ইউক্রেনের ঐতিহাসিক চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছেড়ে চলে গেছে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর্মকর্তার বরাতে শুক্রবার (১ এপ্রিল) প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যটি জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ।
এর আগে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের প্রথম দিনেই ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পরমাণু স্থাপনাটি দখল করে নিয়েছিল রুশ সৈন্যরা। দখলের এক মাসেরও অধিক সময় পর সাবেক এই পারমাণবিক কেন্দ্রটি ছেড়ে গেল রাশিয়া। অবশ্য এর আগেই রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পরমাণু কেন্দ্রটির একটি গবেষণাগার ‘লুট ও ধ্বংস’ করার অভিযোগ উঠেছে।
চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর্মীদের বরাতে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা এনারগোএটম জানায়- বর্তমানে সেখানে আর কোনো ‘বহিরাগত’ নেই। এর আগে সংস্থাটি বলেছিল, ছোট একটি দলকে রেখে রুশ সামরিক বাহিনীর একটি বহর বেলারুশিয়ান সীমান্তের দিকে যাত্রা শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বিবৃতির মাধ্যমে এনারগোএটম জানিয়েছিল, আজ সকালে, হানাদাররা চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার সৈন্যরা চেরনোবিল প্লান্টের সবচেয়ে দূষিত অংশে পরিখা খনন করেছে এবং বিকিরণের ‘উল্লেখযোগ্য ডোজ’ পেয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। কেউ কেউ বেলারুশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলেও অসমর্থিত সূত্রের খবরে যানা যাচ্ছে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর্মীদের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, কিছু সৈন্যের ধারণা ছিল না যে তারা একটি বিকিরণ অঞ্চলে রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বিবৃতির মাধ্যমে বলেছে, তারা এ ধরনের কোনো রিপোর্টের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
এর আগে রুশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রটির একটি গবেষণাগার ‘লুট ও ধ্বংস’ করার অভিযোগ করেছিল ইউক্রেন। ইউক্রেনীয় স্টেট এজেন্সি ফর এক্সক্লুশন জোন ম্যানেজমেন্ট গত ২২ মার্চ জানিয়েছিল, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী তাদের সেন্ট্রাল অ্যানালাইটিক্যাল ল্যাবরেটরিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই ল্যাবরেটরিটি বহু তেজস্ক্রিয় বর্জ্য প্রক্রিয়া করে থাকে।
রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জানায়, চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এই পরীক্ষাগারে ‘অত্যন্ত সক্রিয় নমুনা এবং রেডিওনুক্লাইডের নমুনা রয়েছে; যা বর্তমানে শত্রুদের অধীনে রয়েছে। সংস্থাটির দাবি- প্রায় ৬০ লাখ ইউরো ব্যয়ে স্থাপন করা এই গবেষণাগারে ‘মূল্যবান বিশ্লেষণাত্মক সরঞ্জাম’ রয়েছে যা ইউরোপের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নামে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়ান সেনাবাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম কোনো রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই আক্রমণ শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে বৃষ্টির মতো রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে।
সামরিক অভিযান শুরুর প্রথম দিনেই চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করে নিয়েছিল রুশ সৈন্যরা। দখলের পর পরমাণুকেন্দ্রের ভেতরেই কর্মীদের আটকে রেখেছিল রাশিয়ান সেনা সদস্যরা। এর কয়েক সপ্তাহ পরে অবশ্য তাদের কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দিনটি ‘চেরনোবিলের বিপর্যয়’ হিসেবে পরিচিত।সোভিয়েতের পতনের পর চেরনোবিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমান ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই পারমাণবিক দুর্ঘটনাকে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ও বিপর্যয় হিসেবে ধারণা করা হয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক /দৈনিক দেশ নিউজ ডটকম 
























