রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর সপ্তম  মৃত্যৃবার্ষিকী আজ

বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ মহসিন আলী মারা যান।

সৈয়দ মহসিন আলীর বাবার নাম সৈয়দ শরাফ আলী। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। সৈয়দ মহসিন আলীর মায়ের নাম আছকিরুনন্নেছা খানম। মৌলভীবাজার থেকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তিনি কলকাতা চলে যান। কলকাতার আলীপুরে ছিলো তার বিশাল বাড়ি। আলীপুরের সেই বাড়িতে ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মহসীন আলী জন্মগ্রহণ করেন। ৫ ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।

সৈয়দ মহসিন আলীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় কলকাতায়। তিনি কলকাতার সেন্টজেবিয়ার্স স্কুলে জুনিয়র কেমব্রিজ ও সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করেন। পরবর্তীকালে আবার বাংলাদেশে এসে বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন পড়াশুনা করেন। তবে আবারও তিনি কলকাতা থেকে ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশমাতৃকার প্রতি তার মমত্ববোধের কারণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সম্মুখসমরে যুদ্ধ চলাকালে গুলিবিদ্ধও হয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সিলেট বিভাগে সিএনসি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কাজ করেছেন যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনেও। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।

মৌলভীবাজার মহকুমার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

স্বাধীনতাত্তোরকালে তিনিই একমাত্র নেতা যিনি পৌরসভায় পরপর ৩ বার বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় তাকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে।

২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। সেখানে এখন বহুমুখী বাস্তবসম্মত প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সমাজসেবায় অবদান রাখার জন্য তিনি ভারতের নেহেরু সাম্য সম্মাননা ও আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন সম্মাননা স্বর্ণপদক লাভ করেন।

সাহিত্য ও সাংবাদিকতা ছিলো তার পছন্দের বিষয়। অবসরে তিনি বই পড়তে ভালবাসতেন। কবি-লেখকদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। তিনি এক সময় বাংলাদেশ টাইমসের প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

গান তার প্রিয় একটি বিষয়। ধ্রুপদী, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি থেকে শুরু করে প্রায় সবধরনের গানই তার মুখস্থ ছিলো। তার স্মৃতিতে প্রায় ৫ হাজার গানের সংগ্রহ ছিলো। সমাজকল্যাণে তার প্রিয় সংগীত ছিলো ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’। সমাজকল্যাণে তিনি এভাবেই তার নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। একজন সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজের সম্পদ বিক্রি করে রাজনীতি করেছেন বলে তার সুখ্যাতি ছিলো।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর সপ্তম  মৃত্যৃবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত সময় : ০৩:০৮:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ মহসিন আলী মারা যান।

সৈয়দ মহসিন আলীর বাবার নাম সৈয়দ শরাফ আলী। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। সৈয়দ মহসিন আলীর মায়ের নাম আছকিরুনন্নেছা খানম। মৌলভীবাজার থেকে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তিনি কলকাতা চলে যান। কলকাতার আলীপুরে ছিলো তার বিশাল বাড়ি। আলীপুরের সেই বাড়িতে ১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর মহসীন আলী জন্মগ্রহণ করেন। ৫ ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।

সৈয়দ মহসিন আলীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় কলকাতায়। তিনি কলকাতার সেন্টজেবিয়ার্স স্কুলে জুনিয়র কেমব্রিজ ও সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করেন। পরবর্তীকালে আবার বাংলাদেশে এসে বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন পড়াশুনা করেন। তবে আবারও তিনি কলকাতা থেকে ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশমাতৃকার প্রতি তার মমত্ববোধের কারণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সম্মুখসমরে যুদ্ধ চলাকালে গুলিবিদ্ধও হয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সিলেট বিভাগে সিএনসি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কাজ করেছেন যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনেও। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।

মৌলভীবাজার মহকুমার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

স্বাধীনতাত্তোরকালে তিনিই একমাত্র নেতা যিনি পৌরসভায় পরপর ৩ বার বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় তাকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে।

২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। সেখানে এখন বহুমুখী বাস্তবসম্মত প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সমাজসেবায় অবদান রাখার জন্য তিনি ভারতের নেহেরু সাম্য সম্মাননা ও আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন সম্মাননা স্বর্ণপদক লাভ করেন।

সাহিত্য ও সাংবাদিকতা ছিলো তার পছন্দের বিষয়। অবসরে তিনি বই পড়তে ভালবাসতেন। কবি-লেখকদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। তিনি এক সময় বাংলাদেশ টাইমসের প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

গান তার প্রিয় একটি বিষয়। ধ্রুপদী, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি থেকে শুরু করে প্রায় সবধরনের গানই তার মুখস্থ ছিলো। তার স্মৃতিতে প্রায় ৫ হাজার গানের সংগ্রহ ছিলো। সমাজকল্যাণে তার প্রিয় সংগীত ছিলো ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’। সমাজকল্যাণে তিনি এভাবেই তার নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। একজন সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজের সম্পদ বিক্রি করে রাজনীতি করেছেন বলে তার সুখ্যাতি ছিলো।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।