রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না’

চাকরি জীবনে কোথাও থেকে কোনো অন্যায় সুবিধা নিইনি। সরকারি কর্মকর্তাকে ভালোভাবে চলতে পেছন থেকে যে সাপোর্ট পেয়েছি সেই জন্য স্যালুট ও শ্রদ্ধা। চাকরিটাকে আমি ইবাদত মনে করেছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। যতক্ষণ শ্বাস আছে, যতক্ষণ আশা আছে ততক্ষণ পুলিশ বাহিনী লড়াই করবে, বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের বিদায়ী কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন অডিটরিয়ামে ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২২’ উপলক্ষে  আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, শনিবার সন্ধ্যায় ডিএমপি সদর দপ্তরে নতুন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দায়িত্ব নেন। এই সময় তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। পরে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শহীদ পুলিশ স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে উদ্দেশ্য করে বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুরো চাকরিজীবনে আপনার যে আশীর্বাদ মাথার ওপরে ছিল তা কখনোই ভুলব না। ডিএমপি কমিশনার হওয়ার পাঁচ-ছয় মাস যেতেই করোনা এসেছে। সে সময় বিধিনিষেধের কারণে স্বাভাবিক সভা-সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়। সে জন্য কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্য আমি খুব বেশি কাজ করতে পারিনি। তারপরও চেষ্টা করে গেছি।

তিনি বলেন, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, যৌতুক, মাদকের মতো সামাজিক সমস্যা রোধে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আগে এসব সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে আলাদা আইন ছিল না। পর্যায়ক্রমে অপরাধ বাড়তে থাকল, আইন হলো। পর্যায়ক্রমে আইন কঠোর থেকে কঠোর হলো। কিন্তু শুধু আইন করে কী অপরাধ নির্মূল সম্ভব হয়েছে? হয়তো কমেছে। কিন্তু খুব বেশি লাভ হয়নি। এসব সামাজিক সমস্যা যদি সবাই মিলে প্রতিরোধ করি তাহলেই এই অপরাধ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। প্রত্যেক মাদকসেবী মাদকের টাকা জোগাড় করতে অপরাধে জড়ায়। এক সময় মাদক কারবারে জড়ায়। একজন মাদক কারবারিকে ধরলে শত শত ব্যবসায়ী তৈরি হচ্ছে। আজ যে মাদক খায় সেই ভবিষ্যতের কারবারি। সামাজিকভাবে সবাই মিলে এটা প্রতিরোধ করতে না পারলে শুধু জেল দিয়ে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। আমরা সমাজে বাস করি, আমরাই নির্ধারণ করব আমাদের সমাজ কেমন হবে। সবাই হাত মেলালে সমাজের গুটি কয়েক দুর্বৃত্ত পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।

এর আগে আরেকটি অনুষ্ঠানে শফিকুল ইসলাম বলেন, ভালো কাজের জন্য কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না, জবাবদিহিতা করতে হয় মন্দ কাজের জন্য। আমরা মানুষের ভালো কাজের প্রশংসা করতে জানি না, মানুষের কাজের জন্য কৃতিত্ব দিতে আমরা কুন্ঠিত বোধ করি। সহকর্মীদের উপর নিজের বীরত্ব জাহির করিনি। যার যার কাজের জন্য তাকে প্রশংসিত করেছি। আরেক জনের অর্জনকে নিজের অর্জন বলে ছিনিয়ে নেইনি। চাকরি জীবনে কারো জন্য দুঃখ-কষ্টের কারণ হইনি। মানুষ যেন পুলিশ দেখে আতঙ্কিত না হয়, মানুষ যেন পুলিশ দেখে আশ্বস্ত হয় এমনভাবে কাজ করেছি। আল্লাহ বলেছেন মজলুম ও আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না, একজন মজলুম যখন কষ্ট পেয়েছে আল্লাহর দরবারে হাত তোলে তখন সেটা কবুল হয়ে যায়। তাই আমরা এমনভাবে কাজ করবো যেন মানুষ অত্যাচারিত হয়ে পুলিশের কাছে আসার পর, তাদের অত্যাচারের বোঝা আমরা আরো বাড়িয়ে না দেই। আমরা রাতের পর রাত ঘুমাই না রাস্তায় পাহারা দেই। আমরা যদি এমনিভাবে পাহারা না দিতাম তাহলে হাজার হাজার অপরাধ সংগঠিত হতো। চাকরি জীবনের সব সময় চেষ্টা করেছি যাতে মানুষের কাছ থেকে শুনতে পারি পুলিশ আমার জন্য চেষ্টা করেছে। আপনাদের সবার কাছে আমার অনুরোধ রইলো আপনারা আপনাদের চাকরি জীবনে এমনভাবে কাজ করবেন যাতে মানুষ বলে যে পুলিশ আমাদের জন্য চেষ্টা করেছে। আমরা যদি দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করি, মানুষের জন্য কাজ করি তাহলে জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কথা শুনবেন, আমাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন।

প্রসঙ্গত, শফিকুল ইসলাম ১৯৮৯ সালে ৮ম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ডিএমপির ৩৪তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কর্মজীবনে তিনি সিএমপি, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার, ৭ এপিবিএন-পটুয়াখালী জেলা, ২ এপিবিএন-সুনামগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকা রেঞ্জ, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, পুলিশ সদর দপ্তর ও সিআইডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।–দেশ রূপান্তর

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না’

