শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের বাসভবন থেকে গোপন নথি উদ্ধার

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাসভবন মার-আ-লাগো থেকে গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১১ সেট গোপন নথি উদ্ধার করেছে দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা এফবিআই। কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধার করা এসব নথির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী সম্পর্কিত ‘টিএস/এসসিআই’ বা ‘অতি গোপনীয়’ ক্যাটাগরি নথিও আছে, যা বেহাত হলে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ‘ব্যাপক’ ও  ‘গুরুতর’ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া উদ্ধার অন্যান্য ফাইলের মধ্যে ৪ সেট ‘অতি গোপন’ ক্যাটাগরি, তিন সেট ‘গোপন’ ক্যাটাগরি নথি, এবং তিন সেট ‘গোপনীয়’ ক্যাটাগরির নথি রয়েছে। নথিগুলোর বিষয়ে এর চেয়ে বেশি বিস্তারিত আর কিছু বলে নি এফবিআই।‘

গত ৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পাম বিচ শহরে ট্রাম্পের বাসভবন মার-আ-লাগোতে তল্লাশি চালায় এফবিআইয়ের একটি দল। ওই দিন অবশ্য ফ্লোরিডায় ছিলেন না ট্রাম্প।

অভিযানে ট্রাম্পের বাসভবন থেকে কিছু জিনিস জব্দ করেছিল এফবিআই। শুক্রবার বিকেলে ফ্লোরিডার একটি আদালতের নির্দেশে জব্দকৃত জিনিসের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

সেই তালিকার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, মার-আ-লাগো থেকে ২০টি বাক্স, ফটো বাইন্ডার এবং ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক পরামর্শদাতা রজার স্টোনের পক্ষে লেখা একটি চিঠি। এ ছাড়া ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট’ সম্পর্কে লেখা একটি নথি উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও ওই নথিতে কী বলা হয়েছে তা স্পষ্ট জানা যায়নি।

ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক বিবৃতিতে বলেছেন, উদ্ধারকৃত আইটেমগুলো ‘সব ডিক্লাসিফাইড’ এবং নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এফবিআই যদি চাইত, তাহলে যে কোনো সময় এসব নথি পেতে পারত। আমিই তাদেরকে হস্তান্তর করতাম। পরোয়ানা নিয়ে তল্লাশি চালানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।’

পাশাপাশি, ‘অতি গোপন’ ক্যাটাগরির যে নথি উদ্ধারের দাবি করেছে এফবিআই— সেটিকেও ‘ভুয়া’ বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য— তার কাছে এ ক্যাটাগরির কোনো নথি নেই।

গত বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব শেষে হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় ট্রাম্প অবৈধভাবে নথিপত্র সরিয়ে নিয়েছেন কি না, সেই তদন্তেরই অংশ হিসেবেই সোমবার তল্লাশি চালানো হয় মার-আ-লাগোতে। মার্কিন বিচার বিভাগের সন্দেহ ছিল, ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস ত্যাগের সময় কিছু অতি গোপন নথি সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গ্যারল্যান্ড এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই তল্লাশি অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, তল্লশির বিষয়টি জনসমক্ষে নিশ্চিত করা, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও জনস্বার্থের প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগকে পরোয়ানাটি প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে বিচার বিভাগ।

তদন্তের ঘটনা প্রকাশ্যে নিশ্চিত করার এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে একেবারেই বিরল। ব্যক্তি অধিকার সুরক্ষায় চলমান তদন্তের বিষয়ে আলোচনা করেন না যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। অবশ্য এ ঘটনায় সোমবার রাতে ট্রাম্প নিজেই এক বিবৃতি দিয়ে তল্লাশির বিষয়টি জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের বাসভবনে এফবিআইয়ের অভিযান ঘিরে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় উঠেছে। ২০২৪ সালে তিনি আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন, এমন আলোচনার মধ্যেই তাঁর বাসভবনে এ ধরনের অভিযান চালানো হলো।

বৃহস্পতিবার নিজের তৈরি নামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, তার অ্যাটর্নিরা পুরোপুরি সহযোগিতা করছেন। সরকার যা চাইছে, তা তাঁদের কাছে থাকলে সহজেই পেতে পারত। কিন্তু তা না করে কোনো কিছু না জানিয়ে সকাল সাড়ে ছয়টার সময় মার-এ-লাগোতে অভিযান চালানো হলো। এফবিআই এজেন্টরা ফার্স্ট লেডির বাথরুমসহ পোশাক-পরিচ্ছদ ও ব্যক্তগত সামগ্রীও পরীক্ষা করেন।

এদিকে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতারা বিচার বিভাগ ও এফবিআইয়ের কঠোর নিন্দা করেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ট্রাম্পের বাসভবন থেকে গোপন নথি উদ্ধার

