আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভিসা পলিসি দেখে বিএনপির রাতের ঘুম হারাম। দিনের আরাম হারাম। তারা ভয় পেয়ে গেছে। মির্জা ফখরুল কথা বলে মুখ লুকিয়ে। মুখ শুকিয়ে গেছে কারণ সেখানে যেগুলো নেগেটিভ সবই তাদের জন্য।
তিনি বলেন, কথায় কথায় আগুন, বাসে আগুন, গাছ কাটে, বিদ্যুতের স্টেশনে আগুন দেয়, ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়, রেললাইন পুড়িয়ে দেয়, হাজার হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারে এই অপরাজনীতি ভিসা নীতির মধ্যে এই বিষয়গুলো পড়ে। আমরা তো তো নির্বাচন করতে চাই। আমরা বাধা দেব কেন। যারা বাধা দেয় তাদের বিরুদ্ধে আপনাদের এই পলিসি কার্যকর হয় কি না আমরা দেখব।
শুক্রবার (২৬ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা তাকিয়ে ছিল নিষেধাজ্ঞা আসবে কবে। শেখ হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞার আশায় আশায় কেউ যায় লন্ডনে, কেউ যায় ওয়াশিংটনে, লবিস্ট নিয়োগ করে। ভিসা নীতি আসছে, নিষেধাজ্ঞা কই? এখানে তো নিষেধাজ্ঞার কিছু নেই।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমাদের নির্বাচন আমরা করবো। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা আমরা তৈরি করবো। আমাদের গণতন্ত্র আমাদের সিস্টেমে চলছে। আমরা কারো ভয়ে ভীত নই। আমরা আমাদের লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত সংবিধান মেনে চলব। কারও হুমকি-ধামকি, কারও নিষেধাজ্ঞায় কাবু হয়ে মাথা নত করার মানুষ শেখ মুজিবের বেটি নয়। একথা যেন সবার মনে থাকে।
গাজীপুরে যেভাবে নির্বাচন হয়েছে, তেমনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন চাই, আমরা বাধা দেব কেন। সেই পরামর্শ তো আমাদের দেয়ার দরকার নেই। নির্বাচনে বাধা দেওয়ার দিন শেষ। যারা নির্বাচন চায় না, তত্ত্বাবধায়ক চায়…খালেদা জিয়া বলেছেন শিশু আর পাগল ছাড়া নিরপেক্ষ নেই।
নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক হবে না। কোনও বিদেশি বন্ধু একবারও আমাদের কাউকে বলেননি যে তত্ত্বাবধায়ক চায়। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত দাওয়াত করেছিল, তার সঙ্গে আলাপকালে জানতে চেয়েছিলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আপনাদের কোনও পরামর্শ আছে কিনা? তখন পিটার হাস (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) আমাকে যেটা বলেছেন যে, ‘উই ডোন্ট কেয়ার অ্যাবাউট কেয়ারটেকার। আমরা চাই- বাংলাদেশের একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহযোগ্য নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন।’
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, অর্থপাচারে দণ্ডিত হয়েছে, বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই দণ্ডিত ব্যক্তি তারেক রহমান কি করে প্রতিদিন অনলাইনে রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য দিচ্ছে। এর কি কোনও প্রতিকার নেই! আইন কি তারা মানবে না! আদালতের আদেশ কেন মানছে না তারেক রহমান? তারা আইন মানে না, আদালত মানে না।
বিএনপির নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দাবির ব্যাপারে তিনি বলেন, নির্বাচনের রেজাল্ট যদি কমিশন বলে দেয় বিএনপি জিতবে তাহলে ভালো। নিরপেক্ষ নির্বাচনের গ্যারিন্ট তখনই তারা যাবে যখন নির্বাচন কমিশন বলবে, বিএনপিই জিতবে। বিএনপিকে জেতার গ্যারিন্ট মানে নিরপেক্ষ নির্বাচন! এই নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরা চাই না। বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায় না, সংসদের বিলুপ্তি চায় না। তারা অবান্তর কথা বলতে বলতে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, গাজীপুরে নির্বাচনে মানুষ সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য। আওয়ামী লীগ জোর করে নিজের প্রার্থীকে জেতাতে যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছেন এবং হয়েছে; যা সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনে একটি বিষয় পরিষ্কার, মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা নির্বাচন নিয়ে যে মিথ্যাচার করেছে যে, এই সরকার অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে না, করবে না সেটা গাজীপুরে প্রমাণ হয়েছে। শেখ হাসিনার ওয়াদা তিনি পূরণ করেছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হারবে কি জিতবে তার চেয়ে বড় কথা এই নির্বাচনে গণতন্ত্র জয়লাভ হয়েছে। আগামীতে চারটি সিটি নির্বাচন তারপর জাতীয় নির্বাচন একইভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরেপক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে দ্য ইকোনিস্টের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সেখানে বলা হয়েছে ক্ষমতায় তিনি দীর্ঘদিন আছেন বলে বাংলাদেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি অনেক বেড়েছে এবং দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আজ সারা দুনিয়া প্রশংসা করে। আর দেশের একটি মহল দিনরাত শেখ হাসিনার দুর্নাম করে বেড়ায়। তাকে হত্যার হুমকি দেয়। এতে বাংলাদেশের মানুষ কষ্ট পায়। এই কথা বলে লক্ষ লক্ষ ভোট আওয়ামী লীগের হয়েছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিলে তোমাদের (বিএনপি) ভোট কমে যাবে। আরো কমে যাবে। তলানিতে গিয়ে ঠেকবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছয়টি জন্মদিন দাবি করে তিনি বলেন, আমি ফখরুলকে জিজ্ঞেসা করি, আপনাদের নেত্রীর জন্ম তারিখ কয়টা? আগে ছিল পাঁচটা। করোনা টেস্টে আরও একটা বেড়েছে। একটা মানুষের ছয়টা জন্মদিবস! যে দলের প্রধানের একাধিক জন্ম তারিখ সেই মিথ্যাবাদী দলের ক্ষমতায় আসার কোনো অধিকার নেই। তারা পনেরো আগস্টে মিথ্যা জন্মদিন পালন করে!
এ সময় আওয়ামী লীগের কেউ খারাপ কাজ করলে তাকে সংশোধিত হয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়ন-অর্জনের দিকে খেয়াল রেখে নিজেকে পরিচালিত করার এ সময় পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহেমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।