মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে আমিরাতের দ্বারস্থ শেহবাজ শরিফ

ভারতের সঙ্গে অর্থবহ এবং প্রকৃত আলোচনা চান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। আল অ্যারাবিয়া সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শরিফ কোনো রাখঢাক না করেই বলেছেন, দিল্লির সঙ্গে তিনটি যুদ্ধ করতে গিয়ে পাকিস্তান শিক্ষা পেয়েছে। এখন দুই দেশের হাতে পরমাণু অস্ত্র আছে। তাই লড়াইয়ের পথ নয়, আলোচনার পথে যেতে চাইছেন শরিফ। তিনি বলেছেন, কাশ্মীরের মতো জ্বলন্ত সমস্যাসহ সব বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আহ্বান জানাতে চান তিনি। এদিকে সংবাদপত্র দ্য ডন জানিয়েছে, শরিফ পাকিস্তানে ফিরে বলেছেন, তিনি আমিরাতের প্রেসিডেন্ট ও তার ভাইকে অনুরোধ করেছেন, তারা যাতে এই আলোচনার পথ প্রশস্ত করেন। তিনি বলেছেন, ‘আমিরাত ও পাকিস্তানের ভ্রাতৃসম দেশ। ভারতের সঙ্গেও ওদের খুব ভালো সম্পর্ক আছে। তাই তারা দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পারে। আমি কথা দিচ্ছি, আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে অর্থবহ আলোচনা করব।’ শরিফ বলেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী মোদি ও ভারতীয় নেতৃত্বকে এই বার্তা দিতে চাই যে আসুন, আলোচনার টেবিলে বসি। কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে প্রকৃত ও অর্থবহ আলোচনা করি। আমরা ঝগড়া করে একে অন্যের সময় ও সম্পদ নষ্ট করব, নাকি শান্তিতে থাকব সেই সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে।’ তবে শরিফের সাক্ষাৎকারের পর তার মুখপাত্র টুইটে বলেছেন, ‘কাশ্মীর প্রসঙ্গে শরিফের মত বদল হয়নি। তিনি চান, জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা মাথায় রেখে সমস্যার সমাধান করতে।’ তবে ভারতের এখন স্পষ্ট মনোভাব হলো, কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাব তারা মানবে না। শরিফ বলেছেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে তিনটি যুদ্ধ করেছি। তার ফলে মানুষের অবস্থা খারাপ হয়েছে। মানুষ আরো গরিব ও বেকার হয়েছে।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। এমন নয় যে আমরা নিজেদের পছন্দমতো প্রতিবেশী হয়েছি। কিন্তু ঘটনা হলো, আমাদের প্রতিবেশী থাকতে হবে। এটাও ঘটনা, আমরা শান্তিতে থাকব না ঝগড়া করব, তা আমাদেরই হাতে।’ শেহবাজ শরিফ যখন এই কথাগুলো বলছেন, তখন পাকিস্তানে আর্থিক সংকট চরমে। জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে না। আটা-ময়দার মতো জিনিসও বাজার থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। তেহরিক-ই-তালেবান বারবার আক্রমণ করে যাচ্ছে। দিন কয়েক আগেই বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক শেহবাজ চৌধুরী নিউ এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারতের হাতে এখন ৬০০ বিলিয়নের বেশি বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার আছে। আর পাকিস্তানের হাতে আছে চার দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের। ভারত এখন বিশ্বের কাছে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাইছে। কৃষি উৎপাদনে তারা বিশ্বের সেরা। এই পরিস্থিতিতে শরিফ বলেছেন, ‘আমরা আর বোমা, গোলাবারুদের ওপর খরচ করতে চাই না। আমাদের হাতে পরমাণু বোমা আছে। আর যুদ্ধ হলে আমরা কেউই বেঁচে থাকব না।’ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ভারতের বক্তব্য হলো, পাকিস্তান একদিকে জঙ্গিদের সাহায্য করে, প্রশিক্ষণ দেয়, অন্যদিকে আলোচনা চালানোর কথা বলে। এর কোনো অর্থ হয় না। শরিফের এই মন্তব্য নিয়ে ভারত সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল বক্সি এএনআইকে বলেছেন, ‘এর আগে ইমরান খানও এ রকম কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারপর কিছু হয়নি। শরিফ একটা কথা ঠিক বলেছেন, তিনটি যুদ্ধ করে পাকিস্তানের শুধু ক্ষতি হয়েছে এবং বদনাম হয়েছে।’ প্রফুল্ল মনে করেন, শরিফের চিন্তা খুব ভালো। কিন্তু পাকিস্তানে একটি কট্টর প্রভাবশালী অংশ আছে। তারা কিছুতেই তাকে এই কাজ করতে দেবে না। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ অলোক বনশল এএনআইকে বলেছেন, ‘পাকিস্তানে এখন ভয়ংকর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট চলছে। পাকিস্তানের রাজনীতিকরা বুঝতে পারছেন, ভারতের সঙ্গে অযথা লড়াই করে কোনো লাভ নেই। কিন্তু পাকিস্তানে এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেয় না। সেনা ও আইএসআই নেয়। তাই কী হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে শেহবাজ শরিফের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক আগের প্রধানমন্ত্রীদের চেয়ে ভালো।’ সূত্র : ডয়চে ভেলে

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে আমিরাতের দ্বারস্থ শেহবাজ শরিফ

