বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কনকনে শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

কনকনে শীতের তীব্রতায় দেশের সাধারণ মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের মাত্রা বেশি। এসব এলাকার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত শ্রীমঙ্গলের জনজীবন। এছাড়া ঈশ্বরদী, রাজশাহী, তেঁতুলিয়া, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, সিলেটসহ আশপাশের এলাকায়ও জেঁকে বসেছে শীত। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। জানুয়ারি ২০২৩ এর দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে দেশে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। যার মধ্যে একটি ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ রয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি অথবা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা বা মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি কখনো কখনো দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। এ মাসে দেশের দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ২.৫০ থেকে ৩.৫০ মিলিমিটার এবং গড় সূর্য কিরণকাল ৫.০০ থেকে ৭.০০ ঘণ্টা থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ৯.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ঈশ্বরদীতে ১০.০, রাজশাহীতে ১০.৯, তেঁতুলিয়া ও সৈয়দপুরে ১১.২, রাজারহাটে ১১.৫, নিকলিতে ১১.৬, তাড়াশ, দিনাজপুর, কুমারখালী, চুয়াডাঙ্গা ও সিলেটে ১২.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে আজ বুধবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, রানওয়ের ভিজিবিলিটি কম হওয়ায় রিয়াদ থেকে সৌদিয়ার একটি ফ্লাইট হায়দরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া পরবর্তী তিন দিনে আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা প্রবাহিত হচ্ছে। এটি আরও কয়েকদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এমতাবস্থায় কৃষকদের জন্য ধান গাছের বৃদ্ধির পর্যায়ে কৃষি পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। আজ বুধবার (৪ জানুয়ারি) ‘বিশেষ কৃষি আবহাওয়া বুলেটিনে’ বলা হয়েছে, আজ রাতে রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা প্রবাহিত হবে। আজ রাতের মধ্যে কুয়াশা সিলেট বিভাগের সকল জেলায় বিস্তার লাভ করবে। এ কুয়াশা আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এতে বলা হয়েছে, পুরো হিমালয় পর্বতের পাদদেশ কুয়াশায় আচ্ছন্ন। এই কুয়াশা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এই কুয়াশার চাদরে পুরোটাই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। কুয়াশা শুক্রবারের পরে শেষ হয়ে গেলেও এরপরে বাতাসের তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে তবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঠান্ডা বাতাস বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। আগামী মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) পর্যন্ত কৃষি পরামর্শে বলা হয়েছে, কুয়াশা ও তীব্র শীতের এ অবস্থায় বীজতলায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে; স্বচ্ছ পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বীজতলা সারাদিন রাত ঢেকে রাখতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, পলিথিনের সঙ্গে চারার পাতা যেন স্পর্শ না করে; প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৭০-৮০ গ্রাম থিওভিট অথবা কমুলাস ভালোভাবে মিশিয়ে ৪-৫ শতাংশ বীজতলায় স্প্রে করা যেতে পারে; এ সময় বীজ তলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিলে, বীজতলায় পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিলে, প্রতিদিন সকালে চারার উপর জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিলে চারা ঠান্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পায় এবং স্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

কনকনে শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রকাশিত সময় : ০৫:৫৪:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩

কনকনে শীতের তীব্রতায় দেশের সাধারণ মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের মাত্রা বেশি। এসব এলাকার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত শ্রীমঙ্গলের জনজীবন। এছাড়া ঈশ্বরদী, রাজশাহী, তেঁতুলিয়া, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, সিলেটসহ আশপাশের এলাকায়ও জেঁকে বসেছে শীত। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। জানুয়ারি ২০২৩ এর দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে দেশে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। যার মধ্যে একটি ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ রয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি অথবা ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা বা মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি কখনো কখনো দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। এ মাসে দেশের দৈনিক গড় বাষ্পীভবন ২.৫০ থেকে ৩.৫০ মিলিমিটার এবং গড় সূর্য কিরণকাল ৫.০০ থেকে ৭.০০ ঘণ্টা থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ৯.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া ঈশ্বরদীতে ১০.০, রাজশাহীতে ১০.৯, তেঁতুলিয়া ও সৈয়দপুরে ১১.২, রাজারহাটে ১১.৫, নিকলিতে ১১.৬, তাড়াশ, দিনাজপুর, কুমারখালী, চুয়াডাঙ্গা ও সিলেটে ১২.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে আজ বুধবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম জানান, রানওয়ের ভিজিবিলিটি কম হওয়ায় রিয়াদ থেকে সৌদিয়ার একটি ফ্লাইট হায়দরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া পরবর্তী তিন দিনে আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা প্রবাহিত হচ্ছে। এটি আরও কয়েকদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এমতাবস্থায় কৃষকদের জন্য ধান গাছের বৃদ্ধির পর্যায়ে কৃষি পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। আজ বুধবার (৪ জানুয়ারি) ‘বিশেষ কৃষি আবহাওয়া বুলেটিনে’ বলা হয়েছে, আজ রাতে রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা প্রবাহিত হবে। আজ রাতের মধ্যে কুয়াশা সিলেট বিভাগের সকল জেলায় বিস্তার লাভ করবে। এ কুয়াশা আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এতে বলা হয়েছে, পুরো হিমালয় পর্বতের পাদদেশ কুয়াশায় আচ্ছন্ন। এই কুয়াশা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এই কুয়াশার চাদরে পুরোটাই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। কুয়াশা শুক্রবারের পরে শেষ হয়ে গেলেও এরপরে বাতাসের তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে তবে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঠান্ডা বাতাস বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। আগামী মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) পর্যন্ত কৃষি পরামর্শে বলা হয়েছে, কুয়াশা ও তীব্র শীতের এ অবস্থায় বীজতলায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে; স্বচ্ছ পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বীজতলা সারাদিন রাত ঢেকে রাখতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, পলিথিনের সঙ্গে চারার পাতা যেন স্পর্শ না করে; প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৭০-৮০ গ্রাম থিওভিট অথবা কমুলাস ভালোভাবে মিশিয়ে ৪-৫ শতাংশ বীজতলায় স্প্রে করা যেতে পারে; এ সময় বীজ তলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিলে, বীজতলায় পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিলে, প্রতিদিন সকালে চারার উপর জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিলে চারা ঠান্ডার প্রকোপ থেকে রক্ষা পায় এবং স্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে।