শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মা-মেয়ে হত্যায় আটক যুবকের ব্যাগ থেকে স্বর্ণের চেইন উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জ নিতাইগঞ্জের ডাইলপট্টি এলাকার বহুতল ভবনের ৬ তলায় মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় আটক যুবকের ব্যাগ থেকে স্বর্ণের চেইন উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চারটি ছুরি ও কয়েকটি হ্যান্ড গ্লাভস জব্দ করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেড়েছে, হত্যাকাণ্ডের সময় নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী ও ঋতু চক্রবর্তীর বাবা রাম প্রসাদের কাছে ফোনে টাকা ও স্বর্ণ কোথায় আছে জানতে চান জুবায়ের।

রাম প্রসাদ জানান, পৌনে তিনটার দিকে আমি আমার স্ত্রীর মোবাইলে ফোন করি। তখন ফোন ধরে ওই ছেলে। আমার কাছে জানতে চায় টাকা ও স্বর্ণ কোথায় রেখেছি। আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে সে ফোন কেটে দেয়। পরে বাসার সামনে গিয়ে দেখি আশাপাশের লোকজন মূল গেট বন্ধ করে রেখেছে, ভেতরে পুলিশ। তিনি আরও জানান, আমার মেয়ে ঋতু ৬ মাস ১৬ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। সন্তান হওয়ার পর স্বামীর বাড়ি চট্টগ্রামে যাওয়া কথা ছিল তার। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার চাই।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (তদন্ত) আমির খশরু জানান, হত্যার সাথে জড়িত জুবায়েরকে নিহতের পরিবারের কেউ চেনেন না। ওই পরিবারের সাথে তার কোন পরিচয় নেই। হঠাৎ করে ওই যুবক সেই বাড়িতে গিয়ে মা-মেয়েকে হত্যা করে। ঘটনার পর জুবায়েরের ব্যাগ থেকে নিহত ঋতুর গলার স্বর্ণের চেইন উদ্ধার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে চারটি ছুরি ও কয়েকটি হ্যান্ড গ্লাভস।

আটকৃত জুবায়ের নগরীর পাইকপাড়া এলাকার আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী ডাল ব্যবসায়ী শংকর রায় জানান, হঠাৎ উপর থেকে একজন নারী দৌড়ে নিচে নেমে চিৎকার করতে থাকেন। এসময় তার হাতে একটি বটি ছিলো। এ কারণে লোকজন ছুটে এসে মূল গেট বন্ধ করে দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে উপরে উঠে।

সদর মডেল থানার পুলিশ পরির্দশক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই ভবনের নীচে আমরা ফারজানা শিলা নামের এক নারীকে পাই। তিনি নিহত রুমার ছেলের স্ত্রী। পরে ৬য় তলায় ছুটে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ, দরজা ধাক্কা দিলে ভেতর থেকে জুবায়ের দরজা খুলে সামনে আসে। ওই সময় তার হাতে ছিল ছুরি। কৌশলে তার কাছ থেকে ছুরি কেড়ে নেয়ার পর তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মা-মেয়েকে হত্যার বিষয়টি সে স্বীকার করেছে।

পাশের ফ্ল্যাটের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ওই ভবনের নিচতলা থেকে উপর তলার পর্যন্ত কয়েকটি ফ্ল্যাটের বেল চেপেছে জুবায়ের নামের সেই যুবক কিন্তু কেউ দরজা খোলেননি। এর আগে ওই যুবককে কখনও দেখেননি বলে জানান তারা।

আটকৃত জুবায়েরের বাবা আলাউদ্দিন মিয়া জানান, তিনি শহরের টানবাজারের লবণ ব্যবসায়ী। তার ছেলে জুবায়ের ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করার পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়। তবে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় পড়ালেখা চালাতে পারেনি। গত এক-দেড় মাস ধরে তার ছেলের মধ্যে উদ্ভট আচরণ দেখা যায় বলে জানান তিনি।

জুবায়ের ছাড়া আর কেউ হত্যার সাথে জড়িত কিনা তা নিয়ে পুলিশের একাধিক টিম তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহ জামান।একুশে টেলিভিশন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

