মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘বৈষম্য দূর করতে মানবিক হওয়ার বিকল্প নেই’

‘বৈষম্য দূর করতে মানবিক হওয়ার বিকল্প নেই'

বর্তমান সরকার নারীর উন্নয়নে অনন্য সফলতা অর্জন করেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সকল ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার এবং সমানাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর
বর্তমানে নারী-পুরুষ একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার নিগড়ে কিছু লিঙ্গ বৈষম্য ঘটেই চলছে। মূল্যবোধের ঘাটতি, সদিচ্ছার অভাবে বর্তমানে চাকুরিজীবী মহিলাদের গর্ভকালীন ৬ মাস ছুটি নির্ধারণ করে দেওয়ার সত্ত্বেও কিছু বেসরকারি অফিস, কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয় ৪ মাস বৈতনিক গর্ভকালীন ছুটি প্রদান করলেও বাকী ২ মাস অবৈতনিক ছুটি অনুমোদন করছে, কিংবা ৪ মাস ছুটি কাটাতে বাধ্য করছে। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে ‘অফিস ফ্রম হোম’ কালীন সময়ে অফিস, অফিস অতিরিক্ত অনলাইনে মিটিং করার মত ঘটনা ঘটছে। চাকরির ক্ষেত্রে পরিবার হতে নারীদের সম্মতি না পাওয়া আমার মতে লিঙ্গ বৈষম্যর নিকৃষ্ট দিক।
এ ছাড়াও মেয়ে শিশুদের বিজ্ঞান এবং গণিত বিষয়ে অনুপোযুক্ত বলে মনে করা হয়। তাদেরকে মানবিক বিভাগ( Arts) ইতিমত বাধ্য করা হয় যা এক প্রকারের লিঙ্গ বৈষম্য।
লিঙ্গ বৈষম্যের ফলে কর্মক্ষম নারীরা অর্থ-উপার্জনের সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারলে দেশের শ্রমবাজারে অবদান রাখতে পারবে না এবং দেশের জি ডি পি বৃদ্ধি পাবে না। টেকসই উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যখাতে নারীদের এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন জেন্ডার সমতা। নারীগণ নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হলে মানব সম্পদে রূপান্তর হতে পারবেন। প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই কিছু গুণাবলী এবং প্রতিভা সুপ্ত অবস্থায় থাকে যা সঠিক পরিবেশে পূর্ণাঙ্গ বিকাশ লাভ করতে পারে। আমার সম্প্রদায়ে শিশু পরিচর্চার ক্ষেত্রে নারীদের (মা,নানি,দাদি) অন্যতম প্রধান বলে মনে করা হয়।
বিবাহের ক্ষেত্রেও ছেলে সন্তানের তুলনায় মেয়ে সন্তানের জন্য পিতা- মাতার উদ্বিগ্নতা থাকায় মেয়েদের দ্রুত বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থাকে । তবে মেয়ে শিশু পড়াশোনায় ভালো হলে কিছু শিথীলতা আনয়ন করা হয়। কতিপয় ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে নারীদের জন্য শিক্ষকতা,চিকিৎসা এবং নার্সিং পেশাকে কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। চ্যালেঞ্জিং সকল পেশায় নারীদের উপযুক্ত বলে মনে করা হয় না। তবে সে গণ্ডি পেরিয়ে নারীগণ সকল ক্ষেত্রে তাদের অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন উন্নয়নের জোয়ারে সাথে সাথে।
এ সকল হলো জৈবিক বিষয় যা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। তবে লৈঙ্গিক পরিচয়ের ভিত্তিতে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টিই হলো জেন্ডার বৈষম্য যা শুরু হয় আমাদের পরিবার থেকেই। পরবর্তীতে আমাদের সমাজ এটিকে প্রকটভাবে লালন করে। নারী কিংবা পুরুষ পরিচয়ের উদ্দেশ্য সকলকে মানুষের পরিচয়ে মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে শুরু হতে পারে মানবতার জয়গান ।

লেখক:রওনক আরা পারভীন, প্রভাষক সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু, ঝুলন্ত  লাশ উদ্ধার

