শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে …

আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে
দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে,
ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটে॥
ধরিত্রী তাঁর অঙ্গনেতে নাচের তালে ওঠেন মেতে,
চঞ্চল তাঁর অঞ্চল যায় লুটে
প্রথম যুগের বচন শুনি মনে
নবশ্যামল প্রাণের নিকেতনে।…
কবি শ্রাবণকে আমন্ত্রণ জানান এভাবেই। 

আষাঢ়ে কদম ফুলের মতো হাসি হেসে যে প্রকৃতি নতুন রূপে সাজে, সেই প্রকৃতি পূর্ণতা পায় শ্রাবণে। আষাঢ়ের বৃষ্টিপাতেই নদীতে ঢল নামে। খালবিল, নদী-নালা বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়। পরিপূর্ণ বর্ষাকাল শুরু হয় বাংলাদেশে। বাঙালির শিল্প-সাহিত্যে আষাঢ় মাসের বৃষ্টিপাত নিয়ে রচিত হয়েছে বহুসংখ্যক ছড়া, কবিতা, গান, গল্প, প্রবাদ ও শ্লোককসহ বেশুমার রচনাবলি। সেই আষাঢ় শেষ। দুয়ারে এসেছে শ্রাবণ। তবে আষাঢ় ও শ্রাবণ- এই দুই মাস বর্ষাকাল হলেও এখনো বর্ষার প্রাণজুড়ানো বৃষ্টির দেখা মেলেনি। সেইসঙ্গে রোদের দাপটে বোঝা দায় দিনগুলো বর্ষাকালের নাকি গ্রীষ্মের! বলা যায়, বর্ষণের দেখা না মিলতেই শেষ বর্ষাকালের প্রথম মাস। 

যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে সুখবর দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস।  তাদের তথ্য বলছে, উড়িষ্যা উপকূলের অদূরবর্তী উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি কেটে গেলেই শুরু হবে বর্ষার দাপট। 

আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবদুুল মান্নান বলেন, “উড়িষ্যা উপকূলের লঘুচাপের কারণেই দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে খুব একটা বৃষ্টি এখনো হয়নি। লঘুচাপটি কেটে গেলে শনিবার শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন থেকেই বাড়বে বৃষ্টির প্রবণতা। বর্ষণে ভিজবে উত্তপ্ত জনপদ। প্রাণ ফিরে পাবে বর্ষা।”

আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, উড়িষ্যা উপকূলের অদূরবর্তী উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত ও সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে বর্তমানে উড়িষ্যা উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরো ঘনীভূত হতে পারে। এর একটি বর্ধিতাংশ পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি ধরনের সক্রিয় রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি এবং ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। রাজশাহী, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলাসহ সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বর্ষার অংশীদার হিসেবে শ্রাবণেও ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়। বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে কদম, হিজল, কেয়া ও যুথিকা ফুল ফোঁটে আপন মহিমায়। আম, কাঁঠাল, আনারস ছাড়াও বাজারে আমড়া, লটকন, পেয়ারা, করমচা, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, বিলিম্ব, বিলাতী গাব ইত্যাদি ফলের সমারোহ দেখা যায়।

শ্রাবণ মাসে বেশকিছু মেলা-পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো সিলেট ও ময়মনসিংহের ঝুলনমেলা, মানিকগঞ্জের জগন্নাথ মিশ্রের মেলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খড়মপুর উরশ মেলা। এসব মেলা-পার্বণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আরো অটুট করে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে।একুশে টেলিভিশন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে …

প্রকাশিত সময় : ১১:৪৪:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২

আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে
দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে,
ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটে॥
ধরিত্রী তাঁর অঙ্গনেতে নাচের তালে ওঠেন মেতে,
চঞ্চল তাঁর অঞ্চল যায় লুটে
প্রথম যুগের বচন শুনি মনে
নবশ্যামল প্রাণের নিকেতনে।…
কবি শ্রাবণকে আমন্ত্রণ জানান এভাবেই। 

আষাঢ়ে কদম ফুলের মতো হাসি হেসে যে প্রকৃতি নতুন রূপে সাজে, সেই প্রকৃতি পূর্ণতা পায় শ্রাবণে। আষাঢ়ের বৃষ্টিপাতেই নদীতে ঢল নামে। খালবিল, নদী-নালা বৃষ্টির পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়। পরিপূর্ণ বর্ষাকাল শুরু হয় বাংলাদেশে। বাঙালির শিল্প-সাহিত্যে আষাঢ় মাসের বৃষ্টিপাত নিয়ে রচিত হয়েছে বহুসংখ্যক ছড়া, কবিতা, গান, গল্প, প্রবাদ ও শ্লোককসহ বেশুমার রচনাবলি। সেই আষাঢ় শেষ। দুয়ারে এসেছে শ্রাবণ। তবে আষাঢ় ও শ্রাবণ- এই দুই মাস বর্ষাকাল হলেও এখনো বর্ষার প্রাণজুড়ানো বৃষ্টির দেখা মেলেনি। সেইসঙ্গে রোদের দাপটে বোঝা দায় দিনগুলো বর্ষাকালের নাকি গ্রীষ্মের! বলা যায়, বর্ষণের দেখা না মিলতেই শেষ বর্ষাকালের প্রথম মাস। 

যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবর্তিত এই পরিস্থিতিতে সুখবর দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস।  তাদের তথ্য বলছে, উড়িষ্যা উপকূলের অদূরবর্তী উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি কেটে গেলেই শুরু হবে বর্ষার দাপট। 

আবহাওয়াবিদ ড. মো. আবদুুল মান্নান বলেন, “উড়িষ্যা উপকূলের লঘুচাপের কারণেই দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে খুব একটা বৃষ্টি এখনো হয়নি। লঘুচাপটি কেটে গেলে শনিবার শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন থেকেই বাড়বে বৃষ্টির প্রবণতা। বর্ষণে ভিজবে উত্তপ্ত জনপদ। প্রাণ ফিরে পাবে বর্ষা।”

আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, উড়িষ্যা উপকূলের অদূরবর্তী উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত ও সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়ে বর্তমানে উড়িষ্যা উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরো ঘনীভূত হতে পারে। এর একটি বর্ধিতাংশ পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি ধরনের সক্রিয় রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি এবং ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। রাজশাহী, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলাসহ সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বর্ষার অংশীদার হিসেবে শ্রাবণেও ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়। বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে কদম, হিজল, কেয়া ও যুথিকা ফুল ফোঁটে আপন মহিমায়। আম, কাঁঠাল, আনারস ছাড়াও বাজারে আমড়া, লটকন, পেয়ারা, করমচা, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, বিলিম্ব, বিলাতী গাব ইত্যাদি ফলের সমারোহ দেখা যায়।

শ্রাবণ মাসে বেশকিছু মেলা-পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো সিলেট ও ময়মনসিংহের ঝুলনমেলা, মানিকগঞ্জের জগন্নাথ মিশ্রের মেলা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খড়মপুর উরশ মেলা। এসব মেলা-পার্বণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে আরো অটুট করে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে।একুশে টেলিভিশন