রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। ‘রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২২’ পেয়েছেন অধ্যাপক সিদ্দিকা মাহমুদা।
সোমবার একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে রবীন্দ্র-গবেষণায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক সিদ্দিকা মাহমুদাকে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত এই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকের হাতে পুষ্পস্তবক, সনদ, সম্মাননা-স্মারক ও পুরস্কারের অর্থমূল্য দুই লাখ টাকার চেক তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন ও মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রান্তজনের রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক একক বক্তৃতা প্রদান করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাধন ঘোষ। রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করেন অধ্যাপক সিদ্দিকা মাহমুদা। কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডালিয়া আহমেদ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী বুলবুল ইসলাম ও অণিমা রায়। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সায়েরা হাবীব।
রবীন্দ্র-পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে অধ্যাপক সিদ্দিকা মাহমুদা বলেন, বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কার-প্রাপ্তি জীবনের বিশেষ অর্জন। এ পুরস্কার রবীন্দ্রগবেষণা ও চর্চায় আরো নিবিষ্ট হওয়ার প্রেরণা জোগাবে।
সভাপতির বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, রবীন্দ্রনাথ একই সঙ্গে বাঙালি এবং বিশ্বমানব। তিনি তার জীবন ও সৃষ্টিতে মূলত পূর্ববঙ্গের প্রান্তজনের হৃদয়ের ছবি এবং সংগ্রামের আলেখ্য অঙ্কন করেছেন নিপুণ শিল্পীর হাতে। রবীন্দ্র-মহাভুবন মূলত প্রান্তজনেরই ভুবন।
অধ্যাপক সিদ্দিকা মাহমুদার পরিচিতি
অধ্যাপক সিদ্দিকা মাহমুদা ১৯৫১ সালের ১৫ এপ্রিল খুলনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি. এ অনার্স ও এম. এ উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এম.এ পর্যায়ে ‘রবীন্দ্রনাথের গদ্যকবিতা: চেতনা ও চিত্রকল্প’ শীর্ষক গবেষণা-অভিসন্দর্ভ উপস্থাপন করেন এবং ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি ১৯৯০ সালে ‘সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিমানস ও কাব্য’ শীর্ষক গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে পিএইচ.ডি অর্জন করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি অধ্যাপক হন। ২০১৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
অধ্যাপক মাহমুদা যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত ফেলোশিপপ্রাপ্ত হয়ে ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত লন্ডন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ-এ চল্লিশের বাংলা কবিতা বিষয়ে এক বছর পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করেন।
সিদ্দিকা মাহমুদার প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ হলো- রবীন্দ্রনাথের গদ্যকবিতা: চেতনা ও চিত্রকল্প, রবীন্দ্রনাথ: ‘মহুয়া’, সুধীন্দ্রনাথ: কবি ও কাব্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, এম. ফাতেমা খানম, সা’দত আলি আখন্দ।
রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অধ্যাপক সিদ্দিকা মাহমুদার রচিত উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধসমূহ হলো- রবীন্দ্রনাথের গদ্যকবিতা: চেতনা ও চিত্রকল্প, রবীন্দ্রকাব্যে চেতনা ও চিত্রকল্প, পুনশ্চ-সীমার মাঝে অসীম, রবীন্দ্রনাথের গদ্যকবিতা: প্রতীক প্রসঙ্গ, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তা, রবীন্দ্রদৃষ্টিতে আধুনিক সভ্যতা, চল্লিশ দশকের কবি রবীন্দ্রনাথ, আকাশপ্রদীপ-এর রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথের ব্যাকরণ-ভাবনা, জন্মদিনের কবিতাগুচ্ছে রবীন্দ্রনাথ।