ভুল না বোঝার অনুরোধ জানিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে মরিয়ম মান্নান লিখেছেন, ‘সবার কাছে গিয়েছি মাকে খুঁজে পেতে, যাদের কাছে গিয়েছি তারা জানেন কি চেয়েছি আমি। মাকে চাওয়া ছাড়া আর কিছু চাওয়া আমার ছিল না, এখনো নেই। দয়া করে আমার মায়ের সঙ্গে আমার দেখা না হওয়া পর্যন্ত আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি মাকে খুঁজেছি, সন্তান হিসেবে আমার দায়িত্ব তাকে খোঁজা। মা এই ৩০ দিন কোথায় ছিল, কীভাবে ছিল সেটা আপনাদের মতো আমারও প্রশ্ন।’
নিখোঁজের ২৮ দিন পর ফরিদপুরের একটি বাড়ি থেকে গতকাল শনিবার রাতে খুলনার রহিমা বেগমকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। মাকে ফিরে পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মেয়ে মরিয়ম মান্নান।
ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমি সারা জীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। গত ২০/০৯/২০২২ আমি এবং আমার পরিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। তার কাছে আমার মাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাই। তিনি আস্বস্ত করেছিলেন আমি আমার মাকে খুঁজে পাব। আমি সারাজীবন মন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।’
মরিয়ম আরও লিখেছেন, ‘আমি আমার মায়ের কাছে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ আমি। মায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরে এবং কথা হওয়ার পরে আমি সব সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলব।’
তিনি লিখেছেন, ‘মাকে পাওয়া গেছে, আমি মায়ের উদ্দেশে যাচ্ছি। মায়ের সঙ্গে এখনো দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। মায়ের কোনো ভিডিও অথবা অডিও পাইনি যেখানে মা বলেছেন তিনি আত্মগোপন করেছেন।’
‘আমার মায়ের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে দিন। আমার মায়ের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত আমাকে সহোযোগিতা করুন। মা যদি আত্নগোপন করেও থাকেন তবুও তাকে খোঁজার দায়িত্ব আমার। আমি মাকে খুঁজতেছি বলে আমাকে বলা হচ্ছে মায়ের আত্নগোপনে আমি জড়িত? তাহলে আমার কি করা উচিত ছিল? যখন শুনেছি আমার মা নিখোঁজ তখন চুপ করে বসে থাকা উচিত ছিল? যারা প্রথমদিন থেকে বলছিলেন মা আত্মগোপন করেছেন তাদের কথা শুনে মাকে আর খুঁজতাম না? মাকে খুঁজেছি বলে আমাকে দোষী করা হবে?
মরিয়ম আরও লিখেছেন, ‘আপনারা আমাকে যে যাই দোষ দিন না কেন, প্রথম দিন থেকে আমি ছুটিতেছি মায়ের জন্য। আজকে পেয়েও গেছি। বারবার বলেছি মা আত্মগোপন করলে সামনে আনুন শাস্তি দিন আমার কলিজা জুড়াক। আমার কলিজা শান্ত হইছে। মায়ের চেহারাটা দেখেই আমার শান্তি। আপনারা যে যাই বলেন, এখন আমার মা আমার সামনে। মাকে খুঁজে পাওয়ার লড়াই ছিল আমার। আপনারা সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের সহোযোগিতায় আজকে আমার মাকে খুঁজে পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।’
‘আমি খুশি, এক মুহূর্তের জন্যও বিচলিত নই। মাকে খুঁজতে গিয়ে যদি আমাকে দোষী হতে হয় আমি সেই দোষ মাথা পেতে নেওয়ার শক্তি এবং সাহস রাখি, ইনশাআল্লাহ।’
প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে নিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোঁপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে মাকে খুঁজতে আত্মীয়স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন সন্তানরা।
রহিমার ছয় সন্তান কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কখনো মাইকিং, কখনো আত্মীয়স্বজনদের দ্বারস্থ হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনের পর মাকে খুঁজে পেতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানায় মামলাও দায়ের করেন।
মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই তদন্তের ভার পায়। ১৭ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানা থেকে মামলাটি পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়।-আমাদের সময়

দৈনিক দেশ নিউজ ডটকম ডেস্ক 




















