কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সিংহী (নদী) আর বেঁচে নেই। দীর্ঘ তিন মাস ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেওয়ার পরও বাঁচানো গেলো না তাকে। আজ শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে পার্কের সিংহের বেস্টনিতে ‘নদী’ মারা যায়।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্তকর্তা মো.মাজহারুল ইসলাম। এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি জিডি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্মকর্তা মো.মাজহারুল ইসলাম বলেন, ২০১১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর হীরার ঘরে জন্ম নেয় নদী। দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর খুব ভালোভাবেই দিন পার করছিল সিংহী। এ সময়ের মধ্যে নদী (সিংহী) ও সম্রাটের (সিংহ) ঘরে বাচ্চাও জন্ম নিয়েছে।
২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তাদের নির্ধারিত বেস্টনিতে সম্রাট (সিংহ) ও নদী (সিংহী) খেলা করছিল। খেলতে খেলতে তাদের মধ্যে মারামারি লেগে যায়। এতে সম্রাট (সিংহ) ও নদী (সিংহী) আঘাত প্রাপ্ত হয়। তাদের মধ্যে সম্রাট (সিংহ) খুব আঘাত প্রাপ্ত হয়।
ওই সময় সাফারি পার্কে কোনো ভেটেরিনারি চিকিৎসক না থাকায় উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দীর চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠে সম্রাট (সিংহ) ও নদী (সিংহী)। পরে তাদের আবারও তাদের বেস্টনিতে রাখা হয়।
গত ২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সম্রাট ও নদী মিলনের সময় আবারও মারামারিতে জড়িয়ে পড়লে উভয়েই আঘাত প্রাপ্ত হয়। এ সময় সম্রাটের নখের আচড়ে নদীর গলায় জখম হয়। পরে সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমানের পরামর্শে ভার্চুয়ালি চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এই চিকিৎসায় সম্রাট সুস্থ হয়ে উঠলেও গলার ক্ষতস্থান থেকে পানি ঝরতে থাকে নদীর।
নদীর গলার পানি ঝরা না কমায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বর্তমান ভেটেরেনারী চিকিৎসক ডা.হাতেম সাজ্জাত জুলকার নাইন গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসা প্রদান করেন। তারপরও নদীর কোন অগ্রগতি না হওয়ায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সাইয়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী এবং পার্কে চিকিৎসকসহ পাঁচ সদস্যসের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপরও নদীর (সিংহী) কোনো অগ্রগতি হয়নি। উপরন্তু দিন দিন আরও দুর্বল হয়ে পড়ে নদী (সিংহী)।এক পর্যায়ে খাবার গ্রহণও বন্ধ করে দেয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুপন নন্দী বলেন, সিংহীর গলায় যে আঘাত ছিল তা শুকিয়ে গিয়েছিল। মূলত এর বয়স শেষের দিকে। একটা সিংহী বাঁচে ১২ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত। এই সিংহী এখন বার্ধক্য অবস্থায় পৌঁছে গেছে। যার কারণে তার রুচি চলে যাচ্ছে। শরীরের অ্যান্টিবডি কমে গেছে। সে যখন খাবার গ্রহণ বন্ধ করে দিয়েছে তাকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন স্যালাইনও দেওয়া হয়েছিল। নদীকে বাঁচাতে সব ধরনের চেষ্টা করেছি কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্মকর্তা মো.মাজহারুল ইসলাম আরও বলেন, সব ধরনের চিকিৎসা তাকে দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত শুক্রবার নদীর (সিংহী) শরীর থেকে রক্ত নিয়ে চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি এন্ড সাইন্সসেস বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল। রিপোর্টে তার শরীরে ভাইরাল ইনফেকশন হয়েছে বলে জানান। সিংহী ‘নদী’র ময়নাতদন্ত শেষে পার্কের এক জায়গায় তাকে পুতে ফেলা হয়েছে।

রিপোর্টারের নাম 






