প্রকাশিত সময় : ১১:২৬:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২২

চাকরি জীবনে কোথাও থেকে কোনো অন্যায় সুবিধা নিইনি। সরকারি কর্মকর্তাকে ভালোভাবে চলতে পেছন থেকে যে সাপোর্ট পেয়েছি সেই জন্য স্যালুট ও শ্রদ্ধা। চাকরিটাকে আমি ইবাদত মনে করেছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। যতক্ষণ শ্বাস আছে, যতক্ষণ আশা আছে ততক্ষণ পুলিশ বাহিনী লড়াই করবে, বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের বিদায়ী কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন অডিটরিয়ামে ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২২’ উপলক্ষে  আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, শনিবার সন্ধ্যায় ডিএমপি সদর দপ্তরে নতুন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দায়িত্ব নেন। এই সময় তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। পরে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শহীদ পুলিশ স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে উদ্দেশ্য করে বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুরো চাকরিজীবনে আপনার যে আশীর্বাদ মাথার ওপরে ছিল তা কখনোই ভুলব না। ডিএমপি কমিশনার হওয়ার পাঁচ-ছয় মাস যেতেই করোনা এসেছে। সে সময় বিধিনিষেধের কারণে স্বাভাবিক সভা-সমাবেশ বন্ধ হয়ে যায়। সে জন্য কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জন্য আমি খুব বেশি কাজ করতে পারিনি। তারপরও চেষ্টা করে গেছি।

তিনি বলেন, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, যৌতুক, মাদকের মতো সামাজিক সমস্যা রোধে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আগে এসব সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে আলাদা আইন ছিল না। পর্যায়ক্রমে অপরাধ বাড়তে থাকল, আইন হলো। পর্যায়ক্রমে আইন কঠোর থেকে কঠোর হলো। কিন্তু শুধু আইন করে কী অপরাধ নির্মূল সম্ভব হয়েছে? হয়তো কমেছে। কিন্তু খুব বেশি লাভ হয়নি। এসব সামাজিক সমস্যা যদি সবাই মিলে প্রতিরোধ করি তাহলেই এই অপরাধ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। প্রত্যেক মাদকসেবী মাদকের টাকা জোগাড় করতে অপরাধে জড়ায়। এক সময় মাদক কারবারে জড়ায়। একজন মাদক কারবারিকে ধরলে শত শত ব্যবসায়ী তৈরি হচ্ছে। আজ যে মাদক খায় সেই ভবিষ্যতের কারবারি। সামাজিকভাবে সবাই মিলে এটা প্রতিরোধ করতে না পারলে শুধু জেল দিয়ে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। আমরা সমাজে বাস করি, আমরাই নির্ধারণ করব আমাদের সমাজ কেমন হবে। সবাই হাত মেলালে সমাজের গুটি কয়েক দুর্বৃত্ত পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।

এর আগে আরেকটি অনুষ্ঠানে শফিকুল ইসলাম বলেন, ভালো কাজের জন্য কারো কাছে জবাবদিহিতা করতে হয় না, জবাবদিহিতা করতে হয় মন্দ কাজের জন্য। আমরা মানুষের ভালো কাজের প্রশংসা করতে জানি না, মানুষের কাজের জন্য কৃতিত্ব দিতে আমরা কুন্ঠিত বোধ করি। সহকর্মীদের উপর নিজের বীরত্ব জাহির করিনি। যার যার কাজের জন্য তাকে প্রশংসিত করেছি। আরেক জনের অর্জনকে নিজের অর্জন বলে ছিনিয়ে নেইনি। চাকরি জীবনে কারো জন্য দুঃখ-কষ্টের কারণ হইনি। মানুষ যেন পুলিশ দেখে আতঙ্কিত না হয়, মানুষ যেন পুলিশ দেখে আশ্বস্ত হয় এমনভাবে কাজ করেছি। আল্লাহ বলেছেন মজলুম ও আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না, একজন মজলুম যখন কষ্ট পেয়েছে আল্লাহর দরবারে হাত তোলে তখন সেটা কবুল হয়ে যায়। তাই আমরা এমনভাবে কাজ করবো যেন মানুষ অত্যাচারিত হয়ে পুলিশের কাছে আসার পর, তাদের অত্যাচারের বোঝা আমরা আরো বাড়িয়ে না দেই। আমরা রাতের পর রাত ঘুমাই না রাস্তায় পাহারা দেই। আমরা যদি এমনিভাবে পাহারা না দিতাম তাহলে হাজার হাজার অপরাধ সংগঠিত হতো। চাকরি জীবনের সব সময় চেষ্টা করেছি যাতে মানুষের কাছ থেকে শুনতে পারি পুলিশ আমার জন্য চেষ্টা করেছে। আপনাদের সবার কাছে আমার অনুরোধ রইলো আপনারা আপনাদের চাকরি জীবনে এমনভাবে কাজ করবেন যাতে মানুষ বলে যে পুলিশ আমাদের জন্য চেষ্টা করেছে। আমরা যদি দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করি, মানুষের জন্য কাজ করি তাহলে জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের কথা শুনবেন, আমাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন।

প্রসঙ্গত, শফিকুল ইসলাম ১৯৮৯ সালে ৮ম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ডিএমপির ৩৪তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কর্মজীবনে তিনি সিএমপি, খাগড়াছড়ি, মৌলভীবাজার, ৭ এপিবিএন-পটুয়াখালী জেলা, ২ এপিবিএন-সুনামগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকা রেঞ্জ, এন্টি টেরোরিজম ইউনিট, পুলিশ সদর দপ্তর ও সিআইডির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।–দেশ রূপান্তর