ডা. জাহেদ পারভেজ:একদিকে রোজা, অন্যদিকে প্রচ- গরম। রোদ, গরম, হঠাৎ বৃষ্টি ও শরীর ঘেমে যাওয়ায় আমাদের ত্বকে দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। আসুন, সমস্যার কারণ জানি এবং সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
ঘাম থেকে ঘামাচি : ত্বকের এক যন্ত্রণার নাম ঘামাচি। শরীর ঘেমে ঘামগ্রন্থির নালি বন্ধ হয়ে গেলে ঘামের বিভিন্ন উপাদান ঠিকমতো বের হতে পারে না। এ উপাদানগুলোই ত্বকের বিভিন্ন স্তরে জমা হয়ে তৈরি করে ঘামাচি। ঘামাচি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতাই প্রধান উপায়। যথাসম্ভব শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকতে পারলে ভালো। সম্ভব না হলে ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা চালু রাখতে হবে। দরজা-জানালা খোলা রাখতে হবে। বরফের সেঁক বা গোসলে নিমপাতার ব্যবহার বেশ ভালো কাজ দেয়। ক্যালামিন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। এই লম্বা ছুটিতে গ্রামে পুকুরপাড় বা খোলা আকাশের নিচে থাকতে পারলে ভালো।
ব্রণ : গরমকালে ব্রণের সমস্যা বাড়ে। কিশোর-কিশোরী মুখে যে ব্রণ দেখা দেয়, তা সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। তাই ত্বকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভালো। মুখের ত্বক অপরিষ্কার থাকলে মূলত এটি হয়। যাদের ত্বক তৈলাক্ত ধরনের, তারা এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে বারবার ভালো করে মুখ ধুতে হবে। কোনোভাবেই যেন ত্বকে তেল-ময়লা বসে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অযথা অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না। বেশি বেশি পানির ঝাপসা দিন। আলাদা চিরুনি, তোয়ালে ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
অ্যালার্জির চিকিৎসা : এ সময় অনেকে অ্যালার্জি-জনিত সমস্যায় ভোগেন। বাতাসে ধুলাবালি, ফুলের রেণু ইত্যাদির কারণে এমন হয়ে থাকে। কারও কারও ক্ষেত্রে ত্বক ফুলে ওঠে, লালচে হয়ে যায়, চুলকায়। অনেকের চামড়া শুকনো খসখসে হয়ে যায়। অ্যাকজিমার মতো জটিলতা হয়। যাদের ত্বক অ্যালার্জিপ্রবণ, তারা এ সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবেন। বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরে নেবেন। ঘরবাড়ি ঝাড়ু দিতে চাইলে নাক ও মুখ ঢেকে নেবেন। অ্যালার্জি উদ্রেককারী খাবার এড়িয়ে চলুন। সমস্যা বেশি হলে অ্যান্টি-অ্যালার্জিক ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে পারেন।
ঘাম থেকে দুর্গন্ধ : ঘাম সরাসরি দেহের বিপাকক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। দেহের অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি থেকে যে ঘাম উৎপন্ন হয়, সেই ঘামে দুর্গন্ধ হয়। ঘামের কিন্তু নিজস্ব কোনো গন্ধ নেই। ঘামে একধরনের ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি হয়। তারাই এই দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। এছাড়া বগলসহ শরীরের বিভিন্ন অবাঞ্ছিত লোম এ দুর্গন্ধের জন্য দায়ী। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাই এর প্রধান প্রতিকার। পাতলা-ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। যতটা সম্ভব রোদ বা গরম আবহাওয়া এড়িয়ে চলুন। দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন।
সানবার্ন যে কারণে হয় : প্রখর রোদে সূর্যরশ্মির কারণে সানবার্ন হয়ে থাকে। ত্বকে কালো বা লালচে দাগ হয়। সাধারণত শিশু এবং যাদের গায়ের রঙ বেশি ফর্সা, তাদের এ সমস্যা বেশি হয়। সানবার্ন থেকে রক্ষা পেতে এ সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা ভালো। বাইরে বের হওয়ার আগে টুপি ও সানগ্লাস ব্যবহারের অভ্যাস করুন। ত্বকের জন্য উপকারী খাবার খেতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান করুন সেহরি ও ইফতারের পর।
ঘরোয়া যত্ন : গোসলের আগে ত্বকে নারিকেল বা জলপাই তেল ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে ত্বক নরম থাকে, উজ্জ্বলতা বাড়ে। মাথায় খুশকি হলে তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে খুশকি কমে যায়। সপ্তাহে দুদিন নিমপাতা সেদ্ধ পানিতে দিয়ে গোসল করলে তা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়।
লেখক : চিকিৎসক ও নিবন্ধকার
সহকারী অধ্যাপক, ত্বক-চর্ম-যৌন ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল
চেম্বার : ডা. জাহেদ’স এন্ড স্কিনিক হাসপাতাল, ১৫২/১/এইচ (ষষ্ঠতলা), গ্রিনরোড, পান্থপথ মোড়, ঢাকা। ০১৫৬৭৮৪৫৪১৯; ০১৭০৭০১১২০০

দৈনিক দেশ নিউজ ডটকম ডেস্ক 























