ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর দেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করতে শুরু করেছে। এতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট পানি বেড়ে যাওয়ায় ১৫ জেলার দ্বীপ ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ভোলার নিম্নাঞ্চলে পাঁচ থেকে সাত ফুটের মতো পানি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র গতকাল মধ্যরাত থেকে উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করার কথা। তখন জোয়ার থাকলে জলোচ্ছ্বাস বেড়ে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি এড়াতে উপকূলীয় জেলাগুলোতে কয়েক লাখ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে টানা বৃষ্টি ও বাতাসে গাছ পড়ে গতকাল দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে কক্সবাজারের টেকনাফে ২০টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। ওই সব ট্রলারের জেলেদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দরে উড্ডয়ন-অবতরণ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে গত রবিবার রাত থেকে উপকূলীয় এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এতে মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর কয়েক হাজার টাওয়ার বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে অনেকে যোগাযোগ করতে পারছে না।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন গতকাল রাতে জানান, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় ঘণ্টায় এর গতিবেগ ছিল ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ গতকাল মধ্যরাতে ভোলার কাছ দিয়ে চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলের উপকূলে আঘাত করার কথা। ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ অতিক্রম করতে মধ্যরাতের পর তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। ফলে ভোরের পর সিত্রাংয়ের প্রভাব ক্রমে কমে যাবে। দেশের উপকূলে এবং অন্যান্য অঞ্চলেও আজ ভারি বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
গতকাল রাত ১০টায় ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান জানিয়ে মনোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপত্সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও নোয়াখালী জেলা এবং ওই এলাকার দ্বীপ ও চরগুলোকেও ৭ নম্বর বিপত্সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ও কক্সবাজার উপকূল এবং সেখানকার চর ও দ্বীপগুলোকে ৬ নম্বর বিপত্সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে আবহাওয়া দপ্তর থেকে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মূলত ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস তুলনামূলক কম হওয়ায় এর গতিমুখ বারবার দিক পরিবর্তন করায়, ঝড় উপকূলের নিকটবর্তী হওয়ার বেশ আগ থেকে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় এবং উপকূল এলাকায় তাপমাত্রা কমে যাওয়া ও ভাটার সময় ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে শুরু করায় এটি দুর্বল হওয়ার আভাস দিচ্ছিল। আঘাত হানার সময়ও ঘূর্ণিঝড়ের গতি আইলা বা সিডরের মতো প্রবল ছিল না।
তবে প্রাথমিক আঘাতের তীব্রতা ও জলোচ্ছ্বাসের ধরন বলছে, অবকাঠামোগত ক্ষতি ও কৃষির ক্ষয়ক্ষতি বেশি হবে উপদ্রুত অঞ্চলে।
গতকাল রাত ১১টার দিকে সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনের পুরো এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। ভোলার মনপুরায় বেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। পটুয়াখালী ও বরগুনার নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। লক্ষ্মীপুরে ঝোড়ো হাওয়া বইছে।

দৈনিক দেশ নিউজ ডটকম ডেস্ক 

























