মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গরমে বাড়ছে জ্বর-সর্দি

আজাদুল আদনান:হাসপাতালে রোগীদের ভিড় ।। শিশুদের ঘরের বাইরে না নেওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের ।। বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে চলছে তীব্র দাবদাহ। এতে হিট স্ট্রোকসহ জ¦র, সর্দি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের পানিশূন্যতা থেকে শুরু করে জন্ডিসের মতো জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রাজধানীর মিরপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন ইসমাইল হোসেন (৩৪)। তীব্র গরম উপেক্ষা করে রোজা রেখে অন্যান্য দিনের মতোই কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করেই তীব্র জ¦র ও সর্দি দেখা দেয়। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেলেও খুব একটা উন্নতি না হওয়ায় গতকাল যান শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বহির্বিভাগে।

একই অবস্থা রিকশাচালক আবুল হাসানের। পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ায় এ দিন প্রতিষ্ঠানে জরুরি বিভাগে তাকে নেওয়া হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

তীব্র গরমে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। বহির্বিভাগের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে সম্প্রতি চালু হওয়া ওয়ান-স্টপ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালটি (ওসেক) সার্ভিস বিভাগেও রোগীদের ভিড় বাড়ছে।

জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা বলেন, এক সপ্তাহ ধরে গরমে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বেশি আসছে হিট স্ট্রোকের রোগী। ডায়রিয়া, উচ্চ রক্তচাপ এবং মাথাব্যথার রোগীও আসছেন। তবে অধিকাংশই চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তাজকিরা সুলতানা চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘গরমে যেসব রোগী হাসপাতালে আসছেন, তাদের অধিকাংশই জরুরি বিভাগে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এসব রোগীর বড় অংশই হিট স্ট্রোকের। এমন অবস্থা হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। যারা কায়িক পরিশ্রম করছেন তাদের কষ্টটাই সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। এ জন্য তরলজাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।’

চাপ বেড়েছে ঢাকা শিশু হাসপাতালেও। প্রতিদিন ৫শর বেশি রোগী জ¦র, সর্দি ও হঠাৎ ঠান্ডা নিয়ে আসছে। এর মধ্যে অনেকের নিউমোনিয়াসহ শ^াসকষ্টও রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির পেড্রিয়াট্রিক রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সারাবান তাহুরা আমাদের সময়কে বলেন, ‘তীব্র গরমের মধ্যেও দোকানপাট ও শপিংমলগুলোতে লোকসমাগম অনেক বেশি। সেখানে অনেকে বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাচ্চাদের বাসায় রেখে যাওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই বছরের প্রায় সব সময় রোগীর ভিড় এ হাসপাতালে লেগেই থাকে। গরমের কারণে সেটি আরও বেড়েছে। এ সময়ে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয় শিশুরা। এ জন্য বাচ্চাদের বেশি বেশি পানি খাওয়ানো ও নিয়মিত গোসল করাতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রায় দিনই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা থাকছে। এতে বয়স্কদের উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে পানিশূন্যতাসহ নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। শিশুদের ব্রঙ্কাইটিস, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। যাদের আগে থেকে হাঁপানি রয়েছে, তাদের শ^াসকষ্ট বাড়ছে। সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছেন রিকশাওয়ালা এবং রাস্তার ধারে কাজ করা শ্রমিকরা। তীব্র গরমে রোদে দীর্ঘক্ষণ কাজ করায় তারা হিট স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন। যারা রোজা থেকে কাজ করছেন তারাও অবসাদ, পানিশূন্যতা ও মাথাব্যথাসহ নানা জটিলতায় পড়ছেন।’

তিনি বলেন, ‘এমন অবস্থা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো একেবারে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া। রোজাদারদের ইফতারের পর পানি, ডাবের পানি, স্যালাইনসহ তরলজাতীয় খাবার অনেক বেশি খেতে হবে। আবার অমুসলিমরা যারা দিনের বেলায় খাচ্ছেন, তাদেরও পরিমাণমতো পানি খেতে হবে। শুধু পানি না খেয়ে ফলফলও খেতে হবে। আর বাইরে গেলে ঢিলেঢালা কাপড়চোপড় পরতে হবে। রাস্তার পাশের শরবত এড়িয়ে চলতে হবে।’-দৈনিক আমাদের সময়

