মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: যে শিশুদের নাম হারিয়ে গেছে!

তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পে অনেক নবজাতক শিশুই তাদের মা-বাবাকে হারিয়েছে, সাথে হারিয়েছে তাদের নামটিও। তাদের নিয়ে কত স্বপ্নই না বুনেছিল আশপাশের মানুষগুলো। অথচ সেই তুলতুলে হাতগুলো আজ প্রিয়জনকে আঁকড়ে ধরতে পারছে না। তাদের কেউ ধ্বংসস্তুপের ভেতরে হারিয়ে গেছেন, কেউ বা পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। দেশটির আদানা হাসপাতালে এমন শত শত শিশু রয়েছে, যাদের মা-বাবার কোনো হদিস নেই অথবা মারা গেছেন। ওই শিশুদের বয়স এতোটাই কম যে তারা কোনো কিছু বলতে বা বুঝতে পারে না। তাদের জীবন থেকে কী হারিয়ে গেছে, তা অনুধাবন করার মতো অবস্থাও গড়ে উঠেনি। ভূমিকম্প তাদের ঘরবাড়ি ধসিয়ে দিয়েছে, ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের নাম পরিচয়! হাসপাতালটির উপ-পরিচালক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নুরসা কেসকিন। আইসিইউ’তে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) ছয় মাসের এক শিশুকন্যাকে ফিডারে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন, যার মা-বাবার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি শিশুটির নরম তুলতুলে হাত ধরে আছেন, মমতার পরশ দিচ্ছেন। কন্যাশিশুটির বেডের পাশে লেখা ‘অজ্ঞাতনামা’, যা তাদের পরিচয় জানিয়ে দিচ্ছে! শিশুটির শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন! একটি চোখ কালচে হয়ে আছে, মুখ ভয়ানকভাবে থেতলে আছে। তবুও সে আশপাশের মানুষকে দেখে হাসছে! ডা. কেসকিন বলেন, ‘আমরা জানি তাকে কোথায় পাওয়া গেছে এবং কিভাবে সে এখানে এসেছেন। তবে আমরা তার ঠিকানা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।’ তুরস্কের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ধরনের অজ্ঞাত পরিচয়ের শিশুদের আদানা হাসপাতালে আনা হচ্ছে। কারণ শক্তিশালী ভূমিকম্পে হাসপাতালের কোনো ক্ষতি হয়নি। অনেক হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধসে পড়লেও এটি অক্ষত আছে। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৬০ জন অজ্ঞাত শিশুকে আদানা হাসপাতালে আনা হয়েছে। এর মধ্যে সদ্যোজাত শিশুও রয়েছে। তাদের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

এনসিপির মুখপাত্র হলেন আসিফ মাহমুদ, করবেন না নির্বাচন

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: যে শিশুদের নাম হারিয়ে গেছে!

প্রকাশিত সময় : ১১:৩১:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পে অনেক নবজাতক শিশুই তাদের মা-বাবাকে হারিয়েছে, সাথে হারিয়েছে তাদের নামটিও। তাদের নিয়ে কত স্বপ্নই না বুনেছিল আশপাশের মানুষগুলো। অথচ সেই তুলতুলে হাতগুলো আজ প্রিয়জনকে আঁকড়ে ধরতে পারছে না। তাদের কেউ ধ্বংসস্তুপের ভেতরে হারিয়ে গেছেন, কেউ বা পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন। দেশটির আদানা হাসপাতালে এমন শত শত শিশু রয়েছে, যাদের মা-বাবার কোনো হদিস নেই অথবা মারা গেছেন। ওই শিশুদের বয়স এতোটাই কম যে তারা কোনো কিছু বলতে বা বুঝতে পারে না। তাদের জীবন থেকে কী হারিয়ে গেছে, তা অনুধাবন করার মতো অবস্থাও গড়ে উঠেনি। ভূমিকম্প তাদের ঘরবাড়ি ধসিয়ে দিয়েছে, ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের নাম পরিচয়! হাসপাতালটির উপ-পরিচালক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নুরসা কেসকিন। আইসিইউ’তে (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) ছয় মাসের এক শিশুকন্যাকে ফিডারে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন, যার মা-বাবার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি শিশুটির নরম তুলতুলে হাত ধরে আছেন, মমতার পরশ দিচ্ছেন। কন্যাশিশুটির বেডের পাশে লেখা ‘অজ্ঞাতনামা’, যা তাদের পরিচয় জানিয়ে দিচ্ছে! শিশুটির শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন! একটি চোখ কালচে হয়ে আছে, মুখ ভয়ানকভাবে থেতলে আছে। তবুও সে আশপাশের মানুষকে দেখে হাসছে! ডা. কেসকিন বলেন, ‘আমরা জানি তাকে কোথায় পাওয়া গেছে এবং কিভাবে সে এখানে এসেছেন। তবে আমরা তার ঠিকানা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।’ তুরস্কের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ধরনের অজ্ঞাত পরিচয়ের শিশুদের আদানা হাসপাতালে আনা হচ্ছে। কারণ শক্তিশালী ভূমিকম্পে হাসপাতালের কোনো ক্ষতি হয়নি। অনেক হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধসে পড়লেও এটি অক্ষত আছে। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৬০ জন অজ্ঞাত শিশুকে আদানা হাসপাতালে আনা হয়েছে। এর মধ্যে সদ্যোজাত শিশুও রয়েছে। তাদের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।