মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ, কী প্রতিকার?

নাক দিয়ে রক্ত পড়া কোনো রোগ নয়; বরং এটি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ মাত্র। নাক, কান, গলা ছাড়াও শরীরের অন্য অনেক রোগের কারণেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। যে কোনো বয়সেই এটি হতে পারে।

এটি নাকের একপাশ দিয়ে অথবা উভয়পাশ দিয়ে হতে পারে। নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা এপিসট্যাক্সিস সমস্যাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ সমস্যা হলেও অনেক সময় এটি জটিল রোগের উপসর্গ হিসাবে দেখা দেয়। তখন একে মেডিকেল ইমারজেন্সী হিসাবে দেখা হয়।

সাধারণত ৬০ শতাংশ মানুষ, জীবনের কোনো না কোনো সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যার সম্মুখীন হন।

** কারণ

* অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

* নাকের সমস্যা-

১. আঘাতজনিত

২. অপারেশনজনিত

৩. নাকের সর্দি, সাইনোসাইটিস

৪. নাকের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন যেমন-এট্রফিক রাইনাইটিস, রাইনসপোরিডিওসিস।

৫. নাকের ভেতর টিউমার।

৬. নাকের মাঝখানের হাড় অতিরিক্ত বাঁকা।

৭. নাকের মাঝখানের পর্দায় ছিদ্র ইত্যাদি।

** সাধারণ কারণ-

১. ওষুধ (এসপিরিস/ওয়ারফেরিন জাতীয়)।

২. উচ্চরক্তচাপ।

৩. রক্তনালির কিছু জন্মগত ত্রুটি।

৪. মাসিকের সময় এবং গর্ভাবস্থায়।

৫. জন্ডিস বা লিভারের প্রদাহ, লিভার সিরোসিস।

৬. রক্তের রোগ, যেমন- এপ্লাস্টিক অ্যানমিয়া, হিমোফিলিয়া, থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, পারপুরা।

** রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

কী কারণে নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে সেটি নির্ণয় করে চিকিৎসা নিতে হয়। নাকের সামনের দিক থেকে রক্তপাত হলে খুব দ্রুত তা বন্ধ করা যায় কিন্তু পেছন বা ভেতরের দিক থেকে রক্তপাত হলে বহুক্ষেত্রে তা বন্ধ করতে অনেক সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, নাকের এন্ডোস্কপির দরকার পড়ে।

** প্রতিরোধ

* নাক খুঁটবেন না। অনেকের খুব পছন্দের কাজ এটি। খুঁটে খুঁটে নাক থেকে ময়লা বের করেন। এতে হুট করে নাক থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়।

* ঊর্ধ্ব-শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ অর্থাৎ সর্দি/কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। নাকের হাড় বাঁকা থাকলে তারও চিকিৎসা নিন। সময়মত এসবের চিকিৎসা না করালে হঠাৎ করে নাক থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়।

* বাচ্চাদের খেয়াল রাখুন। ঘন ঘন এক নাকে দুর্গন্ধযুক্ত সর্দি হওয়া এবং এর সঙ্গে রক্ত গেলে সতর্ক হবেন। কোন ওষুধে ভালো না হওয়ার মানে হল বাচ্চা সবার অলক্ষ্যে নাকে কিছু ঢুকিয়েছে।

* বয়স্কদের ক্ষেত্রে- নিয়মিত রক্তচাপ মাপান, নিয়ন্ত্রণে রাখুন, নিয়মিত ওষুধ খান। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ নাক দিয়ে রক্ত আসার অন্যতম কারণ। তাই যখনই এমন হবে, আগে ব্লাড প্রেশার চেক করে নিতে হবে।

* যাঁরা (স্ট্রোক অথবা হৃদরোগে আক্রান্ত) রক্ত তরলীকরণের ওষুধ (যেমন- এসপিরিন/ইকোস্প্রিন/ক্লপিড) খেয়ে থাকেন, তাদের নাক দিয়ে রক্ত এলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং ইতিহাস জানাবেন। এসব ওষুধের কারণেও রক্তক্ষরণ হতে পারে।

* যাঁদের নাকের ভেতরটা শুকিয়ে যায় বা ময়লা জমে, তারা খোঁচাখুঁচি না করে দিনে তিন-চার বার নরসল ড্রপ চার/পাঁচ ফোঁটা করে উভয় নাকের ছিদ্রে দিয়ে অথবা ভ্যাসেলিন ব্যবহার করে নাক আর্দ্র রাখতে পারেন। সূত্র: যুগান্তর

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ, কী প্রতিকার?

