শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিকেল গড়াতেই জুতা পায়ে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে

শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহর থেকেই ফুলে ফুলে সেজেছিল শহীদ মিনার। কিন্তু দুপুর পেরিয়ে বিকেল গড়াতেই অনেককেই জুতা পায়ে দেখা গেছে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে ভাষার জন্য এ দিনে প্রাণ দিয়েছিলেন। তাই এ দিনের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের স্মরণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান। দুপুর পর্যন্ত শৃঙ্খলা মেনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানালেও বিকেল গড়াতেই শহীদ মিনারের মূল বেদীতে জুতা নিয়ে অসংখ্য মানুষ প্রবেশ করেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য, সেলফি বা ছবি তোলা। কেউ কেউ আবার ফুল দিতেও উঠছেন জুতা নিয়ে! মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শহীদ মিনারে গিয়ে এমনটিই দেখা যায়। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ দোকানে ছেয়ে গেছে পুরো শহীদ মিনার এলাকা। মিনার প্রাঙ্গণ ময়লা আবর্জনায় হয়ে গেছে পরিপূর্ণ। কারো কোনো তদারকি লক্ষ্য করা যায়নি। জুতা পায়ে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে বাচ্চাদের ছবি তুলছিলেন আনোয়ার হোসেন। জানতে চাইলে প্রথমে ভুল হয়ে গেছে বললেও পরক্ষণেই বললেন, সবাইতো জুতা নিয়েই উঠেছেন! অনেকেই আবার সুন্দর শাড়ি, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, পায়ে হাই হিল জুতা নিয়ে উঠেছেন বেদীতে। জুতা পায়ে সেলফি তুলছিলেন মাসুমা আক্তার নামে এক নারী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে খুলে উঠবো ভাবছিলাম কিন্তু যখন দেখি সবাই উঠেছে তাই আমিও উঠলাম। এ তালিকায় আছেন উচ্চশিক্ষিতরাও। জুতা পায়ে বেদীর ওপর দেখা গেছে আরমান নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন মানুষ অনেক বেশি। তাই সবাই জুতা নিয়ে উঠছে। তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা জাহানুর ইসলামকে। সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিতে উঠেছেন তিনি। জুতা নিয়ে উঠাদের বারণও করছেন তিনি। কিন্তু হাতে গোনা দুয়েকজন শুনলেও বাকিরা সবাই জুতা নিয়েই উঠছেন, অনেকে আবার বিরক্তিও প্রকাশ করছেন। জানতে চাইলে জাহানুর বলেন, মানুষ মুখে চেতনার কথা বললেও বুকে ধারণ করে না। প্রায় সবাই জুতা নিয়ে শহীদ মিনারে উঠছেন। বারণ করলেও কেউ শুনছেন না। ভাষা শহীদদের আমাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। হোসাইন নামে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, কাল রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। এখন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। মানুষেরও বিবেক থাকা উচিত। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, এবার আমরাও লক্ষ্য করেছি বিষয়টি। এমন একটা শ্রদ্ধার জায়গা এমনটা হওয়া দুঃখজনক। যারা দায়িত্বে ছিল তাদের বিষয়টি আরো ভালোভাবে তদারকি করা উচিত ছিল। একুশে উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হল ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি খুব দুঃখজনক। বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্যরা একটু আগে শহীদ মিনার ত্যাগ করায় এমনটি ঘটেছে। কিছু সময়ের জন্য আমরা জুতা নিয়ে আসলাম, কিছু সময় খালি পায়ে আসলাম এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি নয় শহীদদের সম্মান রক্ষার্থে সার্বক্ষণিক এই পবিত্র স্থানকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

বিকেল গড়াতেই জুতা পায়ে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে

প্রকাশিত সময় : ০৯:০১:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহর থেকেই ফুলে ফুলে সেজেছিল শহীদ মিনার। কিন্তু দুপুর পেরিয়ে বিকেল গড়াতেই অনেককেই জুতা পায়ে দেখা গেছে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে ভাষার জন্য এ দিনে প্রাণ দিয়েছিলেন। তাই এ দিনের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের স্মরণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান। দুপুর পর্যন্ত শৃঙ্খলা মেনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানালেও বিকেল গড়াতেই শহীদ মিনারের মূল বেদীতে জুতা নিয়ে অসংখ্য মানুষ প্রবেশ করেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য, সেলফি বা ছবি তোলা। কেউ কেউ আবার ফুল দিতেও উঠছেন জুতা নিয়ে! মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শহীদ মিনারে গিয়ে এমনটিই দেখা যায়। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ দোকানে ছেয়ে গেছে পুরো শহীদ মিনার এলাকা। মিনার প্রাঙ্গণ ময়লা আবর্জনায় হয়ে গেছে পরিপূর্ণ। কারো কোনো তদারকি লক্ষ্য করা যায়নি। জুতা পায়ে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে বাচ্চাদের ছবি তুলছিলেন আনোয়ার হোসেন। জানতে চাইলে প্রথমে ভুল হয়ে গেছে বললেও পরক্ষণেই বললেন, সবাইতো জুতা নিয়েই উঠেছেন! অনেকেই আবার সুন্দর শাড়ি, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, পায়ে হাই হিল জুতা নিয়ে উঠেছেন বেদীতে। জুতা পায়ে সেলফি তুলছিলেন মাসুমা আক্তার নামে এক নারী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে খুলে উঠবো ভাবছিলাম কিন্তু যখন দেখি সবাই উঠেছে তাই আমিও উঠলাম। এ তালিকায় আছেন উচ্চশিক্ষিতরাও। জুতা পায়ে বেদীর ওপর দেখা গেছে আরমান নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন মানুষ অনেক বেশি। তাই সবাই জুতা নিয়ে উঠছে। তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা জাহানুর ইসলামকে। সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিতে উঠেছেন তিনি। জুতা নিয়ে উঠাদের বারণও করছেন তিনি। কিন্তু হাতে গোনা দুয়েকজন শুনলেও বাকিরা সবাই জুতা নিয়েই উঠছেন, অনেকে আবার বিরক্তিও প্রকাশ করছেন। জানতে চাইলে জাহানুর বলেন, মানুষ মুখে চেতনার কথা বললেও বুকে ধারণ করে না। প্রায় সবাই জুতা নিয়ে শহীদ মিনারে উঠছেন। বারণ করলেও কেউ শুনছেন না। ভাষা শহীদদের আমাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। হোসাইন নামে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, কাল রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। এখন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। মানুষেরও বিবেক থাকা উচিত। নাম প্রকাশ না করা শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, এবার আমরাও লক্ষ্য করেছি বিষয়টি। এমন একটা শ্রদ্ধার জায়গা এমনটা হওয়া দুঃখজনক। যারা দায়িত্বে ছিল তাদের বিষয়টি আরো ভালোভাবে তদারকি করা উচিত ছিল। একুশে উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হল ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি খুব দুঃখজনক। বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্যরা একটু আগে শহীদ মিনার ত্যাগ করায় এমনটি ঘটেছে। কিছু সময়ের জন্য আমরা জুতা নিয়ে আসলাম, কিছু সময় খালি পায়ে আসলাম এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু ২১ ফেব্রুয়ারি নয় শহীদদের সম্মান রক্ষার্থে সার্বক্ষণিক এই পবিত্র স্থানকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সরকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।