মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একদিনেই ৬ লাখ! শনাক্তে এবার চীনকে টেক্কা দিল দক্ষিণ কোরিয়া

‘জিরো কোভিড’ নীতিতে চলা চীনে সংক্রমণের বহর হঠাৎ এতটাই বেড়ে গেছে যে, দেশটির একাধিক শহরে ফের শুরু হয়েছে লকডাউন। এদিকে প্রতিবেশি দক্ষিণ কোরিয়ার করোনা পরিস্থিতিও ঘুম হারাম করেছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের। 

দেশটির জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৬ লাখ ২১ হাজার ৩২৮ জন শনাক্ত হয়েছেন কিমের প্রতিপক্ষ দেশে! যা দক্ষিণ কোরিয়ায় এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর আগের দিনে শনাক্ত হন ৪ লাখ ৭৪১ জন।

মৃত্যুর নিরিখেও বৃহস্পতিবার রেকর্ড গড়েছে দেশটি। পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যা গত দু’বছর ধরে চলা অতিমারির মধ্যে সর্বাধিক।

এদিকে, একসঙ্গে ৬ লাখের অধিক মানুষ সংক্রমিত হওয়ায় দেশটিতে মোট আক্রান্ত সোয়া ৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কোরিয়া ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এজেন্সি (কেডিসিএ)। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমণ মূলত স্থানীয়ভাবেই ছড়িয়েছে।

অন্যদিকে, দ্রুত হাসপাতালের শয্যা খালি করতে শুরু করেছে প্রতিবেশি চীন। বুধবার প্রায় সাড়ে তিন হাজার নতুন ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলেছে। তড়িঘড়ি ব্যবস্থা না-নিলে ফের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

এ অবস্থায় চীনের বেশ কিছু শহরে ইতিমধ্যে লকডাউন জারি করা হয়েছে। সাংহাই শহরের প্রায় ১৭ লাখ মানুষ ঘরবন্দি। হংকং-এ হাসপাতালের সামনে রোগীদের দাঁড়িয়ে থাকার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রচুর অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে।

এই দু’টি দেশ ছাড়াও সংক্রমণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত আগেই মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রেও। পিছিয়ে নেই জার্মানি এবং ভিয়েতনামও।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় গোটা বিশ্বে আরও ১৮ লাখ ৬০ হাজার ৯৮২ জন শনাক্ত এবং ৬ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ৪৬ কোটি ৪৪ লাখ ৬২ হাজার ১১৫ জন আক্রান্ত এবং ৬০ লাখ ৮১ হাজার ৪০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সেই সূত্রে প্রশ্ন উঠছে, বিশ্বজুড়ে যেখানে টিকাকরণের হার এখন অনেক বেড়েছে, সেখানে সংক্রমণের হঠাৎ এই ঊর্ধ্বমুখী গতির কারণ কী? 

এর জবাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ টেকনিক্যাল দলের প্রধান মারিয়া ভ্যান খারকোভ জানান, বিধিনিষেধ যত শিথিল হবে তত সংক্রমণের বহর আরও বাড়বে। জনসংখ্যার অধিকাংশের টিকা নেয়া থাকলেও এ ক্ষেত্রে তাতে কিছু যায় আসে না। 

এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘‘এই সংক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনায় অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রতিষেধক আক্রান্তের শারীরিক অবস্থার বিশেষ অবনতির হাত থেকে রক্ষা করায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে, সংক্রমণের জেরে মৃত্যু আটকাতেও তা সক্ষম। তবে সংক্রমণ ঠেকাতে টিকার সেই অর্থে কোনো ভূমিকা কিন্তু নেই।’’

মারিয়া আরও জানান, এখন মূলত যে স্ট্রেনটি বিশ্বজুড়ে করোনার অস্তিত্বকে জানান দিচ্ছে, তা হলো- অতি-সংক্রামক বলে পরিচিত ওমিক্রন। দেখা যাচ্ছে, বিএ-১ এবং বিএ-২ নামে এর দুটি সাব-ভেরিয়েন্টই মূলত এই সংক্রমণ বৃদ্ধির মূল কান্ডারী। গত ৩০ দিনে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষায় উঠেছে এসেছে, এখনকার সংক্রমের ৯৯.৯ শতাংশই ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট। 

ডব্লিউএইচও-র তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সামগ্রিক সংক্রমণ শতাংশের নিরিখে প্রায় ৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। জানুয়ারি মাসের পর থেকে নিম্নমুখী গ্রাফে হঠাৎ এই ধাক্কা চিন্তার বলেই মনে করছে সংস্থাটি। 

এহেন পরিস্থিতির মোকাবিলায় ফের ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’ এবং বিচ্ছিন্নবাসের ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ারই প্রস্তাব দিয়েছে হু। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

