পর্ধিত হোক আজ তারা স্পর্ধিত হোক।” সেদিন এ দুই ছাত্রনেতা (সেলিম ও দেলোয়ার) ছিলেন মিছিলের পেছন দিকে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে দিয়ে রোকেয়া হল পেরিয়ে টিএসসি হয়ে, কার্জন হলের দিকে এগোতে থাকে। মিছিলটি কার্জন হল পার হয়ে রাজধানীর গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল এলাকায় পৌঁছানোর পরই বর্তমান ফায়ার ব্রিগেড অফিসের পাশ থেকে পুলিশের সেই ট্রাক অতর্কিতে পেছন থেকে মিছিলের ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে চালিয়ে দেয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তাঁরা। চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে যায় কয়েকজন।

তাদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখে। ঘাতক ট্রাক জন্ম দেয় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নিষ্ঠুরতা হত্যাযজ্ঞের। শহীদ সেলিম-দেলোয়ারের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। সেই ঘটনার পর থেকে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমাবেশে আর রাজপথের এরশাদ-বিরোধী মিছিলে ছাত্ররা স্লোগান দিতে থাকে; ❝সেলিম, দেলোয়ার, তিতাস ; আন্দোলনের লাল পলাশ।❞

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

শহীদ সেলিম-দেলোয়ার দিবস আজ

প্রকাশিত সময় : ০৩:১১:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

মো. আরিফ জাওয়াদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে: আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ সেলিম-দেলোয়ার দিবস। ১৯৮৪ সালের এই দিনে স্বৈরশাসক এরশাদ-বিরোধী গণআন্দোলন চলাকালে পুলিশের ট্রাকের চাপায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুই নেতা এইচ এম ইব্রাহিম সেলিম ও কাজী দেলোয়ার হোসেন। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তারা। আজ তাদের ৩৮তম শাহাদাত-বার্ষিকী।

নিহত সেলিম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র ; তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিপুর গ্রামে। আর দেলোয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর পৈকখালী গ্রামে

ইতিহাসের ভাষ্যমতে, ১৯৮৪ সালের উপজেলা নির্বাচনের ডাক দেয় স্বৈরাচার সরকার। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দল ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দল এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। ওইদিন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে। মিছিল শুরুর প্রাক্কালে কবি মোহন রায়হান আবৃত্তি করেন- “আমাদের মৃত্যুর জন্যে আজ কোনো পরিতাপ নেই আমাদের জন্মের জন্যে আজ কোনো ভালোবাসা নেই, আমাদের ধ্বংসের জন্যে আজ কোনো প্রতিকার নেই, আমাদের সবকিছু আজ শুধু ছলনার, শুধু আজ ব্যর্থতার ক্লেদ নিয়ে আসে।

আজকে এখানে একজন শিক্ষক জন্মাক, আজকে এখানে একজন বুদ্ধিজীবী থাক, আজ নবজন্ম হোক এদেশের লেখক কবির আর তারা অন্ধকারে ঝলসিত আগ্নেয়াস্ত্রের মতন হোক স্পর্ধিত; স্পর্ধিত হোক আজ তারা স্পর্ধিত হোক।” সেদিন এ দুই ছাত্রনেতা (সেলিম ও দেলোয়ার) ছিলেন মিছিলের পেছন দিকে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে দিয়ে রোকেয়া হল পেরিয়ে টিএসসি হয়ে, কার্জন হলের দিকে এগোতে থাকে। মিছিলটি কার্জন হল পার হয়ে রাজধানীর গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল এলাকায় পৌঁছানোর পরই বর্তমান ফায়ার ব্রিগেড অফিসের পাশ থেকে পুলিশের সেই ট্রাক অতর্কিতে পেছন থেকে মিছিলের ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে চালিয়ে দেয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তাঁরা। চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে যায় কয়েকজন।

তাদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখে। ঘাতক ট্রাক জন্ম দেয় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নিষ্ঠুরতা হত্যাযজ্ঞের। শহীদ সেলিম-দেলোয়ারের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। সেই ঘটনার পর থেকে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমাবেশে আর রাজপথের এরশাদ-বিরোধী মিছিলে ছাত্ররা স্লোগান দিতে থাকে; ❝সেলিম, দেলোয়ার, তিতাস ; আন্দোলনের লাল পলাশ।❞