বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৈকতে দাঁড়িয়ে শেষ সূর্যকে বিদায়  

২০২২ সালের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে ভিড় করেছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা। এ সময় সৈকতপাড়ের বালুচরে ও হাঁটু সমান পানিতে দাঁড়িয়ে বছরের শেষ সূর্যের বিদায় জানান তারা। কক্সবাজারে এবার উন্মুক্ত স্থানে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোনো আয়োজন ছিল না। তারপরও বছরের শেষ সূর্যকে হাতছানি দিয়ে বিদায় জানাতে সমুদ্রসৈকতে ছুটে এসেছেন দেশি-বিদেশি পর্যটক। থার্টিফার্স্ট নাইট ঘিরে পর্যটন শহরের ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজের প্রায় ৭৫ শতাংশ বুকিং বলে রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার। এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছে জেলা প্রশাসন ও টুরিস্ট পুলিশের টিম। কুমিল্লা লাকসাম থেকে আসা পর্যটক দম্পতি হৃদয় হাসান-রুবি জানান, বছরের শেষ সূর্য দেখতে এবারই প্রথম কক্সবাজার এসেছেন তারা। এর আগে পরিকল্পনা থাকলেও নানা ব্যস্ততার কারণে কক্সবাজার আসা হয়নি তাদের। এবার বালুচরে দাঁড়িয়ে ২০২২ সালের শেষ সূর্যকে বিদায় জানিয়েছেন তারা। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে স্বপরিবারে আসা সাদ্দাম হোসাইন জানান, এই বছরের শেষ সময়টা কক্সবাজারে কাটানোর দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল। অবশেষে পরিবার নিয়ে অনেক মজা করেছেন। তবে তারা ভেবেছিলেন, সৈকতে কনসার্ট হবে। কিন্তু শুনলাম থার্টি ফার্স্ট নাইটে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এটা জেনে একটু মন খারাপ হয়েছে তাদের। চলতি বছরের শেষ দিনটি প্রিয়তমার সঙ্গে কাটাতে এক সপ্তাহ আগে কক্সবাজার চলে আসলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির প্রবাসী শিহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘হোটেল বুকিং হয়ে যাচ্ছে- এমন ভয়ে সাত দিন আগে থেকে রুম ভাড়া করে নিয়ে নিলাম, পরে যাতে ঝামেলা পোহাতে না হয়। মনে আশা ছিল, প্রিয়তমাকে নিয়ে বছরের শেষদিন সৈকতের বালুচরে হাঁটব। থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে বাড়তি আয়োজন না থাকলেও প্রিয়জনের সঙ্গে বেশ ভালো সময় কাটাচ্ছি।’ প্রতিবছর পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছর স্বাগত জানাতে ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হতো সব হোটেল ও মোটেল। কিন্তু করোনার পর থেকে তা চোখে পড়েনি। কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় পর্যটন স্পট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আগের তুলনায় কক্সবাজারে পর্যটক অনেকাংশে কমে গেছে। পর্যটকরা কুয়াকাটামুখী হয়েছে। তাছাড়া কক্সবাজারে বিভিন্ন হোটেলের দালাল ও ফড়িয়াদের খপ্পরে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক পর্যটক কক্সবাজারে আসতে চান না। এর আগে বছরের শেষ সময়ে কক্সবাজারে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ, গেস্ট হাউজ শতভাগ বুকিং থাকলেও এবার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনেক টাকা খরচ করে সরকার পর্যটন খাতে উন্নতির জন্য সড়ক করেছে কিন্তু সেই সড়কে ছোট ছোট অটোরিকশার কারণে পর্যটন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। যার কারণে পর্যটকরা কক্সবাজার থেতে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। সৈকতে নিয়োজিত বিচকর্মী ও লাইফগার্ড কর্মীরা বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের সেবায় সবসময় কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ যেন হয়রানি না হয়, সেদিকে প্রতিনিয়ত লক্ষ্য রাখছেন। বছরের শেষ সূর্য দেখতে সৈকতে হাজারো মানুষ ভিড় করছেন। তারা গভীর পানিতে নামছেন কি-না অথবা কোনো সমস্যায় পড়েছেন কি-না, তা সার্বক্ষণিক তদারকি করে যাচ্ছেন। কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটন এলাকায় কোথাও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে কনসার্ট, নাচগান বা আতশবাজির আয়োজন করতে না দেয়ার ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পর্যটকরা সুন্দরভাবে কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সৈকত থেকে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে অনেক পর্যটক এসেছেন। সেখানে রয়েছে স্থানীয়রাও। তবে সরকারি নির্দেশনায় আমরা উন্মুক্ত জায়গায় থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে নিষেধজ্ঞা জারি করেছি। উন্মুক্ত স্থানে হৈ-হুল্লোড়, কনসার্ট-গান বাজনা করা যাবে না।রাইজিংবিডি.কম

