শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মোদি-পুতিন একান্ত বৈঠক

সমরখন্দ এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যেই হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একান্ত বৈঠক। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটি ছিল দুই নেতার প্রথম বৈঠক। বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্টকে মোদি বলেন, এখন যুদ্ধের সময় নয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রধান উদ্বেগ হলো খাদ্য, সার ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে।

ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করেনি ভারত। তবে সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের জন্য জোর দিয়েছে। মোদি উজবেকিস্তানে পুতিনকে বলেন, আমি জানি- আজকের যুগ যুদ্ধের যুগ নয় এবং আমি আপনার সঙ্গে এই বিষয়ে ফোনে কথা বলেছি।

এর আগে শুক্রবার উজবেকিস্তানে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সম্মেলনে মোদি বলেন, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগই সংকট থেকে মুক্ত করতে পারে। পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব যখন কোভিড অতিমারি মোকাবিলা করতে সক্ষম হচ্ছে; তখন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের ভূমিকা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এসসিওর সদস্য দেশগুলোতে বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বাস করেন। তাই খাদ্য, নিরাপত্তা, জ্বালানিসহ একাধিক বিষয়ে দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সরবরাহের পথ খোলা রাখা উচিত।

উষ্ণতার সুরে শি: মোদি বক্তব্য রাখার পরই বক্তব্য রাখতে উঠে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পরের বারের এসসিও সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে ভারতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সম্মেলন আয়োজনের ক্ষেত্রে চীন যে ভারতের পাশে থাকবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন জিনপিং। মোদির মতো জিনপিংও তার বক্তব্যে সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা এবং উন্নয়নে একযোগে কাজ করার কথা জানিয়েছেন। লাদাখ সীমান্তে সেনা সমাবেশসহ একাধিক বিষয়ে স¤প্রতি শীতল হয়েছে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক। তবে শুক্রবার চীন যেভাবে নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছে, তাতে দুই দেশের সম্পর্কে উষ্ণতা ফিরতে পারে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহলের কেউ কেউ। ঘটনাচক্রে, সম্মেলনে উপস্থিত রাষ্ট্রপ্রধানদের ভিড়ে মোদির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে। উল্লেখ্য, চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তানকে নিয়ে গঠিত সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক নিরাপত্তা, শক্তিসাম্য, সরবরাহ ব্যবস্থা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনার আন্তর্জাতিক মঞ্চ বলে মনে করা হচ্ছে এই সম্মেলনকে।

বৈঠক নিয়ে দোলাচলে: তবে শি-পুতিন বা মোদি-পুতিন বৈঠক হলেও মোদি-শি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে কিনা- এ নিয়ে অঙ্ক কষে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। আলাদা করে কথা বলবেন দুজনে- এমন আশা নিরাশার দোলাচলে চলছে পর্যালোচনা। যদিও ভারতকে আগাম শুভেচ্ছা জানালেন চীনা প্রেসিডেন্ট। আগামী বছর ভারতেই হবে বৈঠক। তার জন্য নয়াদিল্লিকে সাহায্য করার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি।

করোনা ভীতি নাকি বরফ গলা বাকি : উজবেকিস্তানের সরকারের একটি সূত্র শুক্রবার রয়টার্সকে জানিয়েছে, করোনা মহামারি শুরুর পর এই প্রথম বিদেশ সফর করছেন শি জিনপিং। ধারণা করা হচ্ছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সতর্কতার অংশ হিসেবে তিনি মিত্রদের সঙ্গে নৈশভোজ এড়িয়ে যান। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার রাতে যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানসহ অন্য নেতারা ফটোসেশনে অংশ নেন তখনও দেখা যায়নি শি জিনপিংকে। চীনা প্রতিনিধি দলের নৈশভোজ ও ফটোসেশনে অংশ না নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উজবেক সরকারের একটি সূত্র। এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাইলে তার উত্তর পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার উজবেকিস্তানে পৌঁছনোর পর এসসিওর বৈঠকে যোগ দিতে আসা রাষ্ট্রনেতাদের স্থানীয় একটি পর্যটনকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেও ছিলেন না জিনপিং।

শুক্রবার সরকারিভাবে ফোটোসেশনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে অবশ্য মোদি এবং জিনপিং দুজনকেই দেখা গিয়েছে। এসসিওর এবারের আয়োজনে মোদির সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট শি-র বৈঠক শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, তা অবশ্য এখনো স্পষ্ট নয়। লাদাখ প্রকৃত সীমান্ত রেখায় একই বিন্দুতে দুই দেশের সৈন্য অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক বহু বিষয়ের সঙ্গে এই বৈঠক নিয়েও উদগ্রীব হয়ে আছেন বিশ্ববাসী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