প্রকাশিত সময় : ০৫:০৩:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩

ভারতের সঙ্গে অর্থবহ এবং প্রকৃত আলোচনা চান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। আল অ্যারাবিয়া সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শরিফ কোনো রাখঢাক না করেই বলেছেন, দিল্লির সঙ্গে তিনটি যুদ্ধ করতে গিয়ে পাকিস্তান শিক্ষা পেয়েছে। এখন দুই দেশের হাতে পরমাণু অস্ত্র আছে। তাই লড়াইয়ের পথ নয়, আলোচনার পথে যেতে চাইছেন শরিফ। তিনি বলেছেন, কাশ্মীরের মতো জ্বলন্ত সমস্যাসহ সব বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আহ্বান জানাতে চান তিনি। এদিকে সংবাদপত্র দ্য ডন জানিয়েছে, শরিফ পাকিস্তানে ফিরে বলেছেন, তিনি আমিরাতের প্রেসিডেন্ট ও তার ভাইকে অনুরোধ করেছেন, তারা যাতে এই আলোচনার পথ প্রশস্ত করেন। তিনি বলেছেন, ‘আমিরাত ও পাকিস্তানের ভ্রাতৃসম দেশ। ভারতের সঙ্গেও ওদের খুব ভালো সম্পর্ক আছে। তাই তারা দুই দেশকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পারে। আমি কথা দিচ্ছি, আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে অর্থবহ আলোচনা করব।’ শরিফ বলেছেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী মোদি ও ভারতীয় নেতৃত্বকে এই বার্তা দিতে চাই যে আসুন, আলোচনার টেবিলে বসি। কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে প্রকৃত ও অর্থবহ আলোচনা করি। আমরা ঝগড়া করে একে অন্যের সময় ও সম্পদ নষ্ট করব, নাকি শান্তিতে থাকব সেই সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে।’ তবে শরিফের সাক্ষাৎকারের পর তার মুখপাত্র টুইটে বলেছেন, ‘কাশ্মীর প্রসঙ্গে শরিফের মত বদল হয়নি। তিনি চান, জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা মাথায় রেখে সমস্যার সমাধান করতে।’ তবে ভারতের এখন স্পষ্ট মনোভাব হলো, কাশ্মীর নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাব তারা মানবে না। শরিফ বলেছেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে তিনটি যুদ্ধ করেছি। তার ফলে মানুষের অবস্থা খারাপ হয়েছে। মানুষ আরো গরিব ও বেকার হয়েছে।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। এমন নয় যে আমরা নিজেদের পছন্দমতো প্রতিবেশী হয়েছি। কিন্তু ঘটনা হলো, আমাদের প্রতিবেশী থাকতে হবে। এটাও ঘটনা, আমরা শান্তিতে থাকব না ঝগড়া করব, তা আমাদেরই হাতে।’ শেহবাজ শরিফ যখন এই কথাগুলো বলছেন, তখন পাকিস্তানে আর্থিক সংকট চরমে। জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে না। আটা-ময়দার মতো জিনিসও বাজার থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। তেহরিক-ই-তালেবান বারবার আক্রমণ করে যাচ্ছে। দিন কয়েক আগেই বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক শেহবাজ চৌধুরী নিউ এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারতের হাতে এখন ৬০০ বিলিয়নের বেশি বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার আছে। আর পাকিস্তানের হাতে আছে চার দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের। ভারত এখন বিশ্বের কাছে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাইছে। কৃষি উৎপাদনে তারা বিশ্বের সেরা। এই পরিস্থিতিতে শরিফ বলেছেন, ‘আমরা আর বোমা, গোলাবারুদের ওপর খরচ করতে চাই না। আমাদের হাতে পরমাণু বোমা আছে। আর যুদ্ধ হলে আমরা কেউই বেঁচে থাকব না।’ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ভারতের বক্তব্য হলো, পাকিস্তান একদিকে জঙ্গিদের সাহায্য করে, প্রশিক্ষণ দেয়, অন্যদিকে আলোচনা চালানোর কথা বলে। এর কোনো অর্থ হয় না। শরিফের এই মন্তব্য নিয়ে ভারত সরকারিভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ প্রফুল্ল বক্সি এএনআইকে বলেছেন, ‘এর আগে ইমরান খানও এ রকম কথা বলেছিলেন। কিন্তু তারপর কিছু হয়নি। শরিফ একটা কথা ঠিক বলেছেন, তিনটি যুদ্ধ করে পাকিস্তানের শুধু ক্ষতি হয়েছে এবং বদনাম হয়েছে।’ প্রফুল্ল মনে করেন, শরিফের চিন্তা খুব ভালো। কিন্তু পাকিস্তানে একটি কট্টর প্রভাবশালী অংশ আছে। তারা কিছুতেই তাকে এই কাজ করতে দেবে না। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ অলোক বনশল এএনআইকে বলেছেন, ‘পাকিস্তানে এখন ভয়ংকর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট চলছে। পাকিস্তানের রাজনীতিকরা বুঝতে পারছেন, ভারতের সঙ্গে অযথা লড়াই করে কোনো লাভ নেই। কিন্তু পাকিস্তানে এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেয় না। সেনা ও আইএসআই নেয়। তাই কী হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে শেহবাজ শরিফের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক আগের প্রধানমন্ত্রীদের চেয়ে ভালো।’ সূত্র : ডয়চে ভেলে