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

হাদির অবস্থা সংকটাপন্ন, তবে মৃত্যুর তথ্য সত্য নয়: ইনকিলাব মঞ্চ

সৈকতে দাঁড়িয়ে শেষ সূর্যকে বিদায়  

প্রকাশিত সময় : ০৬:৪৭:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

২০২২ সালের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে ভিড় করেছেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা। এ সময় সৈকতপাড়ের বালুচরে ও হাঁটু সমান পানিতে দাঁড়িয়ে বছরের শেষ সূর্যের বিদায় জানান তারা। কক্সবাজারে এবার উন্মুক্ত স্থানে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কোনো আয়োজন ছিল না। তারপরও বছরের শেষ সূর্যকে হাতছানি দিয়ে বিদায় জানাতে সমুদ্রসৈকতে ছুটে এসেছেন দেশি-বিদেশি পর্যটক। থার্টিফার্স্ট নাইট ঘিরে পর্যটন শহরের ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজের প্রায় ৭৫ শতাংশ বুকিং বলে রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার। এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছে জেলা প্রশাসন ও টুরিস্ট পুলিশের টিম। কুমিল্লা লাকসাম থেকে আসা পর্যটক দম্পতি হৃদয় হাসান-রুবি জানান, বছরের শেষ সূর্য দেখতে এবারই প্রথম কক্সবাজার এসেছেন তারা। এর আগে পরিকল্পনা থাকলেও নানা ব্যস্ততার কারণে কক্সবাজার আসা হয়নি তাদের। এবার বালুচরে দাঁড়িয়ে ২০২২ সালের শেষ সূর্যকে বিদায় জানিয়েছেন তারা। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে স্বপরিবারে আসা সাদ্দাম হোসাইন জানান, এই বছরের শেষ সময়টা কক্সবাজারে কাটানোর দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল। অবশেষে পরিবার নিয়ে অনেক মজা করেছেন। তবে তারা ভেবেছিলেন, সৈকতে কনসার্ট হবে। কিন্তু শুনলাম থার্টি ফার্স্ট নাইটে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এটা জেনে একটু মন খারাপ হয়েছে তাদের। চলতি বছরের শেষ দিনটি প্রিয়তমার সঙ্গে কাটাতে এক সপ্তাহ আগে কক্সবাজার চলে আসলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির প্রবাসী শিহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘হোটেল বুকিং হয়ে যাচ্ছে- এমন ভয়ে সাত দিন আগে থেকে রুম ভাড়া করে নিয়ে নিলাম, পরে যাতে ঝামেলা পোহাতে না হয়। মনে আশা ছিল, প্রিয়তমাকে নিয়ে বছরের শেষদিন সৈকতের বালুচরে হাঁটব। থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে বাড়তি আয়োজন না থাকলেও প্রিয়জনের সঙ্গে বেশ ভালো সময় কাটাচ্ছি।’ প্রতিবছর পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছর স্বাগত জানাতে ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হতো সব হোটেল ও মোটেল। কিন্তু করোনার পর থেকে তা চোখে পড়েনি। কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় পর্যটন স্পট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আগের তুলনায় কক্সবাজারে পর্যটক অনেকাংশে কমে গেছে। পর্যটকরা কুয়াকাটামুখী হয়েছে। তাছাড়া কক্সবাজারে বিভিন্ন হোটেলের দালাল ও ফড়িয়াদের খপ্পরে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক পর্যটক কক্সবাজারে আসতে চান না। এর আগে বছরের শেষ সময়ে কক্সবাজারে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ, গেস্ট হাউজ শতভাগ বুকিং থাকলেও এবার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনেক টাকা খরচ করে সরকার পর্যটন খাতে উন্নতির জন্য সড়ক করেছে কিন্তু সেই সড়কে ছোট ছোট অটোরিকশার কারণে পর্যটন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। যার কারণে পর্যটকরা কক্সবাজার থেতে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। সৈকতে নিয়োজিত বিচকর্মী ও লাইফগার্ড কর্মীরা বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের সেবায় সবসময় কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ যেন হয়রানি না হয়, সেদিকে প্রতিনিয়ত লক্ষ্য রাখছেন। বছরের শেষ সূর্য দেখতে সৈকতে হাজারো মানুষ ভিড় করছেন। তারা গভীর পানিতে নামছেন কি-না অথবা কোনো সমস্যায় পড়েছেন কি-না, তা সার্বক্ষণিক তদারকি করে যাচ্ছেন। কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটন এলাকায় কোথাও থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে কনসার্ট, নাচগান বা আতশবাজির আয়োজন করতে না দেয়ার ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পর্যটকরা সুন্দরভাবে কক্সবাজারের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সৈকত থেকে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে অনেক পর্যটক এসেছেন। সেখানে রয়েছে স্থানীয়রাও। তবে সরকারি নির্দেশনায় আমরা উন্মুক্ত জায়গায় থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে নিষেধজ্ঞা জারি করেছি। উন্মুক্ত স্থানে হৈ-হুল্লোড়, কনসার্ট-গান বাজনা করা যাবে না।রাইজিংবিডি.কম