বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মায়ের ‘না’, সবার মতামত শুনে সিদ্ধান্ত নেবেন ফাইয়াজের বাবা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পিটুনিতে নিহত আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজও এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে বুয়েটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, ৪৫০তম মেধা স্কোর অর্জন করে যন্ত্রকৌশল বিভাগের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তবে বুয়েটে ভর্তি বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ফাইয়াজের পরিবার। 

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় আবরার ফাইয়াজ বলেন,‘ভাইয়ার ইচ্ছানুযায়ী বুয়েটে ভর্তি হওয়ার চান্স পাওয়াটা ছিল আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। রেজাল্ট শুনে খুশি হয়েছি, তবে ভর্তি হবো কিনা তা পারিবারিক সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত হবে।’

ফাইয়াজের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘গাজীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্সে ফাইয়াজকে ভর্তি করিয়েছি। বুয়েটে ভর্তি করানো হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’

তবে নিহত আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন ছোট ছেলেকে একই প্রতিষ্ঠানে পড়তে পাঠাতে নারাজ।

তিনি বলেন, ‘ফাইয়াজ মেধাতালিকায় ৪৫০তম স্থান অধিকার করেছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে তিনি ভর্তি হতে পারবে। তবে বুয়েটে বড় ছেলেকে ভর্তি করে আমার পরিবার যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, সেই নির্মম কষ্টও ও যন্ত্রণার মধ্যে নতুন করে আর পড়তে চাই না। ফাইয়াজকে তো কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি করেছি। ওখানেই ভালো। একসময় যে আবেগের বশে বড় ছেলেকে বুয়েটে ভর্তি করিয়েছিলাম সেই আবেগ আজ শঙ্কায় পরিণত হয়েছে আমার পরিবারের জন্য। বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে পড়তে দিয়ে আমার মতো আর কোন মা যেন অভাগী না হয়।’

এভাবেই অশ্রুসিক্ত ও আড়ষ্ট গলায় প্রতিক্রিয়া জানান তিনি, ‘চার বছর পূর্বে অনেক স্বপ্ন-আবেগ নিয়ে ফাহাদকে বুয়েটে ভর্তি করে ওর প্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র কিনে আমি নিজ হাতে ওকে হলে তুলে দিয়ে এসেছিলাম। অথচ বছর না ঘুরতেই ওই হল থেকে আমার ছেলের লাশ বেরিয়ে আসলো। কোন মা এই কষ্ট সহ্য করে নতুন করে তার আরও সন্তানকে ওই মৃত্যুকূপে ঠেলে দিতে পারে না, আমিও পারবো না। বুয়েটের সেই নিরাপত্তার পরিবেশ কে নিশ্চিত করবে যে সেই ভরসায় আমার ফাইয়াজকে ওখানে ভর্তি করবো?’

‘এখনো যেহেতু আবরার হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ড কার্যকর হয়নি। সে কারণে নিরাপত্তার বিষয়টি আমার কাছে প্রধান শঙ্কার কারণ হওয়ায় ওখানে ফাইয়াজকে ভর্তি করাবো না’, এখন কেবলই হারিয়ে যাওয়া সন্তানের রেখে যাওয়া স্মৃতি আঁকড়ে থাকতে চান বলেও জানান রোকেয়া খাতুন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। চার্জশিটে ২৫ জনকে আসামি করা হয়। আর রাষ্ট্রপক্ষে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়।

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ওই রায় ঘোষণা করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

মায়ের ‘না’, সবার মতামত শুনে সিদ্ধান্ত নেবেন ফাইয়াজের বাবা

প্রকাশিত সময় : ০৫:৫৮:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ জুলাই ২০২২

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের পিটুনিতে নিহত আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজও এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে বুয়েটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, ৪৫০তম মেধা স্কোর অর্জন করে যন্ত্রকৌশল বিভাগের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তবে বুয়েটে ভর্তি বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ফাইয়াজের পরিবার। 

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় আবরার ফাইয়াজ বলেন,‘ভাইয়ার ইচ্ছানুযায়ী বুয়েটে ভর্তি হওয়ার চান্স পাওয়াটা ছিল আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। রেজাল্ট শুনে খুশি হয়েছি, তবে ভর্তি হবো কিনা তা পারিবারিক সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত হবে।’

ফাইয়াজের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘গাজীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) কম্পিউটার সায়েন্সে ফাইয়াজকে ভর্তি করিয়েছি। বুয়েটে ভর্তি করানো হবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’

তবে নিহত আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন ছোট ছেলেকে একই প্রতিষ্ঠানে পড়তে পাঠাতে নারাজ।

তিনি বলেন, ‘ফাইয়াজ মেধাতালিকায় ৪৫০তম স্থান অধিকার করেছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে তিনি ভর্তি হতে পারবে। তবে বুয়েটে বড় ছেলেকে ভর্তি করে আমার পরিবার যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে, সেই নির্মম কষ্টও ও যন্ত্রণার মধ্যে নতুন করে আর পড়তে চাই না। ফাইয়াজকে তো কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি করেছি। ওখানেই ভালো। একসময় যে আবেগের বশে বড় ছেলেকে বুয়েটে ভর্তি করিয়েছিলাম সেই আবেগ আজ শঙ্কায় পরিণত হয়েছে আমার পরিবারের জন্য। বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে পড়তে দিয়ে আমার মতো আর কোন মা যেন অভাগী না হয়।’

এভাবেই অশ্রুসিক্ত ও আড়ষ্ট গলায় প্রতিক্রিয়া জানান তিনি, ‘চার বছর পূর্বে অনেক স্বপ্ন-আবেগ নিয়ে ফাহাদকে বুয়েটে ভর্তি করে ওর প্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র কিনে আমি নিজ হাতে ওকে হলে তুলে দিয়ে এসেছিলাম। অথচ বছর না ঘুরতেই ওই হল থেকে আমার ছেলের লাশ বেরিয়ে আসলো। কোন মা এই কষ্ট সহ্য করে নতুন করে তার আরও সন্তানকে ওই মৃত্যুকূপে ঠেলে দিতে পারে না, আমিও পারবো না। বুয়েটের সেই নিরাপত্তার পরিবেশ কে নিশ্চিত করবে যে সেই ভরসায় আমার ফাইয়াজকে ওখানে ভর্তি করবো?’

‘এখনো যেহেতু আবরার হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ড কার্যকর হয়নি। সে কারণে নিরাপত্তার বিষয়টি আমার কাছে প্রধান শঙ্কার কারণ হওয়ায় ওখানে ফাইয়াজকে ভর্তি করাবো না’, এখন কেবলই হারিয়ে যাওয়া সন্তানের রেখে যাওয়া স্মৃতি আঁকড়ে থাকতে চান বলেও জানান রোকেয়া খাতুন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। চার্জশিটে ২৫ জনকে আসামি করা হয়। আর রাষ্ট্রপক্ষে ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়।

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচ জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান ওই রায় ঘোষণা করেন।