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সর্বাধিক পঠিত

গরমে বাড়ছে জ্বর-সর্দি

প্রকাশিত সময় : ১০:০৯:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩

আজাদুল আদনান:হাসপাতালে রোগীদের ভিড় ।। শিশুদের ঘরের বাইরে না নেওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের ।। বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে চলছে তীব্র দাবদাহ। এতে হিট স্ট্রোকসহ জ¦র, সর্দি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের পানিশূন্যতা থেকে শুরু করে জন্ডিসের মতো জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রাজধানীর মিরপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন ইসমাইল হোসেন (৩৪)। তীব্র গরম উপেক্ষা করে রোজা রেখে অন্যান্য দিনের মতোই কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করেই তীব্র জ¦র ও সর্দি দেখা দেয়। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেলেও খুব একটা উন্নতি না হওয়ায় গতকাল যান শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বহির্বিভাগে।

একই অবস্থা রিকশাচালক আবুল হাসানের। পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ায় এ দিন প্রতিষ্ঠানে জরুরি বিভাগে তাকে নেওয়া হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

তীব্র গরমে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছেন সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। বহির্বিভাগের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে সম্প্রতি চালু হওয়া ওয়ান-স্টপ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালটি (ওসেক) সার্ভিস বিভাগেও রোগীদের ভিড় বাড়ছে।

জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা বলেন, এক সপ্তাহ ধরে গরমে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বেশি আসছে হিট স্ট্রোকের রোগী। ডায়রিয়া, উচ্চ রক্তচাপ এবং মাথাব্যথার রোগীও আসছেন। তবে অধিকাংশই চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. তাজকিরা সুলতানা চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘গরমে যেসব রোগী হাসপাতালে আসছেন, তাদের অধিকাংশই জরুরি বিভাগে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এসব রোগীর বড় অংশই হিট স্ট্রোকের। এমন অবস্থা হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। যারা কায়িক পরিশ্রম করছেন তাদের কষ্টটাই সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। এ জন্য তরলজাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।’

চাপ বেড়েছে ঢাকা শিশু হাসপাতালেও। প্রতিদিন ৫শর বেশি রোগী জ¦র, সর্দি ও হঠাৎ ঠান্ডা নিয়ে আসছে। এর মধ্যে অনেকের নিউমোনিয়াসহ শ^াসকষ্টও রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির পেড্রিয়াট্রিক রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সারাবান তাহুরা আমাদের সময়কে বলেন, ‘তীব্র গরমের মধ্যেও দোকানপাট ও শপিংমলগুলোতে লোকসমাগম অনেক বেশি। সেখানে অনেকে বাচ্চাদের নিয়ে যাচ্ছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাচ্চাদের বাসায় রেখে যাওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই বছরের প্রায় সব সময় রোগীর ভিড় এ হাসপাতালে লেগেই থাকে। গরমের কারণে সেটি আরও বেড়েছে। এ সময়ে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয় শিশুরা। এ জন্য বাচ্চাদের বেশি বেশি পানি খাওয়ানো ও নিয়মিত গোসল করাতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, ‘প্রায় দিনই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি তাপমাত্রা থাকছে। এতে বয়স্কদের উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে পানিশূন্যতাসহ নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। শিশুদের ব্রঙ্কাইটিস, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। যাদের আগে থেকে হাঁপানি রয়েছে, তাদের শ^াসকষ্ট বাড়ছে। সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছেন রিকশাওয়ালা এবং রাস্তার ধারে কাজ করা শ্রমিকরা। তীব্র গরমে রোদে দীর্ঘক্ষণ কাজ করায় তারা হিট স্ট্রোকের শিকার হচ্ছেন। যারা রোজা থেকে কাজ করছেন তারাও অবসাদ, পানিশূন্যতা ও মাথাব্যথাসহ নানা জটিলতায় পড়ছেন।’

তিনি বলেন, ‘এমন অবস্থা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো একেবারে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া। রোজাদারদের ইফতারের পর পানি, ডাবের পানি, স্যালাইনসহ তরলজাতীয় খাবার অনেক বেশি খেতে হবে। আবার অমুসলিমরা যারা দিনের বেলায় খাচ্ছেন, তাদেরও পরিমাণমতো পানি খেতে হবে। শুধু পানি না খেয়ে ফলফলও খেতে হবে। আর বাইরে গেলে ঢিলেঢালা কাপড়চোপড় পরতে হবে। রাস্তার পাশের শরবত এড়িয়ে চলতে হবে।’-দৈনিক আমাদের সময়