একদিনেই ৬ লাখ! শনাক্তে এবার চীনকে টেক্কা দিল দক্ষিণ কোরিয়া

প্রকাশিত সময় : ০৩:১০:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০২২

‘জিরো কোভিড’ নীতিতে চলা চীনে সংক্রমণের বহর হঠাৎ এতটাই বেড়ে গেছে যে, দেশটির একাধিক শহরে ফের শুরু হয়েছে লকডাউন। এদিকে প্রতিবেশি দক্ষিণ কোরিয়ার করোনা পরিস্থিতিও ঘুম হারাম করেছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের। 

দেশটির জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৬ লাখ ২১ হাজার ৩২৮ জন শনাক্ত হয়েছেন কিমের প্রতিপক্ষ দেশে! যা দক্ষিণ কোরিয়ায় এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর আগের দিনে শনাক্ত হন ৪ লাখ ৭৪১ জন।

মৃত্যুর নিরিখেও বৃহস্পতিবার রেকর্ড গড়েছে দেশটি। পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যা গত দু’বছর ধরে চলা অতিমারির মধ্যে সর্বাধিক।

এদিকে, একসঙ্গে ৬ লাখের অধিক মানুষ সংক্রমিত হওয়ায় দেশটিতে মোট আক্রান্ত সোয়া ৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কোরিয়া ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এজেন্সি (কেডিসিএ)। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমণ মূলত স্থানীয়ভাবেই ছড়িয়েছে।

অন্যদিকে, দ্রুত হাসপাতালের শয্যা খালি করতে শুরু করেছে প্রতিবেশি চীন। বুধবার প্রায় সাড়ে তিন হাজার নতুন ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলেছে। তড়িঘড়ি ব্যবস্থা না-নিলে ফের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

এ অবস্থায় চীনের বেশ কিছু শহরে ইতিমধ্যে লকডাউন জারি করা হয়েছে। সাংহাই শহরের প্রায় ১৭ লাখ মানুষ ঘরবন্দি। হংকং-এ হাসপাতালের সামনে রোগীদের দাঁড়িয়ে থাকার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রচুর অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে।

এই দু’টি দেশ ছাড়াও সংক্রমণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত আগেই মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রেও। পিছিয়ে নেই জার্মানি এবং ভিয়েতনামও।

এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় গোটা বিশ্বে আরও ১৮ লাখ ৬০ হাজার ৯৮২ জন শনাক্ত এবং ৬ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ৪৬ কোটি ৪৪ লাখ ৬২ হাজার ১১৫ জন আক্রান্ত এবং ৬০ লাখ ৮১ হাজার ৪০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সেই সূত্রে প্রশ্ন উঠছে, বিশ্বজুড়ে যেখানে টিকাকরণের হার এখন অনেক বেড়েছে, সেখানে সংক্রমণের হঠাৎ এই ঊর্ধ্বমুখী গতির কারণ কী? 

এর জবাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ টেকনিক্যাল দলের প্রধান মারিয়া ভ্যান খারকোভ জানান, বিধিনিষেধ যত শিথিল হবে তত সংক্রমণের বহর আরও বাড়বে। জনসংখ্যার অধিকাংশের টিকা নেয়া থাকলেও এ ক্ষেত্রে তাতে কিছু যায় আসে না। 

এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘‘এই সংক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনায় অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রতিষেধক আক্রান্তের শারীরিক অবস্থার বিশেষ অবনতির হাত থেকে রক্ষা করায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে, সংক্রমণের জেরে মৃত্যু আটকাতেও তা সক্ষম। তবে সংক্রমণ ঠেকাতে টিকার সেই অর্থে কোনো ভূমিকা কিন্তু নেই।’’

মারিয়া আরও জানান, এখন মূলত যে স্ট্রেনটি বিশ্বজুড়ে করোনার অস্তিত্বকে জানান দিচ্ছে, তা হলো- অতি-সংক্রামক বলে পরিচিত ওমিক্রন। দেখা যাচ্ছে, বিএ-১ এবং বিএ-২ নামে এর দুটি সাব-ভেরিয়েন্টই মূলত এই সংক্রমণ বৃদ্ধির মূল কান্ডারী। গত ৩০ দিনে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষায় উঠেছে এসেছে, এখনকার সংক্রমের ৯৯.৯ শতাংশই ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট। 

ডব্লিউএইচও-র তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সামগ্রিক সংক্রমণ শতাংশের নিরিখে প্রায় ৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। জানুয়ারি মাসের পর থেকে নিম্নমুখী গ্রাফে হঠাৎ এই ধাক্কা চিন্তার বলেই মনে করছে সংস্থাটি। 

এহেন পরিস্থিতির মোকাবিলায় ফের ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’ এবং বিচ্ছিন্নবাসের ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ারই প্রস্তাব দিয়েছে হু।