স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আশার প্রত্যায় ব্যক্ত করে পুলিশের কাছে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন রাজশাহীর ৩৩জঙ্গি। বিতর্ক কর্যক্রমের জন্য এসব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একের অধিক মামলা রয়েছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের কাছে তারা আত্মসমার্পন করে স্বাভাবিক জীবন যাপনের অঙ্গিকার করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এসব জঙ্গিরা নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দিচ্ছেন। যদিও রাজশাহীতে জঙ্গিবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১১১জন। এরমধ্যে ৩৩জন জঙ্গি রাজশাহী মহানগর পুলিশের উদ্যোগে নেতিবাচক জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যায় ব্যক্ত করেছে। এসব জঙ্গিরা জামিন রয়েছে। জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্তদের নজরদারি করছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। এ জন্য তাদের প্রত্যেক সপ্তাহে একদিন থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে হাজিরা দিতে হচ্ছে। আরএমপির বেলপুকুর থানায় গত জানুয়ারি থেকে এমন কার্যক্রম শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে রাজশাহী নগরীর বেলপুকুর থানায় অভিযুক্ত ও জামিনপ্রাপ্ত ৩৩ জন জঙ্গি হাজির হন। তারা অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামানের কাছে হাজিরা দেন। এসময় অনেক গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কথা ব্যক্ত করেন। এদের মধ্যে একজন পঞ্চাশোর্ধ নারীও ছিলেন। এরা বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে। বৃহস্পতিবার থানায় তাদের হাজিরা বইয়ে সই নেওয়া হয়েছে। যারা স্বাক্ষর করতে জানেন না, তাদের টিপসই নেওয়া হয়েছে। বেলপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে তার থানা এলাকার ৩৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা আছে। এদের মধ্যে ৩৩ জন থানায় নিয়মিত হাজিরা দেন। এদের একজন বর্তমানে কারাগারে। জামিনে থাকা বাকি ৩২ জন বৃহস্পতিবার থানায় হাজিরা দিয়েছেন। প্রত্যেক সপ্তাহেই তাদের থানায় হাজিরা দিতে হয়। ওসি জানান, যে ৩৪ জন থানায় হাজিরা দেন তাদের মধ্যে চারজন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। উচ্চ আদালত থেকে তারাও এখন জামিনে আছেন। আর একজনের মামলা এখন তদন্তাধীন। অন্য ২৯ জনের মামলা আদালতে বিচারাধীন। জামিনে থাকা সবাইকেই থানায় আসতে হয়। ওসি বলেন, এসব আসামিরা জঙ্গিবাদ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করছেন। তাই তাদের ব্যাপারে সব সময় নজরদারি রাখ হয়। এর অংশ হিসেবেই থানায় হাজিরা নেওয়া হয়। তবে এর সঙ্গে আদালতের বিচারাধীন মামলা কিংবা বিচারের কোন সম্পর্ক নেই। রাজশাহী মহানগরীর ১২ টি থানার মধ্যে ৬ টি থানার মধ্যে বোয়ালিয়া মডেল থানা, রাজপাড়া, মতিহার, বেলপুকুর, পবা ও চন্দ্রিমা থানায় জঙ্গি সংক্রান্তে ২৬ টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৯ টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে, ১৪ টি বিচারাধীন ও ৩ টি তদন্তাধীন রয়েছে। ২৬ টি মামলায় ১১১ জনের মধ্যে জেএমবি’র ৮৬ জন, হিযবুত তাহরীরের ১৫ জন, শাহাদৎ আল হিকমা’র ১ জন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ১ জন এবং আনসার আল ইসলামের ৮ জন জঙ্গি রয়েছে। তারা প্রত্যেকই আজ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার লড়াই করছে। জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা প্রসঙ্গে পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) বলেন, এটি আরএমপি’র প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম। থানায় নিয়মিত হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জামিনে মুক্ত জঙ্গি মামলার আসামিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেছেন এবং আমরাও চাই জঙ্গি মামলার আসামিরা জঙ্গিবাদ হতে মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক। পরীক্ষামূলক বেলপুকুর থানায় ৩৩ জনের হাজিরার মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হলো। এপ্রিল থেকে আরও চার থানায় এ কর্মসূচি শুরু করা হবে। উল্লেখ্য, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের বেলপুকুর থানায় মোট ৩৮ জন তালিকাভুক্ত জঙ্গি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ জন নিয়মিত থানায় হাজিরা দিচ্ছে ও ১ জন জেল হাজতে রয়েছে। থানায় হাজিরা দেওয়া ৩৩ জনের মধ্যে ৩ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাইকোর্টের আদেশে জামিনে মুক্ত রয়েছে। বাকি ৩০ জনের মধ্যে ২৯ জন বিচারাধীন আদালত হতে জামিনে মুক্ত আছে এবং ১ জনকে মামলা তদন্তকালে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। তবে ৪ জন জঙ্গির তথ্য সংগ্রহ সংক্রান্তে গৃহীত কার্যক্রম চলমান আছে।