মোদি-পুতিন একান্ত বৈঠক

প্রকাশিত সময় : ১০:০১:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

সমরখন্দ এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যেই হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একান্ত বৈঠক। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটি ছিল দুই নেতার প্রথম বৈঠক। বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্টকে মোদি বলেন, এখন যুদ্ধের সময় নয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রধান উদ্বেগ হলো খাদ্য, সার ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে।

ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করেনি ভারত। তবে সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের জন্য জোর দিয়েছে। মোদি উজবেকিস্তানে পুতিনকে বলেন, আমি জানি- আজকের যুগ যুদ্ধের যুগ নয় এবং আমি আপনার সঙ্গে এই বিষয়ে ফোনে কথা বলেছি।

এর আগে শুক্রবার উজবেকিস্তানে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন সম্মেলনে মোদি বলেন, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগই সংকট থেকে মুক্ত করতে পারে। পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব যখন কোভিড অতিমারি মোকাবিলা করতে সক্ষম হচ্ছে; তখন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের ভূমিকা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এসসিওর সদস্য দেশগুলোতে বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ বাস করেন। তাই খাদ্য, নিরাপত্তা, জ্বালানিসহ একাধিক বিষয়ে দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সরবরাহের পথ খোলা রাখা উচিত।

উষ্ণতার সুরে শি: মোদি বক্তব্য রাখার পরই বক্তব্য রাখতে উঠে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পরের বারের এসসিও সম্মেলনের আয়োজক হিসেবে ভারতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সম্মেলন আয়োজনের ক্ষেত্রে চীন যে ভারতের পাশে থাকবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন জিনপিং। মোদির মতো জিনপিংও তার বক্তব্যে সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা এবং উন্নয়নে একযোগে কাজ করার কথা জানিয়েছেন। লাদাখ সীমান্তে সেনা সমাবেশসহ একাধিক বিষয়ে স¤প্রতি শীতল হয়েছে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক। তবে শুক্রবার চীন যেভাবে নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছে, তাতে দুই দেশের সম্পর্কে উষ্ণতা ফিরতে পারে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহলের কেউ কেউ। ঘটনাচক্রে, সম্মেলনে উপস্থিত রাষ্ট্রপ্রধানদের ভিড়ে মোদির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল চীনা প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে। উল্লেখ্য, চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তানকে নিয়ে গঠিত সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক নিরাপত্তা, শক্তিসাম্য, সরবরাহ ব্যবস্থা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনার আন্তর্জাতিক মঞ্চ বলে মনে করা হচ্ছে এই সম্মেলনকে।

বৈঠক নিয়ে দোলাচলে: তবে শি-পুতিন বা মোদি-পুতিন বৈঠক হলেও মোদি-শি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে কিনা- এ নিয়ে অঙ্ক কষে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। আলাদা করে কথা বলবেন দুজনে- এমন আশা নিরাশার দোলাচলে চলছে পর্যালোচনা। যদিও ভারতকে আগাম শুভেচ্ছা জানালেন চীনা প্রেসিডেন্ট। আগামী বছর ভারতেই হবে বৈঠক। তার জন্য নয়াদিল্লিকে সাহায্য করার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি।

করোনা ভীতি নাকি বরফ গলা বাকি : উজবেকিস্তানের সরকারের একটি সূত্র শুক্রবার রয়টার্সকে জানিয়েছে, করোনা মহামারি শুরুর পর এই প্রথম বিদেশ সফর করছেন শি জিনপিং। ধারণা করা হচ্ছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সতর্কতার অংশ হিসেবে তিনি মিত্রদের সঙ্গে নৈশভোজ এড়িয়ে যান। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার রাতে যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানসহ অন্য নেতারা ফটোসেশনে অংশ নেন তখনও দেখা যায়নি শি জিনপিংকে। চীনা প্রতিনিধি দলের নৈশভোজ ও ফটোসেশনে অংশ না নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উজবেক সরকারের একটি সূত্র। এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাইলে তার উত্তর পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার উজবেকিস্তানে পৌঁছনোর পর এসসিওর বৈঠকে যোগ দিতে আসা রাষ্ট্রনেতাদের স্থানীয় একটি পর্যটনকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেও ছিলেন না জিনপিং।

শুক্রবার সরকারিভাবে ফোটোসেশনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে অবশ্য মোদি এবং জিনপিং দুজনকেই দেখা গিয়েছে। এসসিওর এবারের আয়োজনে মোদির সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট শি-র বৈঠক শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, তা অবশ্য এখনো স্পষ্ট নয়। লাদাখ প্রকৃত সীমান্ত রেখায় একই বিন্দুতে দুই দেশের সৈন্য অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক বহু বিষয়ের সঙ্গে এই বৈঠক নিয়েও উদগ্রীব হয়ে আছেন বিশ্ববাসী।