শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন সার্টিফিকেট দেব আর ছেড়ে দেব তাহলে হবে না ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর বেসরকারি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের সভাপতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালগুলোকে শুধু ভাবলে হবে না যে শিক্ষার্থী ভর্তি নেব, শিক্ষা দেব, সার্টিফিকেট দেব আর ছেড়ে দেব। তাহলে হবে না। শিক্ষার্থীকে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে হলে শেখাতে হবে কী করে তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জানতে হবে এবং সেভাবে কাজ করতে হবে।’
আপনাদের মেধা, আপনাদের দক্ষতা-যোগ্যতা-শ্রম-অধ্যবসায় দিয়ে আপনারা লেগে থাকবেন। লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই। খেয়াল রাখবেন, সেই সাফল্য যেন কখনো কোনো অসততার কলুষতার কালিমা লিপ্ত না হয়।’ তিনি সাফল্য পাওয়ার পর সমাজের সবার প্রতি নিজেদের দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবর্তনে উল্লাস-উচ্ছ্বাসে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা । ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। বিভিন্ন রঙের পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুনে সজ্জিত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে দিনটি ধরে রাখতে চলছে ক্যামেরায় একের পর এক ক্লিক। সমাবর্তনের ক্যাপ ছুড়ে দিয়ে বাঁধভাঙা উল্লাসে আকাশ ছুঁতে চাইছেন কেউ কেউ।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন- বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিক ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ।
উপস্থিত ছিলেন- বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার প্রফেসর সাইদুর রহমান খান এবং বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এম ওসমান গণি তালুকদার।
মাগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কখনো মানের সাথে আপস করে না।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘বর্তমানে সবাই পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত। কে কতটুকু শিখছে তা নিয়ে আমরা খুব বেশি ভাবিত নই। আমাদের অভিভাবক, আমাদের শিক্ষকমণ্ডলী সবাই সন্তানদের ভাল রেজাল্টের দিকে নজর দিচ্ছেন। পাঠ্যপুস্তকের পাতার মধ্যে তাদের আটকে রেখেছেন। কিন্তু জীবনটা তো অনেক বড়। জীবনটাতো শুধু পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে আটকে থাকে না।’ সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি আমাদের কতটুকু আছে?
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে মোট ১৫২৭ জন গ্রাজুয়েটকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এদিন দুইজনকে চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড ও ৯ জনকে ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম ও ফার্মেসি বিভাগের আনিকা তাহসিন।
ভাইস চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের আলেয়া আক্তার মৌসুমী, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের মো. সাজেদুর রহমান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মো. নূর নবী, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশাল কর্মকার, ইংরেজি বিভাগের ইসরাত জাহান, আইন ও মানবাধিকার বিভাগের মো. সাজ্জাক হোসেন ও ফার্মেসি বিভাগের আনিকা তাহসিন, সমাজবিজ্ঞানের আলফা আলম ও অর্থনীতি বিভাগের মো. সোহানুর রহমান।
সমাবর্তনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
এছাড়া বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি বিভাগের গ্রাজুয়েটদের অভিভাবক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবর্তনের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত ব্যান্ড সঙ্গীত দল ওয়ারফেজ , জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী সামিনা চৌধুরী ও এই প্রজন্মের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী ফাতিমা তুয যাহরা ঐশীও সঙ্গীত পরিবেশন করেন।