প্রকাশিত সময় : ০৮:১৭:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

নাক দিয়ে রক্ত পড়া কোনো রোগ নয়; বরং এটি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ মাত্র। নাক, কান, গলা ছাড়াও শরীরের অন্য অনেক রোগের কারণেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। যে কোনো বয়সেই এটি হতে পারে।

এটি নাকের একপাশ দিয়ে অথবা উভয়পাশ দিয়ে হতে পারে। নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা এপিসট্যাক্সিস সমস্যাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ সমস্যা হলেও অনেক সময় এটি জটিল রোগের উপসর্গ হিসাবে দেখা দেয়। তখন একে মেডিকেল ইমারজেন্সী হিসাবে দেখা হয়।

সাধারণত ৬০ শতাংশ মানুষ, জীবনের কোনো না কোনো সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যার সম্মুখীন হন।

** কারণ

* অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

* নাকের সমস্যা-

১. আঘাতজনিত

২. অপারেশনজনিত

৩. নাকের সর্দি, সাইনোসাইটিস

৪. নাকের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন যেমন-এট্রফিক রাইনাইটিস, রাইনসপোরিডিওসিস।

৫. নাকের ভেতর টিউমার।

৬. নাকের মাঝখানের হাড় অতিরিক্ত বাঁকা।

৭. নাকের মাঝখানের পর্দায় ছিদ্র ইত্যাদি।

** সাধারণ কারণ-

১. ওষুধ (এসপিরিস/ওয়ারফেরিন জাতীয়)।

২. উচ্চরক্তচাপ।

৩. রক্তনালির কিছু জন্মগত ত্রুটি।

৪. মাসিকের সময় এবং গর্ভাবস্থায়।

৫. জন্ডিস বা লিভারের প্রদাহ, লিভার সিরোসিস।

৬. রক্তের রোগ, যেমন- এপ্লাস্টিক অ্যানমিয়া, হিমোফিলিয়া, থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, পারপুরা।

** রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

কী কারণে নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে সেটি নির্ণয় করে চিকিৎসা নিতে হয়। নাকের সামনের দিক থেকে রক্তপাত হলে খুব দ্রুত তা বন্ধ করা যায় কিন্তু পেছন বা ভেতরের দিক থেকে রক্তপাত হলে বহুক্ষেত্রে তা বন্ধ করতে অনেক সময় লাগে। কিছু ক্ষেত্রে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, এক্স-রে, সিটিস্ক্যান, নাকের এন্ডোস্কপির দরকার পড়ে।

** প্রতিরোধ

* নাক খুঁটবেন না। অনেকের খুব পছন্দের কাজ এটি। খুঁটে খুঁটে নাক থেকে ময়লা বের করেন। এতে হুট করে নাক থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়।

* ঊর্ধ্ব-শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ অর্থাৎ সর্দি/কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। নাকের হাড় বাঁকা থাকলে তারও চিকিৎসা নিন। সময়মত এসবের চিকিৎসা না করালে হঠাৎ করে নাক থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়।

* বাচ্চাদের খেয়াল রাখুন। ঘন ঘন এক নাকে দুর্গন্ধযুক্ত সর্দি হওয়া এবং এর সঙ্গে রক্ত গেলে সতর্ক হবেন। কোন ওষুধে ভালো না হওয়ার মানে হল বাচ্চা সবার অলক্ষ্যে নাকে কিছু ঢুকিয়েছে।

* বয়স্কদের ক্ষেত্রে- নিয়মিত রক্তচাপ মাপান, নিয়ন্ত্রণে রাখুন, নিয়মিত ওষুধ খান। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ নাক দিয়ে রক্ত আসার অন্যতম কারণ। তাই যখনই এমন হবে, আগে ব্লাড প্রেশার চেক করে নিতে হবে।

* যাঁরা (স্ট্রোক অথবা হৃদরোগে আক্রান্ত) রক্ত তরলীকরণের ওষুধ (যেমন- এসপিরিন/ইকোস্প্রিন/ক্লপিড) খেয়ে থাকেন, তাদের নাক দিয়ে রক্ত এলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন এবং ইতিহাস জানাবেন। এসব ওষুধের কারণেও রক্তক্ষরণ হতে পারে।

* যাঁদের নাকের ভেতরটা শুকিয়ে যায় বা ময়লা জমে, তারা খোঁচাখুঁচি না করে দিনে তিন-চার বার নরসল ড্রপ চার/পাঁচ ফোঁটা করে উভয় নাকের ছিদ্রে দিয়ে অথবা ভ্যাসেলিন ব্যবহার করে নাক আর্দ্র রাখতে পারেন। সূত্র: যুগান্তর