‘বৈষম্য দূর করতে মানবিক হওয়ার বিকল্প নেই’

প্রকাশিত সময় : ১২:৫২:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০২২
বর্তমান সরকার নারীর উন্নয়নে অনন্য সফলতা অর্জন করেছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সকল ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার এবং সমানাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর
বর্তমানে নারী-পুরুষ একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। তবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার নিগড়ে কিছু লিঙ্গ বৈষম্য ঘটেই চলছে। মূল্যবোধের ঘাটতি, সদিচ্ছার অভাবে বর্তমানে চাকুরিজীবী মহিলাদের গর্ভকালীন ৬ মাস ছুটি নির্ধারণ করে দেওয়ার সত্ত্বেও কিছু বেসরকারি অফিস, কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয় ৪ মাস বৈতনিক গর্ভকালীন ছুটি প্রদান করলেও বাকী ২ মাস অবৈতনিক ছুটি অনুমোদন করছে, কিংবা ৪ মাস ছুটি কাটাতে বাধ্য করছে। এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে ‘অফিস ফ্রম হোম’ কালীন সময়ে অফিস, অফিস অতিরিক্ত অনলাইনে মিটিং করার মত ঘটনা ঘটছে। চাকরির ক্ষেত্রে পরিবার হতে নারীদের সম্মতি না পাওয়া আমার মতে লিঙ্গ বৈষম্যর নিকৃষ্ট দিক।
এ ছাড়াও মেয়ে শিশুদের বিজ্ঞান এবং গণিত বিষয়ে অনুপোযুক্ত বলে মনে করা হয়। তাদেরকে মানবিক বিভাগ( Arts) ইতিমত বাধ্য করা হয় যা এক প্রকারের লিঙ্গ বৈষম্য।
লিঙ্গ বৈষম্যের ফলে কর্মক্ষম নারীরা অর্থ-উপার্জনের সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারলে দেশের শ্রমবাজারে অবদান রাখতে পারবে না এবং দেশের জি ডি পি বৃদ্ধি পাবে না। টেকসই উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যখাতে নারীদের এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন জেন্ডার সমতা। নারীগণ নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হলে মানব সম্পদে রূপান্তর হতে পারবেন। প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই কিছু গুণাবলী এবং প্রতিভা সুপ্ত অবস্থায় থাকে যা সঠিক পরিবেশে পূর্ণাঙ্গ বিকাশ লাভ করতে পারে। আমার সম্প্রদায়ে শিশু পরিচর্চার ক্ষেত্রে নারীদের (মা,নানি,দাদি) অন্যতম প্রধান বলে মনে করা হয়।
বিবাহের ক্ষেত্রেও ছেলে সন্তানের তুলনায় মেয়ে সন্তানের জন্য পিতা- মাতার উদ্বিগ্নতা থাকায় মেয়েদের দ্রুত বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থাকে । তবে মেয়ে শিশু পড়াশোনায় ভালো হলে কিছু শিথীলতা আনয়ন করা হয়। কতিপয় ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে নারীদের জন্য শিক্ষকতা,চিকিৎসা এবং নার্সিং পেশাকে কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। চ্যালেঞ্জিং সকল পেশায় নারীদের উপযুক্ত বলে মনে করা হয় না। তবে সে গণ্ডি পেরিয়ে নারীগণ সকল ক্ষেত্রে তাদের অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন উন্নয়নের জোয়ারে সাথে সাথে।
এ সকল হলো জৈবিক বিষয় যা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত। তবে লৈঙ্গিক পরিচয়ের ভিত্তিতে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টিই হলো জেন্ডার বৈষম্য যা শুরু হয় আমাদের পরিবার থেকেই। পরবর্তীতে আমাদের সমাজ এটিকে প্রকটভাবে লালন করে। নারী কিংবা পুরুষ পরিচয়ের উদ্দেশ্য সকলকে মানুষের পরিচয়ে মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে শুরু হতে পারে মানবতার জয়গান ।

লেখক:রওনক আরা পারভীন, প্রভাষক সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়