মা-মেয়ে হত্যায় আটক যুবকের ব্যাগ থেকে স্বর্ণের চেইন উদ্ধার

প্রকাশিত সময় : ০৩:৩৬:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ মার্চ ২০২২

নারায়ণগঞ্জ নিতাইগঞ্জের ডাইলপট্টি এলাকার বহুতল ভবনের ৬ তলায় মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় আটক যুবকের ব্যাগ থেকে স্বর্ণের চেইন উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চারটি ছুরি ও কয়েকটি হ্যান্ড গ্লাভস জব্দ করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেড়েছে, হত্যাকাণ্ডের সময় নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী ও ঋতু চক্রবর্তীর বাবা রাম প্রসাদের কাছে ফোনে টাকা ও স্বর্ণ কোথায় আছে জানতে চান জুবায়ের।

রাম প্রসাদ জানান, পৌনে তিনটার দিকে আমি আমার স্ত্রীর মোবাইলে ফোন করি। তখন ফোন ধরে ওই ছেলে। আমার কাছে জানতে চায় টাকা ও স্বর্ণ কোথায় রেখেছি। আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে সে ফোন কেটে দেয়। পরে বাসার সামনে গিয়ে দেখি আশাপাশের লোকজন মূল গেট বন্ধ করে রেখেছে, ভেতরে পুলিশ। তিনি আরও জানান, আমার মেয়ে ঋতু ৬ মাস ১৬ দিনের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। সন্তান হওয়ার পর স্বামীর বাড়ি চট্টগ্রামে যাওয়া কথা ছিল তার। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার চাই।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (তদন্ত) আমির খশরু জানান, হত্যার সাথে জড়িত জুবায়েরকে নিহতের পরিবারের কেউ চেনেন না। ওই পরিবারের সাথে তার কোন পরিচয় নেই। হঠাৎ করে ওই যুবক সেই বাড়িতে গিয়ে মা-মেয়েকে হত্যা করে। ঘটনার পর জুবায়েরের ব্যাগ থেকে নিহত ঋতুর গলার স্বর্ণের চেইন উদ্ধার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে চারটি ছুরি ও কয়েকটি হ্যান্ড গ্লাভস।

আটকৃত জুবায়ের নগরীর পাইকপাড়া এলাকার আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী ডাল ব্যবসায়ী শংকর রায় জানান, হঠাৎ উপর থেকে একজন নারী দৌড়ে নিচে নেমে চিৎকার করতে থাকেন। এসময় তার হাতে একটি বটি ছিলো। এ কারণে লোকজন ছুটে এসে মূল গেট বন্ধ করে দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে উপরে উঠে।

সদর মডেল থানার পুলিশ পরির্দশক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই ভবনের নীচে আমরা ফারজানা শিলা নামের এক নারীকে পাই। তিনি নিহত রুমার ছেলের স্ত্রী। পরে ৬য় তলায় ছুটে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ, দরজা ধাক্কা দিলে ভেতর থেকে জুবায়ের দরজা খুলে সামনে আসে। ওই সময় তার হাতে ছিল ছুরি। কৌশলে তার কাছ থেকে ছুরি কেড়ে নেয়ার পর তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে মা-মেয়েকে হত্যার বিষয়টি সে স্বীকার করেছে।

পাশের ফ্ল্যাটের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ওই ভবনের নিচতলা থেকে উপর তলার পর্যন্ত কয়েকটি ফ্ল্যাটের বেল চেপেছে জুবায়ের নামের সেই যুবক কিন্তু কেউ দরজা খোলেননি। এর আগে ওই যুবককে কখনও দেখেননি বলে জানান তারা।

আটকৃত জুবায়েরের বাবা আলাউদ্দিন মিয়া জানান, তিনি শহরের টানবাজারের লবণ ব্যবসায়ী। তার ছেলে জুবায়ের ২০১৩ সালে এইচএসসি পাস করার পর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়। তবে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় পড়ালেখা চালাতে পারেনি। গত এক-দেড় মাস ধরে তার ছেলের মধ্যে উদ্ভট আচরণ দেখা যায় বলে জানান তিনি।

জুবায়ের ছাড়া আর কেউ হত্যার সাথে জড়িত কিনা তা নিয়ে পুলিশের একাধিক টিম তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহ জামান।একুশে টেলিভিশন