বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চীনে উইঘুর মুসলমান বন্দি শিবিরের ভয়াবহ তথ্য ফাঁস

চীন সরকারের কম্পিউটার হ্যাক করে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ তথ্য যা বিবিসির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে তাতে চীনের প্রত্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলের শিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের আটক কেন্দ্রে রেখে দেবার গোপন প্রক্রিয়া সম্পর্কে নজিরবিহীন তথ্য সামনে এসেছে।

নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা এ ধরনের অনেকগুলো নথি থেকে দেখা গেছে, দেশটির সংখ্যালঘু উইঘুর এবং টার্কিক সম্প্রদায়ের মানুষদের ইসলামী ধর্মবিশ্বাসের কোনরকম চিহ্ন দেখা গেলে তাদের দীর্ঘ কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

ঐ এলাকার পুলিশের কম্পিউটার সার্ভার হ্যাক করে জোগাড় করা বিশাল এই তথ্যভাণ্ডারে রয়েছে, শিনজিয়াংএর চূড়ান্ত গোপনীয়তায় ঢাকা পদ্ধতির একেবারে কেন্দ্রে থাকা হাজার হাজার ফটোগ্রাফ এবং আটক কেন্দ্র থেকে পালানোর চেষ্টা করলেই গুলি করে হত্যার নীতি বিষয়ক নানা সাক্ষ্যপ্রমাণ।

ফাঁস হওয়া কিছু কিছু ছবিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে বন্দীদের মাথায় কালো হুড এবং শরীরে শেকল বেঁধে নতি স্বীকারে বাধ্য করার কৌশল প্রয়োগ করতে। ‘শিনজিয়াং পুলিশ ফাইল’ নামে পরিচিত এইসব নথি বিবিসির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে এ বছরের গোড়ার দিকে।

গত কয়েক মাস ধরে এসব নথির সত্যতা যাচাই ও অনুসন্ধানের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে এসেছে ওই এলাকায় উইঘুর এবং টার্কিক সম্প্রদায়ের মানুষদের ধর্ম ও সংস্কৃতির যে কোনরকম চিহ্ন দেখলেই তাদের বন্দী করার প্রক্রিয়া নিয়ে ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ‍্য – যেসব তথ্য আদান প্রদানের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত আছেন এমনকি চীনা নেতা শি জিনপিংও।

গোপন এসব দলিল প্রকাশ করা হল এমন এক সময় যখন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট চীনের শিনজিয়াং সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক বিবৃতিতে চীন সরকার বিবিসিকে বলেছে, চীন সরকার সন্ত্রাস দমন পদক্ষেপ নেবার ফলে শিনজিয়াংয়ে যে শান্তি ও সমৃদ্ধি এসেছে তা, তাদের ভাষায়, সবরকম ‘মিথ্য প্রচারণার’ সবচেয়ে ভালো জবাব।চীন সরকার দাবি করে যে শিনজিয়াং জুড়ে ২০১৭ সালে এই ‘সংশোধন কেন্দ্রগুলো’ তৈরি করা হয় এবং তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এগুলো নিছকই স্কুল। কিন্তু হ্যাক করা দলিলে অভ্যন্তরীণ পুলিশ বাহিনীর প্রতি নির্দেশ, রক্ষীদের ডিউটির সময় এবং বন্দীদের অবস্থার যেসব ছবি প্রথমবারের মত সামনে এসেছে তাতে এগুলোকে নিছক স্কুল বলা চলে না বলে বিবিসি বলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

চীনে উইঘুর মুসলমান বন্দি শিবিরের ভয়াবহ তথ্য ফাঁস

প্রকাশিত সময় : ১১:৫৪:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ মে ২০২২

চীন সরকারের কম্পিউটার হ্যাক করে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ তথ্য যা বিবিসির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে তাতে চীনের প্রত্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলের শিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের আটক কেন্দ্রে রেখে দেবার গোপন প্রক্রিয়া সম্পর্কে নজিরবিহীন তথ্য সামনে এসেছে।

নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা এ ধরনের অনেকগুলো নথি থেকে দেখা গেছে, দেশটির সংখ্যালঘু উইঘুর এবং টার্কিক সম্প্রদায়ের মানুষদের ইসলামী ধর্মবিশ্বাসের কোনরকম চিহ্ন দেখা গেলে তাদের দীর্ঘ কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

ঐ এলাকার পুলিশের কম্পিউটার সার্ভার হ্যাক করে জোগাড় করা বিশাল এই তথ্যভাণ্ডারে রয়েছে, শিনজিয়াংএর চূড়ান্ত গোপনীয়তায় ঢাকা পদ্ধতির একেবারে কেন্দ্রে থাকা হাজার হাজার ফটোগ্রাফ এবং আটক কেন্দ্র থেকে পালানোর চেষ্টা করলেই গুলি করে হত্যার নীতি বিষয়ক নানা সাক্ষ্যপ্রমাণ।

ফাঁস হওয়া কিছু কিছু ছবিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে বন্দীদের মাথায় কালো হুড এবং শরীরে শেকল বেঁধে নতি স্বীকারে বাধ্য করার কৌশল প্রয়োগ করতে। ‘শিনজিয়াং পুলিশ ফাইল’ নামে পরিচিত এইসব নথি বিবিসির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে এ বছরের গোড়ার দিকে।

গত কয়েক মাস ধরে এসব নথির সত্যতা যাচাই ও অনুসন্ধানের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে এসেছে ওই এলাকায় উইঘুর এবং টার্কিক সম্প্রদায়ের মানুষদের ধর্ম ও সংস্কৃতির যে কোনরকম চিহ্ন দেখলেই তাদের বন্দী করার প্রক্রিয়া নিয়ে ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ‍্য – যেসব তথ্য আদান প্রদানের প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত আছেন এমনকি চীনা নেতা শি জিনপিংও।

গোপন এসব দলিল প্রকাশ করা হল এমন এক সময় যখন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট চীনের শিনজিয়াং সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এক বিবৃতিতে চীন সরকার বিবিসিকে বলেছে, চীন সরকার সন্ত্রাস দমন পদক্ষেপ নেবার ফলে শিনজিয়াংয়ে যে শান্তি ও সমৃদ্ধি এসেছে তা, তাদের ভাষায়, সবরকম ‘মিথ্য প্রচারণার’ সবচেয়ে ভালো জবাব।চীন সরকার দাবি করে যে শিনজিয়াং জুড়ে ২০১৭ সালে এই ‘সংশোধন কেন্দ্রগুলো’ তৈরি করা হয় এবং তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এগুলো নিছকই স্কুল। কিন্তু হ্যাক করা দলিলে অভ্যন্তরীণ পুলিশ বাহিনীর প্রতি নির্দেশ, রক্ষীদের ডিউটির সময় এবং বন্দীদের অবস্থার যেসব ছবি প্রথমবারের মত সামনে এসেছে তাতে এগুলোকে নিছক স্কুল বলা চলে না বলে বিবিসি বলছে।