প্রকাশিত সময় : ০৩:০৭:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২২

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাসভবন মার-আ-লাগো থেকে গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১১ সেট গোপন নথি উদ্ধার করেছে দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থা এফবিআই। কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধার করা এসব নথির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী সম্পর্কিত ‘টিএস/এসসিআই’ বা ‘অতি গোপনীয়’ ক্যাটাগরি নথিও আছে, যা বেহাত হলে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ‘ব্যাপক’ ও  ‘গুরুতর’ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়া উদ্ধার অন্যান্য ফাইলের মধ্যে ৪ সেট ‘অতি গোপন’ ক্যাটাগরি, তিন সেট ‘গোপন’ ক্যাটাগরি নথি, এবং তিন সেট ‘গোপনীয়’ ক্যাটাগরির নথি রয়েছে। নথিগুলোর বিষয়ে এর চেয়ে বেশি বিস্তারিত আর কিছু বলে নি এফবিআই।‘

গত ৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের পাম বিচ শহরে ট্রাম্পের বাসভবন মার-আ-লাগোতে তল্লাশি চালায় এফবিআইয়ের একটি দল। ওই দিন অবশ্য ফ্লোরিডায় ছিলেন না ট্রাম্প।

অভিযানে ট্রাম্পের বাসভবন থেকে কিছু জিনিস জব্দ করেছিল এফবিআই। শুক্রবার বিকেলে ফ্লোরিডার একটি আদালতের নির্দেশে জব্দকৃত জিনিসের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

সেই তালিকার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, মার-আ-লাগো থেকে ২০টি বাক্স, ফটো বাইন্ডার এবং ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক পরামর্শদাতা রজার স্টোনের পক্ষে লেখা একটি চিঠি। এ ছাড়া ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট’ সম্পর্কে লেখা একটি নথি উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও ওই নথিতে কী বলা হয়েছে তা স্পষ্ট জানা যায়নি।

ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক বিবৃতিতে বলেছেন, উদ্ধারকৃত আইটেমগুলো ‘সব ডিক্লাসিফাইড’ এবং নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এফবিআই যদি চাইত, তাহলে যে কোনো সময় এসব নথি পেতে পারত। আমিই তাদেরকে হস্তান্তর করতাম। পরোয়ানা নিয়ে তল্লাশি চালানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না।’

পাশাপাশি, ‘অতি গোপন’ ক্যাটাগরির যে নথি উদ্ধারের দাবি করেছে এফবিআই— সেটিকেও ‘ভুয়া’ বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য— তার কাছে এ ক্যাটাগরির কোনো নথি নেই।

গত বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব শেষে হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় ট্রাম্প অবৈধভাবে নথিপত্র সরিয়ে নিয়েছেন কি না, সেই তদন্তেরই অংশ হিসেবেই সোমবার তল্লাশি চালানো হয় মার-আ-লাগোতে। মার্কিন বিচার বিভাগের সন্দেহ ছিল, ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস ত্যাগের সময় কিছু অতি গোপন নথি সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গ্যারল্যান্ড এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই তল্লাশি অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, তল্লশির বিষয়টি জনসমক্ষে নিশ্চিত করা, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ও জনস্বার্থের প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগকে পরোয়ানাটি প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে বিচার বিভাগ।

তদন্তের ঘটনা প্রকাশ্যে নিশ্চিত করার এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রে একেবারেই বিরল। ব্যক্তি অধিকার সুরক্ষায় চলমান তদন্তের বিষয়ে আলোচনা করেন না যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। অবশ্য এ ঘটনায় সোমবার রাতে ট্রাম্প নিজেই এক বিবৃতি দিয়ে তল্লাশির বিষয়টি জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের বাসভবনে এফবিআইয়ের অভিযান ঘিরে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় উঠেছে। ২০২৪ সালে তিনি আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন, এমন আলোচনার মধ্যেই তাঁর বাসভবনে এ ধরনের অভিযান চালানো হলো।

বৃহস্পতিবার নিজের তৈরি নামের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, তার অ্যাটর্নিরা পুরোপুরি সহযোগিতা করছেন। সরকার যা চাইছে, তা তাঁদের কাছে থাকলে সহজেই পেতে পারত। কিন্তু তা না করে কোনো কিছু না জানিয়ে সকাল সাড়ে ছয়টার সময় মার-এ-লাগোতে অভিযান চালানো হলো। এফবিআই এজেন্টরা ফার্স্ট লেডির বাথরুমসহ পোশাক-পরিচ্ছদ ও ব্যক্তগত সামগ্রীও পরীক্ষা করেন।

এদিকে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতারা বিচার বিভাগ ও এফবিআইয়ের কঠোর নিন্দা করেছেন।