শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও বিরোধ থেকে গাইবান্ধার এমপি লিটনকে খুন

পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, রাজনৈতিক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার এবং  আব্দুল কাদের খানের পুনরায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্নের কারণেই খুন হন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। আর এর মূল সমন্বয়ে ছিলেন চন্দন কুমার রায়। 

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন।

খন্দকার আল-মঈন বলেন, রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে সাতক্ষীরার ভোমরা এলাকা থেকে হত্যা মামলার প্রধান সমন্বয়কারী ও ইন্টারপোল কর্তৃক রেড নোটিশ জারিকৃত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি চন্দনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুন্দরগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কাদের খানের পরিকল্পনাতে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। আবদুল কাদের খান ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুন্দরগঞ্জ এলাকায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। ওই সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার দুর্নীতির বিষয়ে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন অভিযোগ উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ আসন থেকে লিটন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পূর্বের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, রাজনৈতিক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার ও তৎকালীন সংসদ সদস্যকে সরিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য হওয়ার লোভে মূলত হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন আবদুল কাদের খান। কাদের খান ২০১৬ সালে প্রথম দিকে এমপি লিটনকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে চন্দন কুমার রায়কে জানান।  চন্দন ও কাদের খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে ২০১৬ সালে ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটনকে তার নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়। 

র‌্যাব জানায়,  হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ছোট বোন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত কার্যক্রম শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল  মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল কাদের খানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে  আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। যার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কারী চন্দন কুমার রায় ছাড়া বাকি ৭ জন গ্রেপ্তার হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারকৃত ৬ এবং পলাতক চন্দনসহ ৭ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। আরেক আসামি সুবল চন্দ্র কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পলাতক চন্দন কুমার রায়কে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোল কর্তৃক রেড নোটিশও জারি করা হয়। 

জানা গেছে, এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের পর চন্দন পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপন করায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। সেখানে নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে শাওন রায় নামে ভূয়া নাগরিকত্ব, আধার কার্ড করে সেখানে অবস্থান করছিলেন। সম্প্রতি মাদক পাচার সংক্রান্ত কাজে তিনি সাতক্ষীরায় সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছিলেন। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী ভোমরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও বিরোধ থেকে গাইবান্ধার এমপি লিটনকে খুন

প্রকাশিত সময় : ০৯:২৫:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২

পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, রাজনৈতিক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার এবং  আব্দুল কাদের খানের পুনরায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্নের কারণেই খুন হন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। আর এর মূল সমন্বয়ে ছিলেন চন্দন কুমার রায়। 

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন।

খন্দকার আল-মঈন বলেন, রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে সাতক্ষীরার ভোমরা এলাকা থেকে হত্যা মামলার প্রধান সমন্বয়কারী ও ইন্টারপোল কর্তৃক রেড নোটিশ জারিকৃত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি চন্দনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুন্দরগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কাদের খানের পরিকল্পনাতে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। আবদুল কাদের খান ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুন্দরগঞ্জ এলাকায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। ওই সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার দুর্নীতির বিষয়ে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন অভিযোগ উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ আসন থেকে লিটন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পূর্বের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, রাজনৈতিক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার ও তৎকালীন সংসদ সদস্যকে সরিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য হওয়ার লোভে মূলত হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন আবদুল কাদের খান। কাদের খান ২০১৬ সালে প্রথম দিকে এমপি লিটনকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে চন্দন কুমার রায়কে জানান।  চন্দন ও কাদের খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে ২০১৬ সালে ৩১ ডিসেম্বর এমপি লিটনকে তার নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়। 

র‌্যাব জানায়,  হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ছোট বোন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত কার্যক্রম শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল  মূল পরিকল্পনাকারী আবদুল কাদের খানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে  আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। যার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কারী চন্দন কুমার রায় ছাড়া বাকি ৭ জন গ্রেপ্তার হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর গ্রেপ্তারকৃত ৬ এবং পলাতক চন্দনসহ ৭ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আদালত। আরেক আসামি সুবল চন্দ্র কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পলাতক চন্দন কুমার রায়কে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোল কর্তৃক রেড নোটিশও জারি করা হয়। 

জানা গেছে, এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের পর চন্দন পার্শ্ববর্তী দেশে আত্মগোপন করায় ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। সেখানে নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে শাওন রায় নামে ভূয়া নাগরিকত্ব, আধার কার্ড করে সেখানে অবস্থান করছিলেন। সম্প্রতি মাদক পাচার সংক্রান্ত কাজে তিনি সাতক্ষীরায় সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছিলেন। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী ভোমরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।