দন্তচিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুলকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে যে চারজন গ্রেপ্তার হয়েছে তারা পেশাদার ছিনতাইকারী বলে জানিয়েছে পুলিশ। ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করেন তারা। রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী ও সাভার এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন- রায়হান ওরফে সোহেল ওরফে আপন, রাসেল হোসেন হাওলাদার, আরিয়ান খান হৃদয় ও সোলায়মান। ছিনতাই হওয়া বুলবুলের মোবাইলফোন ও ছুরিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে বুধবার বিকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আকতার গ্রেপ্তার চার জনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এসময় ডিএমপির মিডিয়া মুখপাত্র ফারুক হোসেন, ডিবির যুগ্ম কমিশনার হলেন হারুন অর রশীদ, ডিবির মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ঘটনার পর বুলবুলের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও ছিনতাই দুটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্তে নামা হয়। এরপর চারজন গ্রেপ্তার হলে তাদের কাছে বুলবুলের মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায়। তখনই তারা নিশ্চিত হয়েছেন এই চারজনই বুলবুল হত্যার সঙ্গে জড়িত।’
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘ঘটনার দিন তারা পাঁচজনের একটি দল ছিল ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়। পরে ওই স্থানে ওতপেতে থাকে ছিনতাইয়ের জন্য। সাড়ে পাঁচটার দিকে ডাক্তার বুলবুলকে তারা গতিরোধ করে ঘিরে ধরেন। এসময় বুলবুলের মোবাইল ও টাকা পয়সা ছিনতাই করে নেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এতে বাধা দিলে তাদের সঙ্গে বুলবুলের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে বুলবুলের পায়ের উরুতে তারা ছুরিকাঘাত করেন। ছিনতাইয়ের সময় তারা শুধুমাত্র বুলবুলের মোবাইল ফোনটি নিলেও অন্য কিছু নিতে পারেনি।’
কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ছুরিকাঘাতের ফলে বুলবুলের শরীর থেকে প্রচুর রক্ত ঝরতে থাকে। এতে ভয় পেয়ে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে বিহঙ্গ পরিবহনের চালক ও তার সহকারী বুলবুলকে উদ্ধার করে আল-হেলাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তারা ওই ভুক্তভোগীকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তার মৃত্যু ঘোষণা করে।’ বুলবুলের মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো অবহেলা আছে কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘যেহেতু মানুষের আর্টারি কাটা গেলে বাঁচানো সম্ভব হয় না। আল-হেলাল হাসপাতালে আর্টারি জোড়া লাগানোর সক্ষমতা ছিল কিনা সেটা আমরা তা যাচাই করে দেখব।’ ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ আছে কি-না জানতে গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। আর এটি হত্যা ও ডাকাতি মামলা হিসাবে চার্জশিট দেয়া হবে।’ ছিনতাইকারীদের ব্যাপারে হাফিজ আক্তার জানান, গ্রেপ্তার রায়হান সোহেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। এর আগে ছিনতাইয়ের ঘটনায় রায়হান ডিবির হাতে গ্রেপ্তারও হন। কিছুদিন আগে সে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। রাসেল চলতি মাসের শুরুতে ছিনতাইয়ের মামলায় জামিনে বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় একজন পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
গত শনিবার সকালে রাজধানীর কাজীপাড়ায় মেট্রোরেলের ২৮৭ নম্বর পেলারের কাছে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল। তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শেওড়াপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। এদিকে আহমেদ মাহী বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী আকতার বলেন, ‘চারজন গ্রেপ্তারের বিষয়টি শুনেছি। আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ট তদন্ত হোক। এর মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসুক। আর কোনো সন্তানের যেন তার বাবাকে এভাবে হারাতে না হয়।ডেল্টা টাইমস্

দৈনিক দেশ নিউজ ডটকম ডেস্ক 

























