বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিয়ে বাড়িতে ম্যাজিস্ট্রেট, অপ্রাপ্তবয়স্ক কনেকে নিয়ে পালালেন বর

যশোরের চৌগাছায় বাল্য বিয়ে বন্ধের জন্য বারবার সতর্ক করার পরও বাল্য বিয়ে বন্ধ না হওয়ায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার দুই গ্রামে দুটি বাল্য বিয়ের অনুষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে একটি বিয়ে বন্ধ করে প্রশাসন। অন্যটিতে অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে কনেকে নিয়ে বিয়ে বাড়ি ছাড়েন বর।

অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে একটিতে কনের বাবাকে, অন্যটিতে কনের দাদাকে ছয়মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের ১০০ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের পাতিবিলা উত্তর পাড়া গ্রামের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। মেয়েটি বিয়েতে রাজি না থাকলেও পরিবারের সদস্যরা জোর করে তাকে বিয়ে দিচ্ছিল। বর পাশ্ববর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। বিষয়টি জানতে পেরে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা দ্রুত বিয়েটি বন্ধ করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গুঞ্জন বিশ্বাসকে নির্দেশ দেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গুঞ্জন বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়েটি বন্ধ করেন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কনের দাদা আব্দুস সালামকে (৬৫) ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয় অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারদণ্ড দেওয়া হয়।

এই বিয়েটি বন্ধ করে গুঞ্জন বিশ্বাস যান উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের মাড়ুয়া গ্রামে। সেখানে রাত সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, দশম শ্রেণির অপর এক শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ের আয়োজন করেছেন অভিভাবকরা। তবে সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছানোর আগেই কনেকে নিয়ে দ্রুত বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেন বর ও বরযাত্রীরা। পরে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কনের বাবা মো. মহিউদ্দিনকে (৪৬) ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয় যা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক চৌগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস বলেন, সংবাদ পেয়ে ইউএনও স্যারের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে একটি বিয়ে বন্ধ করা গেলেও অন্যটিতে কনেকে নিয়ে বর ও বরযাত্রীরা বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেন। চৌগাছার ইউএনও ইরুফা সুলতানা বলেন, বাল্য বিয়ের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

কয়েকদিন আগেও উপজেলার বাদেখানপুর গ্রামে একটি বাল্য বিয়ের আয়োজন করা হলে অভিভাবকদের বুঝিয়ে সেটি বন্ধ করেন গুঞ্জন বিশ্বাস। তবে তিনি ফিরে আসার এক ঘণ্টার মধ্যেই সেই বিয়েটি সম্পন্ন করেন অভিভাবকরা।

সূত্র: আমাদের সময়

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বিয়ে বাড়িতে ম্যাজিস্ট্রেট, অপ্রাপ্তবয়স্ক কনেকে নিয়ে পালালেন বর

প্রকাশিত সময় : ১১:১৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ জুলাই ২০২২

যশোরের চৌগাছায় বাল্য বিয়ে বন্ধের জন্য বারবার সতর্ক করার পরও বাল্য বিয়ে বন্ধ না হওয়ায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার দুই গ্রামে দুটি বাল্য বিয়ের অনুষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে একটি বিয়ে বন্ধ করে প্রশাসন। অন্যটিতে অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে কনেকে নিয়ে বিয়ে বাড়ি ছাড়েন বর।

অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে একটিতে কনের বাবাকে, অন্যটিতে কনের দাদাকে ছয়মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের ১০০ টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের পাতিবিলা উত্তর পাড়া গ্রামের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। মেয়েটি বিয়েতে রাজি না থাকলেও পরিবারের সদস্যরা জোর করে তাকে বিয়ে দিচ্ছিল। বর পাশ্ববর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। বিষয়টি জানতে পেরে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইরুফা সুলতানা দ্রুত বিয়েটি বন্ধ করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গুঞ্জন বিশ্বাসকে নির্দেশ দেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গুঞ্জন বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়েটি বন্ধ করেন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কনের দাদা আব্দুস সালামকে (৬৫) ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয় অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারদণ্ড দেওয়া হয়।

এই বিয়েটি বন্ধ করে গুঞ্জন বিশ্বাস যান উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের মাড়ুয়া গ্রামে। সেখানে রাত সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, দশম শ্রেণির অপর এক শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ের আয়োজন করেছেন অভিভাবকরা। তবে সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছানোর আগেই কনেকে নিয়ে দ্রুত বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেন বর ও বরযাত্রীরা। পরে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কনের বাবা মো. মহিউদ্দিনকে (৪৬) ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয় যা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক চৌগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস বলেন, সংবাদ পেয়ে ইউএনও স্যারের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে একটি বিয়ে বন্ধ করা গেলেও অন্যটিতে কনেকে নিয়ে বর ও বরযাত্রীরা বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেন। চৌগাছার ইউএনও ইরুফা সুলতানা বলেন, বাল্য বিয়ের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

কয়েকদিন আগেও উপজেলার বাদেখানপুর গ্রামে একটি বাল্য বিয়ের আয়োজন করা হলে অভিভাবকদের বুঝিয়ে সেটি বন্ধ করেন গুঞ্জন বিশ্বাস। তবে তিনি ফিরে আসার এক ঘণ্টার মধ্যেই সেই বিয়েটি সম্পন্ন করেন অভিভাবকরা।

সূত্র: আমাদের সময়